পুতুলের বদলে মোবাইল ফোন তৈরি করছেন সুরাইয়ারা

কুমিল্লার গ্রামের নারীদের হাতে তৈরি হচ্ছে মোবাইল ফোন

মহিউদ্দিন মোল্লা।।
পিয়ারাতলী। কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার একটি প্রত্যন্ত গ্রাম। গ্রামের সড়কের অবস্থা নাজুক। তবে ওই গ্রাম ও আশপাশের গ্রামের নারীদের জীবনযাত্রার মান বেশ উন্নত। কারণ এখানে স্থানীয় উদ্যোগে ধানের জমির পাশে গড়ে উঠেছে মোবাইল ফোন তৈরির কারখানা। এই হালিমা টেলিকম কারখানার ৯০ভাগ নারী শ্রমিক। তাদের কারো বাড়ি পিয়ারাতলী,কারো মাঝিগাছা,ছত্রখিল কিংবা চাঁনপুরে। এর উদ্যোক্তা স্থানীয় তরুণ আবুল কালাম হাসান টগর।
পিয়ারাতলী গ্রামে গিয়ে জানা যায়, এখানের নারী শ্রমিকদের অধিকাংশ প্রাইমারির গণ্ডি পার হয়েছেন। কেউবা নামটা লিখতে পারেন। সেই নারী এখন মোবাইল ফোনের ডেট লেভেল,এলসিডি, এলসিডি লেন্স,কী প্যাড,আপ হাউজিং,ব্যাক হাউজিং,স্পিকার নেট চিনেন। কাপড়ের পতুল বানানো তরুণী এখন মোবাইল ফোন তৈরি করছেন।


কারখানায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, গ্রামে দিগন্তজোড়া সবুজ ফসলের মাঠ। সবুজ মাঠের পাশে ধূসর রঙের ভবন মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। তার ভেতরে চলছে উৎপাদনের রঙিন কর্মযজ্ঞ। গ্রামীণ নারীরা পরিপাটি অফিস ড্রেস পরে কাজ করছেন। তদারকি করছেন উদ্যোক্তা আবুল কালাম হাসান টগরসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।
পিয়ারাতলী গ্রামের সুরাইয়া বেগম বলেন,দেখে বাংলা পড়তে পারি। পরিবারের আয় কম। ঘরের পাশের কারখানায় এসে কাজ শিখেছি। এখন নিজে মোবাইল ফোন বানাতে পারি, এটা এখন অনেকটা পুতুল বানানোর মতো সহজ। ভালো বেতন পাই। সন্তানদের পড়ালেখা করাতে পারছি।
বৃষ্টি আক্তার ও ঝর্না বেগম নামের আরো দুই কর্মী বলেন,ঘরের পাশে কারখানা হওয়ায় যাতায়াতের ভোগান্তি নেই,খরচ নেই। পায়ে হেঁটে আসি। দুপুরের খাবারও বাড়িতে গিয়ে খাই।
প্রোডাকশন ম্যানেজার মিজানুর রহমান বলেন,আমাদের কর্মীরা গ্রামের বলে পিছিয়ে নেই। তাদের উৎপাদিত পণ্য আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন। আমরা দেশে তৈরি যেকোন পণ্যের সাথে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নিজেদের বাজার সৃষ্টি করেছি।


কারখানার পাশের বাসিন্দা চা দোকানি বিল্লাল হোসেন টিটু বলেন, কারখানা হওয়ায় আমি দোকান দিতে পেরেছি। আমাদের গ্রামের মা-বোনদের কাজের সুযোগ হয়েছে।
উদ্যোক্তা আবুল কালাম হাসান টগর বলেন, কুমিল্লার চাঁন্দপুর গ্রামে মোবাইল ফোন অ্যাকসেসরিজের ব্যবসা দিয়ে শুরু করেছি। সেখানের নারী কর্মীরা অল্প লেখাপড়া জানা, তাদের এনে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তাদের হাতে তৈরি মোবাইল ফোন অ্যাকসেসরিজের ব্যবসায় আমরা নেতৃত্বে রয়েছি। এখন সেই নারীরাই পিয়ারাতলী গ্রামের কারখানায় মোবাইল ফোন তৈরি করছেন। সামনে নারীরা ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য ও এন্ড্রয়েড ফোন তৈরি করবেন। কুমিল্লার গ্রামের নারীদের তৈরি পণ্য ইউরোপ,আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে।
সচেতন নাগরিক কমিটি কুমিল্লার সাবেক সভাপতি বদরুল হুদা জেনু বলেন, কুমিল্লার গ্রামে নারীরা মোবাইল ফোন তৈরি করছেন, এটা ব্যতিক্রম বিষয়। কারখানার প্রতিষ্ঠাতা তরুণ টগর কুমিল্লার পরিচিত মুখ। আমার বিশ^াস উদ্যোমী উদ্যোক্তার হাত ধরে নারীরা অনেক দূর যাবে।
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক খন্দকার মু.মুশফিকুর রহমান বলেন, কুমিল্লার গ্রামে নারীদের প্রশিক্ষত করে মোবাইল ফোন তৈরিতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। আমরা এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করবো।