মহিউদ্দিন মোল্লা।।
কুমিল্লা নগরীর দিগম্বরীতলা। সৈয়দ নিবাসের তয় তলার ছাদ। এই ছাদে রয়েছে দৃষ্টিকাড়া ফুলের বাগান। বাগানের পাশের চিলেকোঠার চালায় ও ছাদের কার্নিশে প্রতিদিন ভোরে পাখির খাবার দেন তিনি। তিনি ৭৬বছর বয়সী সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম। ১০বছর ধরে তিনি এই ভাবে খাবার দিয়ে যাচ্ছেন। তার এই বিষয়টিকে পাখি প্রকৃতির প্রতি মমতা বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়,ছাদে উঠে তিনি বাগানে পানি দেন। পানি দেয়া শেষে চাল গম ভুট্টা মিশ্রিত খাবারের বক্স নিয়ে তা চিলেকোঠার চালায় ও ছাদের কার্নিশে ছিটিয়ে দেন। তিনি খাবার ছিটাতে ছিটাতে আয় আয় বলে ডাকতে থাকেন। তখন ঘুঘু চড়–ইসহ বিভিন্ন পাখির দল পাশের ভবনের ছাদে অপেক্ষা করতে থাকেন। এক সময়ে তারা এসে খাবার খেতে শুরু করেন। বন্য পাখির সাথে পালিত কবুতরও এসে খাবারে ভাগ বসায়। তখন পাখির ডাকে সরগরম হয়ে উঠে চারপাশ। খাবার শেষে ছাদে রাখা পানিতে ঠোঁট ডুবিয়ে দেন তারা। তার পাখির মেহমানদারি সবার নজর কেড়েছে। প্রতিবেশীরা জানালা দিয়ে পাখির আপ্যায়নের বিষয়টি উপভোগ করেন।
সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম বলেন,বাড়িটি করার পর ছাদে বাগান করেন। বাগানে পানি দিতে গিয়ে দেখেন পাখির আনাগোনা। এক সময় ইচ্ছে হলো তাদের খাবার দেয়ার। এখন সকাল হলে পাখিরা খাবারের অপেক্ষায় থাকে। তিনিও তাদের খাইয়ে তৃপ্তি পান। পাখির ডাক শুনলে মন জুড়িয়ে যায় তার।
কুমিল্লা কৃষি ও কারিগরি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আনিসুর রহমান আখন্দ বলেন, সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম একজন মানবিক ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব। তিনি মৃতের গোসল দেয়ার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন। এছাড়া তিনি ছাদ বাগান করেন। তার বিশেষ গুণ তিনি পাখিদেরও নিয়মিত খাবার দেন। সুন্দর পৃথিবী গড়তে তার মতো মানুষদের উদ্যোাগকে সাধুবাদ জানাই।
ঐতিহ্য গবেষক নাজমুল আবেদীন বলেন, কেউ কুকুর, বিড়াল ও পাখিদের খাওয়ায়। সিরাজুল ইসলম সাহেবও পাখিকে খাইয়ে পুণ্যের কাজ করছেন। এই উদ্যোগ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ুক।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক আইউব মাহমুদ বলেন,মানুষ নাগরিক জীবনে বিনোদনের জন্য নানা উদ্যোগ নিচ্ছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছাদ বাগান করা। সিরাজুল ইসলাম ছাদ বাগান করে প্রকৃতিকে সতেজ রাখার সাথে নিজেও সুন্দর সময় কাটাচ্ছেন। এছাড়া পাখিকে খাওয়ার দেয়াও একটি ব্যতিক্রমী কাজ। প্রাণ প্রকৃতি রক্ষায় তার ভূমিকা উল্লেখ করার মতো। প্রকৃতির প্রতি এই দরদ আরো ছড়িয়ে যাক।