বিজয়পুরের সেই জেলখানা বাড়ির ইতিহাসের খোঁজে


জাবেদ খান।।
জেলখানা বাড়ি। দোকানের সাইনবোর্ডে এখনও শোভা পাচ্ছে। সবার মুখে মুখে এই নাম। কিন্তু এখানে কোন জেলখানা নেই। এই স্থানটি কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বারপাড়া ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে অবস্থিত। এর একটু উত্তরে বিজয়পুর মৃৎশিল্প সমবায় সমিতি। এখানে বর্তমানে কিছু দোকান গড়ে উঠেছে।


স্থানীয় সূত্র জানায়, বিজয় চৌধুরীর ছেলে দেউরা (দেবন) চৌধুরী ও অলঙ্গ চৌধুরী ব্রিটিশ শাসন আমলে জেলখানা বাড়ি নামক এই অঞ্চল শাসন করেছেন। প্রজারা তাদের কর দিতো। কেউ কর না দিলে তাদের নামে জেলখানা বাড়ি নামক জায়গায় শালিস বসিয়ে ইচ্ছে মত রায় দিতেন। এখানে সাময়িক কারাগারে রাখা হতো। অপরাধের মাত্রা বেশি হলে পরে তাদেরকে এক কিলোমিটর দূরে আন্দার মানিক নামক জেলখানায় নিয়ে বন্দি করে রাখতো। আন্দার মানিক নামক জেলখানা বর্তমানে মধ্যম বিজয়পুর হাজারী বাড়িতে অবস্থিত। হাজারী বাড়ির পাশে রয়েছে বড় দিঘি। দিঘির ঘাটলার ইট এখনও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে টিকে আছে। ধারণা করা হচ্ছে,এখানে জমিদারদের বাসস্থানও ছিলো।
হাজারী বাড়ির বাসিন্দা হাজী আব্দুল বারেক (৭৭) বলেন, তার পরিবার জমিদার বংশের সাথে বিনিময় করে এখানে এসেছেন। বিজয় চৌধুরীর ছেলে দেউরা (দেবন) চৌধুরী ও অলঙ্গ চৌধুরী ব্রিটিশ শাসন আমলে জেলখানা বাড়ি নামক এই অঞ্চল শাসন করেছেন। প্রজারা কেউ যদি কর না দিলে জেলখানা বাড়ি নামক জায়গায় শালিস বসিয়ে ইচ্ছে মত রায় দিতেন। বড় অপরাধ করলে তাদেরকে আন্দার মানিক নামক জেলখানায় নিয়ে বন্দি করে রাখতেন। জনশ্রুতি আছে,ত্রিপুরার মহারাজা বীর বিক্রম মানিক্য বাহাদুর আনুমানিক ১৯৩৮ সনে দেউরা (দেবন) চৌধুরীর নিকট কর আদায়ের জন্য জেলখানা বাড়িতে হাতি দিয়ে আসেন। দেউরা (দেবন) চৌধুরী অত্যাচারী শুনে তিনি কর না নিয়েই ফিরে গিয়েছেন। দেউরা (দেবন) চৌধুরীর বংশধররা (আনুমানিক ১৯৬৩) সনে ভারতের কলকাতায় চলে গেছেন। সংগ্রামের সময় অনেক মুক্তিযোদ্ধা আন্দার মানিকে অবস্থান করেছেন। ১৯৭৩ সনে আন্দার মানিকটি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। দেউরা (দেবন) চৌধুরীর পিতা বিজয় চৌধুরীর নামে এই ইউনিয়নের নাম বিজয়পুর ইউনিয়ন রাখা হয়েছে।
বারপাড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ বিজয়পুর গ্রামের বাসিন্দা আনু সর্দার (৭১) বলেন, বিজয় চৌধুরীর বংশধর চিত্ত রঞ্জন চৌধুরী ও সন্তেুাষ (কালু) চৌধুরীর বংশধররা ব্রিটিশ আমলে আনুমানিক ১৯২০ সালে বর্তমান জেলখানা বাড়ি নামক জায়গাটিতে বিচারের কার্যক্রম চালাতো বলেই জায়গাটির নাম জেলখানা বাড়ি হিসেবে পরিচিত লাভ করে। জেলখানাটির নাম ছিল আন্দার মানিক। তাদের কমান্ড অমান্য করলে আন্দার মানিক নামক জেলখানায় বন্দির পর টর্চার করা হতো।
স্থানীয় শিবের বাজারের প্রবীণ ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফ (৭৫) বলেন, ব্রিটিশ শাসন আমলে জেলখানা বাড়িসহ এই অঞ্চলে দেউরা চৌধুরী (দেবন চৌধুরী) ও অলঙ্গ চৌধুরী দুই ভাই মিলে শাসন করতেন। জেলখানা বাড়িতে তারা শালিস বসিয়ে সাজা দিতেন। এই স্থানটিতে সব সময় বিচারের কার্যক্রম হতো বলেই জায়গায়টির নাম জেলখানা বাড়ি হয়। মূলত এই স্থান থেকে ১ কিলোমিটার দূরে বড় জেলখানা (আন্দার মানিক) অবস্থিত।
ইতিহাস গবেষক আহসানুল কবীর বলেন,জেলাখানা বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় তার নানার বাড়ি। তিনি শৈশবে ওই এলাকায় একাধিকবার গিয়েছেন। বিশেষ করে আন্দার মানিক তিনি দেখেছেন। মাটির গভীরে আন্দার মানিক নামের সেই বিশেষ ব্যবস্থার জেলখানা। তিনি আরো বলেন,এই এলাকার সমৃদ্ধ অতীত রয়েছে। ইতিহাস খুড়লে মূল্যবান অনেক ইতিহাস ডানা মেলবে।