প্রতিনিধি।।
৭ বছর আগে শেষবার দেশে এসেছিলেন মো. গিয়াস উদ্দিন। কথা দিয়েছিলেন ওমরাহ শেষে বাড়ি ফিরবেন। পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদ করবেন। কথা অনুযায়ী সকল প্রস্তুতিও সম্পন্ন করে রেখেছিলেন, আগামী রোববার তার দেশে ফেরার কথা। কিন্তু তার আগেই সব শেষ হয়ে গেছে সড়ক দুর্ঘটনায়। ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে স্থানীয় সময় সোমবার বিকেলে মক্কায় যাওয়ার পথে সৌদি আরবের আসির অঞ্চলের আবহা জেলায় ৪৭ যাত্রী নিয়ে একটি বাস দুর্ঘটনার শিকার হয়। ওই দুর্ঘটনায় ২৪ সহযাত্রীর সাথে মৃত্যুবরণ করেছেন গিয়াসও।
নিহত মো. গিয়াস উদ্দিন দেবিদ্বার উপজেলার রাজামেহার গ্রামের মীর বাড়ির আবদুল হামিদ মীরের ছেলে। ২০০১ সালে সংসারের স্বচ্ছলতার জন্য সৌদি আরব গিয়েছিলেন। তিনি ১ ছেলে, ২ মেয়ের জনক। বড় ছেলে মো. আবদুর রহমান মীর (১৬) স্থানীয় রাজামেহার উচ্চ বিদ্যালয়ে ১০ম শ্রেণীতে এবং মেয়ে সাদিয়া আক্তার মীর (১৪) ৮ম শ্রেণীতে পড়ে। ছোট মেয়ে আমেনা (৭)। আমেনা মায়ের পেটে থাকতেই বাবা প্রবাসে। তার বাবাকে কাছ থেকে দেখেনি।
বুধবার রাজামেহার গ্রামে মীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্বজনরা মাতম করছেন। নিহত গিয়াস উদ্দিনে স্ত্রী রাবিয়া বেগম(৩৬) আহাজারি করে বলছেন- আমার স্বামীর মরদেহ দেখতে চাই। আমার স্বামী এবার দেশে এসে সবাইকে নিয়ে ঈদ করবে বলেছিল। সে আশার আর পূরণ হলনা। ২১ বছর প্রবাস জীবনে কিছুই করতে পারেনি। সর্বশেষ ৭ বছর আগে প্রবাসে যায়। এক টাকা ব্যাংক ব্যালেন্সও রেখে যায়নি। ভিসা সমস্যার কারণে দীর্ঘদিন পলাতক থেকে কাজ করতে হয়েছে। ৩/৪ দিন হয় আকামা পেয়েছে, আকামা পেয়েই ওমরাহ হজ¦ পালন করতে যায়। ওমরাহ শেষে দেশে ফিরে সবাইকে নিয়ে ঈদ করার কথা ছিল।
নিহত গিয়াস উদ্দিনের পিতা আব্দুল হামিদ মীর পুত্র শোকে একটু পর পর মুর্ছা যান। তিনি বুক চাপড়ে চিৎকার করে বলেন, আমার ২ পুত্র ২ মেয়ের মধ্যে গতবছর বড় ছেলে জসীম উদ্দিন প্রবাস থেকে ফিরে এসে দুরারোগ্য ক্যান্সারে মারা গেল। এবার ছোট ছেলে গিয়াসও সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেল। এতিম নাতি নাতনিদের কে দেখবে ? কে তাদের মানুষ করবে?
নিহতের শ্বশুর খায়রুল আলম বলেন, আমার ২ মেয়েই অল্প বয়সে বিধবা হল, বড় মেয়ের জামাই পুলিশে চাকরি করত ৮ মাস আগে মারা যায়, আজ মারা গেল ছোট মেয়ের জামাই। আমি কি করব ভেবে পাচ্ছিনা।
মোবাইল: ০১৭১৭-৯১০৭৭৭
ইমেইল: newsamod@gmailcom
www.amodbd.com