মনোয়ার হোসেন রতন।।
বাংলাদেশ—এই নাম একদিন ছিল রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বপ্নের প্রতীক। স্বাধীনতার অর্ধশতক পেরিয়ে এসে আজকের বাংলাদেশ কি সেই ‘সোনার বাংলা’? না, বরং যেন এক লুটেরাদের স্বর্গরাজ্য, যেখানে রাষ্ট্রীয় সম্পদ কেন্দ্রীভূত হয়েছে কিছু ক্ষমতাধরের বিলাসী জীবনে। সম্প্রতি সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধেই উন্মোচিত হয়েছে এমনই চমকপ্রদ তথ্য।
বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, তার মালিকানাধীন ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয়েছে:
এ সংখ্যাগুলো শুধু চমকপ্রদ নয়, বরং রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠনের নগ্ন দলিল।
একজন সরকারি কর্মকর্তা যিনি জনগণের করের টাকায় বেতন পান, তার এত সম্পদ কীভাবে সম্ভব? এর পেছনে আছে “ক্ষমতা” নামক এক জাদুর কাঠি, যা দিয়ে আইনের ফাঁক গলে জমা হয় অগণিত সম্পদ। দুর্নীতির বিরুদ্ধে “জিরো টলারেন্স” বলে যারা ক্ষমতায় এসেছিলেন, তারাই দুর্নীতির ফ্যাক্টরি খুলে বসেছেন।
এটি কেবল বেনজীরের কাহিনী নয়, বরং একটি প্রজন্মের শোকগাথা। তার মতো অসংখ্য আমলা, মন্ত্রী, নেতা আজ প্রাসাদে থাকেন, প্রাইভেট জেটে ঘুরেন, সন্তানদের বিদেশে পড়ান, আর জনগণ কাঁদে হা-পিত্যেশে। “দুদক” নামক প্রতিষ্ঠানটি কেবল দুর্বল ও বিরোধীদের বিরুদ্ধেই সক্রিয়, ক্ষমতাসীনদের ছায়ার নিচে সব প্রশ্ন অনুত্তরিত রয়ে যায়।
ফ্রান্সের রাজা লুই ষোড়শ ও রানি মেরী আন্তোনিয়েতের বিলাসবহুল জীবনের ফল কী হয়েছিল ইতিহাস বলে দেয়। জনগণের ধৈর্যের বাঁধ একদিন ভেঙে যায়। রোমান সাম্রাজ্য হোক বা আফ্রিকার কিছু রাষ্ট্র—ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণই তাদের পতনের কারণ।
আজকের বাংলাদেশেও সেই পূর্বাভাস স্পষ্ট। বেনজীররা রাজা নয়, কিন্তু তাদের জীবনধারা রাজতন্ত্রের চাইতেও অভিজাত।
বাংলাদেশের প্রকৃত চিত্র—
এই বৈষম্য একটি রাষ্ট্রের শরীর নয়, আত্মাকেই ধ্বংস করে।
ক্ষমতায় থাকাকালে এরা কবিতা পড়েন পতাকার জন্য, অশ্রু ফেলেন জনগণের জন্য। আর ক্ষমতা চলে গেলে বিলাসিতার রাজধানীতে হারিয়ে যান। সত্য বলার সাহস হারিয়েছে বুদ্ধিজীবী, কবি, সাংবাদিকদের একটা অংশও—তারা সত্যের নাটক মঞ্চস্থ করেন, দর্শকদের ভুলে রাখেন বাস্তবতা।
১. দুর্নীতিবিরোধী কঠোর ব্যবস্থা: শক্তিশালী কমিশন গঠন করে আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়—এই বার্তা দিতে হবে।
২. জনগণকে জানাতে হবে: কে কীভাবে সম্পদ অর্জন করেছে, তার তথ্য জানার অধিকার জনগণের।
৩. আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ: বড় দুর্নীতিবাজদের শনাক্ত করে ফিরিয়ে আনার আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা দরকার।
৪. নৈতিক প্রশাসনিক কাঠামো: স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও নৈতিকতা নির্ভর প্রশাসন গড়ে তুলতে হবে।
যদি এদেশের প্রতিটি মানুষ বেনজীর হতো, তাহলে কেউ বস্তিতে থাকত না, কেউ ক্ষুধায় কাঁদত না। কিন্তু বাস্তবতা উল্টো—যারা বেনজীর নয়, তারাই যেন আজ বড় অপরাধী, কারণ তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে নীরব।
তাই নতুন করে উচ্চারণ করি—
“আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি”—এই গান যেন শুধুই আবেগ না থেকে যায়, বরং হয়ে উঠুক পরিবর্তনের শপথ
মোবাইল: ০১৭১৭-৯১০৭৭৭
ইমেইল: newsamod@gmailcom
www.amodbd.com