পান চাষে কুমিল্লার দেড় হাজার পরিবার
মহিউদ্দিন মোল্লা।।
হারং। কুমিল্লার চান্দিনা পৌর এলাকার একটি গ্রাম। এই গ্রামের ৩০পরিবার পান চাষের সাথে জড়িত। একই উপজেলার মহিচাইল ও কংগাই গ্রামের দুই শত পরিবার জড়িত। এরকম কুমিল্লার ৬টি উপজেলার দেড় হাজারের বেশি পরিবার পান চাষের সাথে জড়িত। ওই সব পরিবারের পান চাষের ঐতিহ্য শত বছরের বেশি। পান চাষে তাদের পরিবারে এসেছে সমৃদ্ধি।
কৃষি অফিসের সূত্রমতে, জেলার ১১৬ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ হয়েছে। কুমিল্লার চান্দিনা, দেবিদ্বার, বরুড়া,বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া ও মুরাদনগর উপজেলায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পান চাষ হচ্ছে। পানের বেশি চাষ হয় চান্দিনার হারং,চিলোড়া,এওয়াজবন,এতবারপুর,মাইজখার,কংগাই,কংগাই মোহনপুর,কাদুটি,আলীকামুড়া ও মহিচাইলে। এছাড়া পাশের দেবিদ্বার উপজেলার বরকামতা,গুনাইঘর,বেগমাবাদ,ললিতাসার,বিহারম-ল ও মোহনপুরে।
সরেজমিন হারং গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির পাশে সবুজ পানের বরজ ¯িœগ্ধতা ছড়াচ্ছে। বরজে ভোর থেকেই তাদেও ব্যস্ততার শুরু। কেউ পান গাছ কাঠির সাথে খড় দিয়ে বাঁধছেন। কেউ পান তুলছেন। কেউ তোলা পান বাছাই করছেন। পান তোলার সময় বটু ভাঙ্গার টুক টুক শব্দ হচ্ছে। তোলার সময় পান ছিঁড়ে গেলে তার মিষ্টি ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসে।
হারং গ্রামের চাষি নিমাই চন্দ্র দত্ত বলেন, শত বছর ধরে তার পরিবার পানের চাষ করেন। তিনি দুই একর জমিতে পানের চাষ করেছেন। একটি পান গাছ থেকে তিনি ৩০বছরও ফসল পেয়েছেন। এই এলাকায় মহালনি পান চাষ বেশি হয়, অল্প পরিমাণে চাষ হয় গয়াসুর পান। বড় পান ২৩০ টাকায় বিড়া(৯৬টি) পাইকারি বিক্রি করেছেন। মাঝারি পানের বিড়া ১২০টাকা। ছোট গুলোর বিড়া ৫০টাকা বিক্রি করেছেন।
তিনি বলেন,পান চাষে তাদের পরিবারে সমৃদ্ধি এসেছে। বাঁশ,খড়,সার,বীজের দাম বেড়ে গেছে। তাই এখন লাভ কম হচ্ছে।
চান্দিনা উপজেলার চিলোড়া গ্রামের পান চাষি বিধু ভূষণ পাল বলেন, তার বাপদাদারা পান চাষ করতেন। তিনিও ৪৫বছর ধরে পান চাষ করেন। পান চাষের সুবিধা হচ্ছে সারা বছর ফসল পাওয়া যায়। বর্ষাকালে বেশি পান উৎপাদন হয়। প্রতিদিন সকালে নগদ টাকায় পান বিক্রি করা যায়।
চান্দিনা বাজারের পানের ছোট ক্রেতা গোপাল দত্ত বলেন, বারুই সম্প্রদায়ের মানুষ বেশি পান চাষ করেন। এই অঞ্চলের বড় পান বাজার চান্দিনা। তিনি পান কিনে নিয়ে পাশের রামমোহন বাজারে খুচরা ও পাইকারি বিক্রি করেন।
বাজারের পাইকারি ক্রেতা লিটন চন্দ্র পাল বলেন, জেলায় প্রতিদিন ১০হাজার বিড়া পানের চাহিদা রয়েছে। উৎপাদন হচ্ছে ৬হাজার বিড়া। পানের চাষ বাড়াতে কৃষি বিভাগ আরো বেশি উদ্যোগ নিতে পারে।
চান্দিনা পৌরসভা ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা গোলাম সারোয়ার বলেন, চান্দিনার অনেক গ্রামের চাষিরা পান চাষ করেন। পান বিক্রিতে তাদের পরিবারে সচ্ছলতা এসেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক আইউব মাহমুদ বলেন, আমাদের মাঠ কর্মকর্তারা কৃষকদের পরামর্শসহ বিভিন্ন কারিগরি সহযোগিতা দিয়ে থাকেন। পানের চাষ ও উৎপাদন বাড়াতে আমরা আরো বেশি নজর দিবো।