।। কাজী ফখরুল আলম ।।
১৬ জুলাই মঙ্গলবার এনটিভিতে সরাসরি সম্প্রচারিত আবু সাঈদের গুলিতে লুটিয়ে পড়ার দৃশ্য ও চট্টগ্রামে ছাত্রদল নেতা ওয়াসিমসহ তিনজনের লাশের ছবি দেখে প্রতিবাদে অংশ নিতে সায়েন্সল্যাব মোড়ে ছাত্রদের সাথে যোগ দিলাম।
নিউমার্কেটের সামনে অস্ত্রধারী আওয়ামী ক্যাডারের দল। তুমুল সংঘর্ষে উভয় পক্ষের তিনজন মারা গেলো সেদিন।
১৭ জুলাই বুধবার আশুরার বন্ধ, পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত।
সারাদেশে গায়েবানা জানাযা এবং কফিন মিছিল। রাতে টিভিতে শেখ হাসিনার ভাষণের পর পরিস্থিতি আবারো উত্তপ্ত।
[caption id="attachment_41785" align="alignleft" width="283"] কাজী ফখরুল আলম[/caption]
১৮ জুলাই চারিদিকে তুমুল সংঘর্ষের খবর পাচ্ছি, আর সহ্য হচ্ছেনা তাই দুপুরের পর পকেটে ১০০ টাকার একটা বান্ডেল নিয়ে রাজপথে যুদ্ধে নামার নিয়ত করে মতিঝিল থেকে সাইন্সল্যাবের উদ্দ্যেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম। সেখানে গিয়ে দেখি আজ আগে ভাগেই পুলিশ এবং ছাত্রলীগ- যুবলীগ ক্যাডাররা পুরো এলাকা দখলে নিয়ে গেছে, উল্টোদিকে মীরপুর রোডে ছাত্রদের অবস্থান। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে পুলিশ ১৭/১৮ বৎসরের এক ছাত্রকে ধরে এনে পেটাতে পেটাতে তুলে দিলো যুবলীগ ক্যাডারদের হাতে, সাথে সাথে নির্মমভাবে কুপিয়ে রক্তাক্ত করা হলো তাকে ! কষ্টে আমার ভীষণ কান্না এলো, সহ্য করতে পারছিনাৃ. ছেলেটা বাঁচবে কিনা জানিনা..! একটু দূরে গিয়ে ধানমন্ডি ১ নং রোডের কোনা থেকে ভিডিও ধারণের চেষ্টা করতেই কয়েকজন পথচারী আমাকে সাবধান করলো, “ ভাই, একি করছেন ? তারা দেখলে তো আপনাকে কুপিয়ে মারবে !”
তাদের পরামর্শ শুনে ভেতর দিয়ে ঘুরে ধানমন্ডি ৪ নং রোডের মাথায় এসে ছাত্রদের সাথে অবস্থান নিলাম।
শত শত ছাত্র- ছাত্রী, অধিকাংশই ইন্টারমিডিয়েটের হবে। বয়স ১৭/১৮ এর বেশী না। প্রায় সবার গলায় আইডি কার্ড ঝুলানো। সিটি কলেজ, আইডিয়েল কলেজ এবং ঢাকা কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের সম্মিলিত অবস্থান। তাদের সাথে যোগ দিয়ে ঐ মুহূর্তে তাদের চাহিদানুযায়ী পানি, শুকনো খাবার, লাইটার ও মোমবাতি কিনে দিলাম।
কিছুক্ষণ পর পর ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, টিয়ার গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড এবং গুলি চলছে, আহতদের হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে, ভয়াবহ এক অবস্থা।
চিকন- চাকন বাচ্চা মেয়েগুলোর হাতে রোড ডিভাইডারের গ্রিল ভাংগা চারকোনা লাঠি, দেখলে মনে হয় মেয়েগুলোর নিজের ওজনের চেয়ে লাঠির ওজন বেশি।
কিন্তু তাদের চোখে মুখে ক্রোধের আগুন। তাদের গগনবিদারী শ্লোগান যেনো বজ্র হুংকার!
এর মধ্যে শেখ হাসিনা- শেখ মুজিবসহ তাদের চৌদ্দগোষ্ঠীকে নিয়ে এমন আক্রমণাত্মক শ্লোগান, আমি অবাক !!!! তাহলে গত ১৬ বৎসর সরকার প্রতিটি শ্রেণীতে পাঠ্যপুস্তকে শেখ মুজিবকে যে মহামানব হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছে তার একভাগও কাজে লাগেনি ?
তাদের অনেকের সাথে কথা বলে আমার বার বার চোখ ভিজে গেছে , সবার একই কথা আংকেল এখানেই আমাদের রক্ত ঝরবে, মৃত্যু হবে কিন্তু আমরা দাবি আদায় না করে ঘরে ফিরে যাবোনা, আমরা দেশটাকে সংস্কার করতে চাই।
বিস্ময়ে হতবাক আমি !
আমরা যাদের ভাবতাম ফার্মের মুরগির মতো বেঁচে থাকা প্রজন্ম, তাদের কি ভয়ংকর প্রতিজ্ঞা ! কিভাবে তারা এতো মরণপণ যোদ্ধায় পরিণত হলো ?
তাদের অধিকাংশই বাবা- মায়ের দুই সন্তানের একজন অথবা একমাত্র সন্তান। তারা মারা গেলে বাবা-মায়ের কতো কষ্ট হবে ! কাদের নিয়ে কিসের আশায় কিভাবে বাবা- মা এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে সে কথাটা একটিবারের জন্যও চিন্তা করছেনা তারা ?
সেদিন থেকেই আমি নিশ্চিত এ সরকার আর কিছুতেই টিকে থাকতে পারবেনা, হাসিনার পতন এখন শুধু সময়ের ব্যাপার।
লেখক: সমাজকর্মী ও সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা।
মোবাইল: ০১৭১৭-৯১০৭৭৭
ইমেইল: newsamod@gmailcom
www.amodbd.com