বৃদ্ধাকে হত্যা করে আড়াই হাজার টাকা পেল খোরশেদ
জবা বেগমকে (৭৫) ডাকতেন নানি বলে। তিনি বাসায় একা থাকতেন। গত ২৬ অক্টোবর নানির কাছ থেকে নারিকেল কিনতে যান খোরশেদ আলম (২৫)। নানির বাড়িতে কেউ নেই, রাতে স্বর্ণালঙ্কার, টাকা-পয়সা লুট করতে পারবেন ভেবে কৌশলে দরজা খুলে যান। রাতে এসে কাক্সিক্ষত টাকা, স্বর্ণালঙ্কার না পেয়ে জবা বেগমকে গলা কেটে হত্যা করেন খোরশেদ। কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের চান্দলা গ্রামে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। রোববার সকালে খুনি খোরশেদকে গ্রেফতার করে র্যাব। সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাব-১১, সিপিসি-২ এর কোম্পানি অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন।
জানা যায়, গত ২৬ অক্টোবর সকালে জবা বেগমের ছোট ছেলের স্ত্রী স্বপ্না বেগম তার শাশুড়ি জবা বেগমকে (৭৫) ঘরে মৃত অবস্থায় দেখতে পেয়ে পরিবার ও স্থানীয় লোকজনসহ নাঙ্গলকোট থানায় খবর দেয়। নাঙ্গলকোট থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ সুরতহালের জন্য থানায় নিয়ে যায়। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে ২৭ অক্টোবর থানায় হত্যা মামলা হয়। এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। বিষয়টি র্যাব-১১, সিপিসি-২, কুমিল্লার নজরে আসলে ছায়া তদন্ত শুরু করে।
র্যাব-১১, সিপিসি-২, কুমিল্লার একটি দল ৩১ অক্টোবর সকালে অভিযান পরিচালনা করে নাঙ্গলকোটের সিজিয়ারা গ্রাম থেকে ওই গ্রামের আবদুল গফুরের ছেলে খোরশেদ আলমকে (২৫) গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদে খোরশেদ আলম জানায়, সে জবা বেগমকে নানি বলে সম্বোধন করত। ঘটনার দিন বিকেলে জবা খোরশেদ আলমকে নারিকেল বিক্রির জন্য প্রস্তাব দিলে সে ওই বাড়িতে গিয়ে নারিকেল দেখে তাকে প্রতিটি নারিকেল ৩০ টাকা করে দিবে বলে জানালেও জবা বেগম নারিকেল ৪০ টাকা করে চাহিদা দেয়। তখন জবা বেগমের ঘরের ভিতর বিভিন্ন দামি আসবাবপত্র ও লকার দেখে লোভের সৃষ্টি হয়। সে পুনরায় এসে নারিকেলের দরদাম করে এবং কৌশলে তার ঘরের বিভিন্ন আসবাবপত্র পর্যবেক্ষণ করে চলে যায়। পুনরায় তৃতীয় বার জবাদের ঘরে আসে এবং নারিকেল যে দামে বিক্রি করতে চেয়েছিল সেই দামে নারিকেল কিনতে রাজি হয় এবং কৌশলে বসতঘরের পূর্বপাশের উত্তরের দরজা খুলে চলে যায়।
পরবর্তীতে জবা বেগম ঘুমিয়ে পড়লে রাত ১২টার সময় পুনরায় খোরশেদ ওই বাড়িতে আসে এবং ঘরে প্রবেশ করে। ঘরে প্রবেশ করে ঘরের ভিতর রক্ষিত আলমারি,আসবাবপত্র খোঁজাখুঁজি করে আলমারিতে রাখা নগদ আড়াই হাজার টাকা পায়। কিন্তু তার ধারণা ছিল সে অনেক টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার পাবে। কারণ জবা বেগমের চার ছেলে প্রবাসী, অন্য ছেলে দেশে ভালো চাকরি করে। ইতোমধ্যে জবা বেগম ঘরের মধ্যে খোরশেদের উপস্থিতি টের পান।
তখন খোরশেদের পালিয়ে যাবার সুযোগ থাকলেও আশানারূপ মালমাল না পাওযায় জবা বেগমকে চাকু দ্বারা গলায় পোচ দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ঘরে অবস্থান করে । পরবর্তীতে আলমারিতে রাখা দুই হাজার পাঁচশ টাকা, ২টি মোবাইল, জবা বেগমের হাতে থাকা স্বর্ণের আংটি, নাকফুল ও কানের দুল খুলে নিয়ে ঘর থেকে চলে যায় এবং যাবার সময় প্রচলিত পথ ব্যবহার না করে রেললাইনের পথ ধরে আসামি তার বাড়িতে চলে যায় ।
র্যাব-১১, সিপিসি-২ এর কোম্পানি অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন জানান, আসামির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার বাসা থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু, চোরাইকৃত স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।অজ্ঞাত হত্যা প্রতিরোধ ও হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে র্যাবের অভিযান অব্যাহত থাকবে।