প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ২৩, ২০২৪, ১০:১০ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ ডিসেম্বর ৩০, ২০২২, ১১:৫৮ পূর্বাহ্ণ
বছর শেষে মুমিনের ভাবনা
গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির।।
বর্ষবরণের নামে যে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, হৈ-হুল্লোড় ও নগ্নতার প্রদর্শন চলে, তা কি একজন নিম্নস্তরের মুমিনের জন্যও শোভা পায়? বছরের সূচনালগ্নে যখন একজন মুমিন উপস্থিত হয়, তখন তার অনুভূতি এ ধরনের হওয়া দরকার—যে দিনগুলো আমার শেষ হয়ে গেল, তা তো আমার জীবনেরই একটি মূল্যবান অংশ। একটি বছর শেষ হওয়ার সরল অর্থ, আমার জীবন (দালান) থেকে ৩৬৫ দিনের ৩৬৫টি পাথর যেন খসে পড়ল। আমার জীবন সংকীর্ণ হয়ে এলো। এটা আনন্দের নয়, চিন্তার ব্যাপার। এখন আনন্দ-উল্লাসের সময় নয়, বরং সময় হলো হিসাব-নিকাশের। কাজেই একটি বছরের উপসংহারে দাঁড়িয়ে মুমিনের মানসপটে প্রশ্ন উত্থাপিত হয় যে একটি বছর তো আমি শেষ করেছি, কিন্তু যে মহান উদ্দেশ্যে (তাঁর ইবাদত-বন্দেগির জন্য) মহান আল্লাহ আমাকে এই বসুন্ধরায় পাঠালেন, সে পথে কতটুকু অগ্রসর হয়েছি? সে পথে আমার প্রাপ্তি কতটুকু? ইসলামী জাহানের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রা.) একবার মিম্বরে দাঁড়িয়ে তাঁর খুতবায় এক ঐতিহাসিক উক্তি উপস্থাপন করেছিলেন, যা ইমাম তিরমিজি (রহ.) (২০৯-২৭৯ হি.) স্বীয় গ্রন্থ তিরমিজি শরিফ এবং ইমাম ইবনে আবি শায়বা (রহ.) (মৃ. ২৩৫ হি.) স্বীয় গ্রন্থ মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বায় উল্লেখ করেন। হজরত ওমর (রা.) বলেছিলেন, ‘হিসাব চাওয়ার আগে নিজের হিসাব করে নাও, তোমার কাজ পরিমাপ করার আগে নিজেই নিজের কাজের পরিমাপ করে নাও।’ (জামে তিরমিজি, ৪/৬৩৮)।
আমরা অনেকে উপলব্ধি না করলেও উৎসব সাধারণত একটি জাতির ধর্মীয় মূল্যবোধের সঙ্গে সম্পৃক্ত। উৎসব উপলক্ষগুলো খোঁজ করলে পাওয়া যাবে, উৎসব পালনকারী জাতির ধমনিতে প্রবাহিত ধর্মীয় অনুভূতি, সংস্কার ও ধ্যান-ধারণার ছোঁয়া। যেমন—খ্রিস্টানদের বড়দিন তাদের বিশ্বাস মতে স্রষ্টার পুত্রের জন্মদিন। ইহুদিদের নববর্ষ ‘রোজ হাশানাহ’ ওল্ড টেস্টামেন্টে বর্ণিত ইহুদিদের ধর্মীয় পবিত্র দিন ‘সাবাত’ হিসেবে পালিত হয়। এমনিভাবে প্রায় সব জাতির উৎসব উপলক্ষের মাঝেই ধর্মীয় চিন্তাধারা খুঁজে পাওয়া যাবে। আর এ জন্যই প্রিয় নবী (সা.) দ্ব্যর্থহীনভাবে মুসলিম জাতির উৎসব নির্ধারণ করে দিয়েছেন। ফলে অন্যদের উৎসব এ জাতির সংস্কৃতিতে অনুপ্রবেশের কোনো সুযোগ নেই। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘প্রত্যেক জাতির নিজস্ব ঈদ (উৎসব) রয়েছে, আর এটা (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা) আমাদের মুসলিম জাতির ঈদ।’ (বুখারি ও মুসলিম শরিফ)
এ হাদিস থেকে মুসলিম ও অমুসলিম জাতির উৎসবের মৌলিক একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য প্রতিভাত হয়। অমুসলিম সম্প্রদায়ের উৎসবের দিনগুলো হচ্ছে তাদের জন্য উচ্ছৃঙ্খল আচরণের দিন। এ দিনে তারা নৈতিকতার সব বাঁধ ভেঙে দিয়ে অশ্লীল কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়, আর এই কর্মকাণ্ডের অবধারিত রূপ হচ্ছে মদ্যপান ও ব্যভিচার। অপর দিকে মুসলিম জাতির উৎসব হচ্ছে ইবাদতের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। বিষয়টি আমাদের গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। ইসলাম কেবল কিছু আচার-অনুষ্ঠান ও আনুষ্ঠানিকতার নাম নয়, বরং তা মানুষের পুরো জীবনকে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নির্দেশ অনুযায়ী বিন্যস্ত ও সজ্জিত করতে উদ্যোগী হয়। সে জন্য মুসলিম জাতির আনন্দ-উৎসব আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ ও অশ্লীলতায় নিহিত নয়, বরং আল্লাহর নির্দেশ পালন ও নিষেধ থেকে বিরত থাকার মধ্যেই নিহিত। তাই তাদের প্রতিটি কাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জড়িয়ে থাকবে তাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ, তাদের ইমান, আখিরাতের প্রতি তাদের অবিচল বিশ্বাস, আল্লাহর প্রতি ভয় এবং ভালোবাসা। ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে ইংরেজি নববর্ষে শিরকপূর্ণ অনুষ্ঠানাদি, চিন্তাধারা ও সংগীত অর্থাৎ নগ্নতা, অশ্লীলতা, ব্যভিচারপূর্ণ অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ। প্রতিটি মুসলিমের দায়িত্ব নিজে এগুলো থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকা এবং মুসলিম সমাজ থেকে এই ইমানবিধ্বংসী প্রথা উচ্ছেদে নিজ নিজ সাধ্য ও অবস্থান অনুযায়ী সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো এবং আমাদের করণীয় - নিজস্ব প্রভাব ও দাপট রয়েছে, তাদের কর্তব্য হবে অধীনস্থদের এ কাজ থেকে বিরত রাখা।
লেখক- গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির।
ধর্ম ও সমাজ সচেতন লেখক, সাংবাদিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান উপস্থাপক।
মোবাইল: ০১৭১৭-৯১০৭৭৭
ইমেইল: newsamod@gmailcom
www.amodbd.com