নাম বিড়ম্বনায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

কুবি প্রতিনিধি।।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ আর্টস নামের একটি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়কে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। এ সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ তারা গ্রহণ করবে না বলে সংবাদ প্রকাশ করেছে কয়েকটি গণমাধ্যম। তবে এ পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় একমাত্র সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম এসেছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তালিকায় নাম থাকা বিশ্ববিদ্যালয়টি নিজেরদের নয় দাবি করলেও বিভিন্ন সময়ে নাম নিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
যুক্তরাজ্যের ওই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক কালো তালিকাভুক্ত বাংলাদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো: দ্যা রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা, দ্যা ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা, অতীশ দীপঙ্কর সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও কুমিল্লা ইউনিভার্সিটি। ইংরেজি ভাষায় লিখিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নামে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ‘ঈঁসরষষধ টহরাবৎংরঃু’ লেখা হয়েছে। এ নামে দেশে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের খোঁজ পাওয়া যায়নি। বস্তুত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের ইংরেজি বানান ‘ঈড়সরষষধ টহরাবৎংরঃু’।
তালিকায় দ্যা ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা নামেও আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। ইউজিসিরও কালো তালিকাভুক্ত এ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টির অবস্থান ঢাকার উত্তরায় ছিল। সম্প্রতি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকানায় গিয়ে ইউজিসি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় দেখতে পায়নি বলে এক বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।
তবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড এ এফ এম আবদুল মঈন বলছেন তালিকার কোনটিই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়’ নয়। তিনি বলেন, তালিকার দুটি নামের কোনটির বানানই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের বানানের সাথে মিল নেই। এ বিষয়ে কারও দুশ্চিন্তা করার দরকার নেই।
বিষয়টি স্পষ্ট হতে ইউসিএ’র সাথেও যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য।
তবে শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে আরও স্পষ্টতা চাচ্ছেন। মঈন উদ্দিন রুমান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ইউসিএ’র তালিকায় আমাদের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় না থাকলে কর্তৃপক্ষের উচিৎ বিষয়টি যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ দিয়ে স্পষ্ট করা।
আনোয়ার হোসেন নামে নৃবিজ্ঞান বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুরা এ বিষয়ে (কালো তালিকাভুক্তি) জিজ্ঞেস করছে। তাদেরকে কী উত্তর দেব জানা নেই।
এছাড়া দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা’র বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নিতেও আহ্বান জানিয়েছেন অনেক শিক্ষার্থী।
এর আগে গেল বছরের মাঝামাঝিতে কানাডা ভিত্তিক একটি ওয়েবসাইট ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডেনশিয়াল ইভালুয়েশন সার্ভিস (আইসিইএস) বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদধারীরা কানাডায় উচ্চশিক্ষার জন্য মূল্যায়নের যোগ্যতা হারিয়েছে উল্লেখ করে একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। সেখানেও একমাত্র সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম এসেছে। তবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউজিসি সংশ্লিষ্টরা বলছেন এটি ‘দ্য ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা’ নামক রাজধানীর অননুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। সেসময় ইউজিসি সদস্য ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক দিল আফরোজ বেগম একটি অনলাইন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রকাশিত তালিকায় কুমিল্লা ইউনিভার্সিটি নামে যে বিশ্ববিদ্যালয়টি এসেছে তা মূলত ঢাকার উত্তরার ইউনিভার্সিটি অফ কুমিল্লা, যেটি ইউজিসির কালো তালিকাভুক্ত একটি বেসকারি বিশ্ববিদ্যালয়। তাই এ বিষয়ে পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থীর উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।’

 

দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা’র বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, আমিরা ইতোমধ্যে ইউজিসির সাথে বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করেছি। আমরা শিগগিরই ইউজিসিকে লিখিতভাবে জানাবো। এছাড়া আমরা সকল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করছি।