বেরুলা দখলে এবারও ডুববে কুমিল্লার তিন উপজেলা

কমছে ফসল উৎপাদন-হারিয়েছে দেশি মাছের উৎস
মহিউদ্দিন মোল্লা:
বেরুলা খাল। খালটিকে কুমিল্লার দক্ষিণ অংশের প্রাণ বলা হয়। এতে ধানে ও মাছে সমৃদ্ধ ছিলো লাকসাম,মনোহরগঞ্জ ও নাঙ্গলকোট উপজেলা। অপরিকল্পিত নির্মাণ, দখল আর দূষণে খালটি প্রায় মরে গেছে। দখল হয়ে গেছে খালের দুই তৃতীয়াংশ। এতে কমছে ফসল উৎপাদন,হারিয়ে গেছে দেশি মাছের উৎস। গত বছর বর্ষার পরবর্তীতে কুমিল্লার লাকসাম,মনোহরগঞ্জ ও নাঙ্গলকোট উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ দুই মাস ধরে জলাবদ্ধ ছিলেন। চলতি বর্ষায়ও আবারও ডুবতে পারে ওই তিন উপজেলা। এলাকাবাসী খালটির পুন:সংস্কার দাবি করে বিভিন্ন সময় মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছেন, আবেদন পেলে তারা পুন:খননের বিষয়টি বিবেচনা করবেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, লাকসাম উপজেলার ডাকাতিয়া নদীর ফতেপুর এলাকা থেকে খালটি উৎপন্ন হয়েছে। কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের গা ঘেঁষে খালটি ৬০কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে নোয়াখালীর চৌমুহনী পর্যন্ত গিয়েছে। কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক সম্প্রসারণ করায় খালটি সংকুচিত হয়ে যায়। সেই সুযোগটি লুফে নেয় দখলকারীরা। তারা পুরো খাল দখল করে নেয়। বিগত দেড় দশকে বেরুলাসহ এ অঞ্চলের প্রায় সবকটি খাল দখল করে বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, পুকুর, রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। বেরুলা খাল দিয়ে যাতায়াতসহ বর্ষার পানি নিষ্কাশন আর শুস্ক মৌসুমে চাষাবাদের জন্য এর পানি সেচ কাজ ব্যবহার হতো। কিন্তু খালগুলো দখল হয়ে পড়ায় বন্যার পানি সরতে পারছেনা। জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন কয়েক লাখ মানুষ।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়,বেরুলা খাল জন্মদিনের কেকে রূপ নিয়েছে। যে ভোবে পারছে দখল করে নিয়েছেন। ফতেপুর এলাকায় খালের ওপর বাঁশ বাজার বসানো হয়েছে। ভাটিয়াভিটা ও নোয়াগাঁও এলাকায় খালের ওপর বাড়ি,দোকান স্থাপন করা হয়েছে। একই অবস্থা কালিয়া চৌঁ ও উত্তরদা এলাকায়। সেখানে খালের ওপর কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। এসব স্থানে দাঁড়ালে এখানে আগে খাল ছিলো কিনা বুঝা যায় না। এদিকে খিলা,নাথেরটেুয়া ও বিপুলাসার বাজারের পাশের খালের ওপর দোকান গড়ে তোলা হয়েছে।
কৃষ্ণপুরের সমাজকর্মী সাফায়েত মজুমদার বলেন,বেরুলা খাল তিন উপজেলার মানুষের ধানের জমিতে সেচের প্রধান উৎস ছিলো। এছাড়া এখানে প্রায় সারা বছর দেশি মাছ পাওয়া যেতো। নৌকা যোগে মালামাল বহন করা হতো। আজ সব স্মৃতি হয়ে গেছে। খালটি পুন:খনন জরুরি।
খিলা এলাকার রাজনৈতিককর্মী গোলাম মাওলা বলেন,চোখের সামনে বেরুলা খালের যৌবন দেখেছি। সেই খাল এখন নেই বললে চলে। খাল দখল হয়ে যাওয়ায় এই এলাকার ফসলের জমি মরুভূমিতে রূপ নিচ্ছে। বর্ষাকালে জলাবদ্ধতায় মানুষ ডুবে থাকছে।
নাথেরপেটুয়া এলাকার ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহামান বলেন,খালটি এমনভাবে দখল হয়েছে। কোথাও কোথাও তার অস্তিত্বও নেই।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক আইউব মাহমুদ বলেন,কৃষি প্রধান দেশে প্রবাহমান নদী ও খালের বিকল্প নেই। এতে সেচ ও পানি নিষ্কাশন সহজ হয়। বেরুলা খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় তিন উপজেলার কৃষকদের ফসল উৎপাদনে বেগ পেতে হচ্ছে। খালটি খননের বিষয়ে আমরা বিভিন্ন ফোরামে কথা বলছি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন,সেচের প্রয়োজনে ও জলাবদ্ধতা দূরীকরণে পানি উন্নয়ন বোর্ড নদী – খাল খনন ও পুন:সংস্কার করে থাকে। স্থানীয় জনপ্রতনিধি,ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা জনসাধারণের লিখিত আবেদন পেলে আমরা বেরুলা খাল পুন:খননের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারি।
