।। নজরুল ইসলাম বাবুল।।
সাত দিনে সপ্তাহ শেষ হয়। সোমবার থেকে শুক্রবার। এর আগের বৃহস্পতিবার দিনটির অপেক্ষায় থাকতাম।
আমার বেডে উঠা শহর কুমিল্লার মোগলটুলী নানা নানীর বাড়িতে। শিক্ষা জীবনের শুরু সেখান থেকেই। পুরাতন চৌধুরীপাড়া সরকারি রিয়াজউদ্দিন প্রাইমারি স্কুলে পড়া লেখার হাতে খড়ি। কুমিল্লা হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিকের শিক্ষা অর্জন। এ দুটো স্কুলের মধ্যবর্তী স্থানে দেশের প্রাচীনতম সংবাদ পত্র কুমিল্লার অহংকার সাপ্তাহিক আমোদ এর কার্যালয়।
লেখালেখির ইচ্ছে জাগে আমোদকে দেখে। কিন্তু কোন ভাবেই মনের জোর পাচ্ছিলামনা কিছু লিখার। পড়ালেখার পাশাপাশি অভিভাবকদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ছন্দের ছড়া আর কবিতা লিখছি আর কলম দিয়ে কাটা ছেড়া করছি। এ ভাবে বেশ কিছুদিন কেটে যায়।
সাপ্তাহিক আমোদ তখন কলকাকলী নামে একটি সাহিত্য পাতা সম্পাদন করতো। এটির একসময় সম্পাদনা করার দায়িত্বে ছিলেন বিশিষ্ট ছড়াকার বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী মমিনুল হক। আমার নিজের বর্তমানে বসবাসও আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়াতে। আমোদ এর বর্তমান সম্পাদনার দায়িত্বে যিনি আছেন বাকীন রাববী তিনিও এখন আমেরিকা প্রবাসী। তার পরিবারের সবাই বলা যায় এখানকার অভিবাসী।
১৯৫৫ সাল থেকে পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়ে আসছিলো পারিবারিকভাবে পরিচালনার মাধ্যমে। মরহুম মোহাম্মদ ফজলে রাববী ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। তার পরপারে চলে যাবার পর সহধর্মিনী মরহুমা শামসুননাহার রাব্বী আর তাদের সন্তান বাকীন রাব্বী এখন সম্পাদক হিসেবে আমেরিকার নিউজার্জি থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতি বৃহস্পতিবার আমোদ প্রকাশিত হয়।
লেখালেখির ইচ্ছে থেকে সাহস করে একদিন আমার কাঁচা হাতের লেখা কিছু ছড়া আমোদ-এ দিয়ে আসলাম। আর কখন বৃহস্পতিবার আসবে অপেক্ষায় থাকলাম। সেই দিনটিতে খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে আমোদ কার্যালয়ের সামনে লাগানো আমোদ-এর সাহিত্য পত্রে আমার কোন লেখা ছাপা হলো কিনা খুঁজছিলাম। তখন চোখে পড়লো আমার একটি লেখা।
তা দেখে আনন্দে আত্মহারা। জীবনে প্রথম ছাপার অক্ষরে তাও আবার দেশের প্রাচীনতম সংবাদপত্রে। সে থেকে লেখালেখির জগতে আমার প্রবেশাধিকার। সংবাদপত্রে আমার পদচারণার সূচনা। আমি ভাল লেখক বা সাংবাদিক হতে পারিনি কিন্তু আমোদ অনেককে ভাল লেখক সাংবাদিক হিসিবে প্রতিষ্ঠা করেছে।
সংবাদপত্র সাংবাদিকতায় আসার ক্ষেত্রে আমোদ ছিল আমার সূচনা ও মাধ্যম। পরবর্তী জীবনে সাংবাদিকতা শুরু আমার
দেশের আরেকটি প্রাচীনতম দৈনিক আজাদ এর মাধ্যমে। পেশাগত সাংবাদিকতা জীবনের শুরু আশির দশক থেকে সে সময় ৭৫০ টাকা বেতনে কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত দৈনিক বাংলাদেশ সংবাদে কর্ম জীবনের শুরু। কাজ করার সুযোগ হয়েছিল জেলা শহর কুমিল্লার প্রতিনিধি হয়ে দৈনিক দিনকাল, দৈনিক মুক্তকণ্ঠ, সাপ্তাহিক ছুটি পত্রিকায়। দেশ থেকে আমেরিকায় আসার সময় পর্যন্ত জড়িত ছিলাম দৈনিক মুক্ত কন্ঠ পত্রিকার সাথে। সংবাদপত্র সাংবাদিকতার পাশাপাশি জড়িয়ে পড়ি সামাজিক সংগঠনে। বিশেষ করে কুমিল্লা প্রেসক্লাব এর দুবার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব সম্পাদন করার সুযোগ হয়েছিল।
নিজেকে নিয়ে এত সব বলার কারণ হলো। সাপ্তাহিক আমোদ-এ লেখালেখির সুযোগে এ জগতে আসার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল। কুমিল্লা তথা দেশের অহংকার সাপ্তাহিক আমোদ ৬৯তম বর্ষে পদার্পণে আমি তার চলার পথ চলমান থাকুক এ কামনা করি।
লেখকঃ
আমেরিকা প্রবাসী, কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
মোবাইল: ০১৭১৭-৯১০৭৭৭
ইমেইল: newsamod@gmailcom
www.amodbd.com