পবিত্র শবে মিরাজের ফযিলত

আজ ( ২৮ ফেব্রুয়ারি) সোমবার  পবিত্র শবে মিরাজ। মহিমান্বিত এই রাতে প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  সশরীরে জাগ্রত অবস্থায় আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করে ধন্য হন।
হযরত জিবরাইল (আ.) ও হযরত মিকাইল (আ.) এর সঙ্গে বিশেষ বাহন বোরাকের মাধ্যমে কাবা শরিফ থেকে মসজিদে আকসা হয়ে প্রথম আসমানে পৌঁছান। তারপর সপ্তম আকাশ এবং সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত এবং সেখান থেকে একাকী রফরফ বাহনে খোদার আরশে যান।
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি যিনি তাঁর বান্দাকে রাতের বেলা মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত যে জায়গার আশপাশে তিনি বরকত দান করেছেন-ভ্রমণ করালেন, যাতে তিনি তাকে তাঁর নিদর্শনগুলো দেখাতে পারেন, নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা’। (সূরা বনি ইসরাইল : ১)
আল্লাহপাক তাঁর হাবিব  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বিশেষ অভ্যর্থনায় মিরাজে নিয়ে যে সম্মাননা দিয়েছেন তার বর্ণনা কালামে পাকে বিবৃত হয়েছে এভাবে : ‘তখন তিনি ঊর্ধ্ব জগতে। তারপর তিনি তাঁর কাছাকাছি হলেন, আরও অনেক কাছে। তখন তাদের মধ্যে দুই ধনুক পরিমাণ বা এর চেয়েও কম পরিমাণ ব্যবধান ছিল। তখন আল্লাহপাক তাঁর প্রতি যা প্রত্যাদেশ করার করলেন।
তিনি যা দেখেছেন তা বিশ্বাস করতে অস্বীকার করেননি। তিনি যা দেখেছেন, তোমরা কি তাঁর সঙ্গে এ বিষয়ে তর্ক করবে? নিশ্চয়ই তিনি তাঁকে আরেকবার দেখেছিলেন। প্রান্তবর্তী সিদরা গাছের কাছে। যার কাছে জান্নাতুল মাওয়া অবস্থিত। যখন গাছটি আচ্ছাদিত ছিল যা দিয়ে তা আচ্ছাদিত হওয়ার ছিল। তাঁর দৃষ্টিবিভ্রম হয়নি, তাঁর দৃষ্টি লক্ষ্যবিচ্যুত হয়নি। তিনি তাঁর রবের মহান নিদর্শনাবলি দেখেছেন। (সূরা আন নাজম)
বিভিন্ন বর্ণনা মতে,  মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  নবুয়াত লাভের একাদশ বর্ষে ২৬ রজব দিবাগত রাতে চান্দ্র মাস বিবেচনায় ২৭ রজব মিরাজ সংঘটিত হয়েছিল। আরবি ভাষায় মিরাজ অর্থ হচ্ছে সিঁড়ি। আর ফারসি ভাষায় এর অর্থ ঊর্ধ্ব জগতে আরোহণ। পবিত্র কোরআনে আরবের মক্কা নগরী থেকে ফিলিস্তিনের বায়তুল মুকাদ্দাস (মসজিদে আকসা) পর্যন্ত ভ্রমণকে  ‘ইসরা’ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। হাদিসে বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত উপনীত হওয়া ও আরশে আজিমে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের মহিমান্বিত ঘটনাকে মিরাজ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
একই সময়ে মিরাজে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  সৃষ্টিজগতের সব কিছুর রহস্য অবলোকন করেন। মিরাজ থেকে আল্লাহর রাসূল উম্মতে মোহাম্মদির জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ উপহার নিয়ে ফিরে আসেন।
ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে পবিত্র এ রাতটি পালন করে থাকেন। কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার, নফল নামাজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, খানকা ও বাড়িতে মিলাদ এবং গুনাহ মাফের জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করে থাকেন।
পবিত্র শবে মিরাজ উপলক্ষ্যে প্রতি বছরের মতো এবারও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের উল্লেখযোগ্য প্রতিটি মসজিদে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ‘লাইলাতুল মিরাজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শীর্ষক আলোচনা সভা, ওয়াজ, মিলাদ -মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে কুমিল্লায় বিভিন্ন সংগঠন- সংস্থা বিশেষ করে নগরীর  দারোগা বাড়ী হযরত শাহ আবদুল্লাহ গাজীপুরি মাজার মসজিদ, শাহপুর দরবার শরীফ,হযরত আইনউদ্দিন শাহ মাজার মসজিদ, কান্দিরপাড় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ও গাউছিয়া ইসলামিক মিশন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহন করেছে।
লেখক- গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির, ধর্ম ও সমাজ সচেতন লেখক, সাংবাদিক