অফিস রিপোর্টার।।
ঘরের নববধূ হতে স্কুল পডুয়া শিক্ষার্থী, সবার গল্পে উপস্থিত এক সরকারি কর্মকর্তা। তিনি সীমান্তবর্তী কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ইউএনও সোহেল রানা। তিনি ব্যক্তিগত বিরোধ থানা,আদালত পর্যন্ত যেতে দিতেন না। তাদের ডেকে এনে মীমাংসা করতেন। এলাকার শতকরা ৭০ভাগ মাদক নিয়ন্ত্রণে এনেছেন, থামিয়েছেন বিভিন্ন এলাকার সংঘর্ষ। সম্প্রতি তার বদলির আদেশ হয়। ২০মাসে তার এই বদলির আদেশে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ। তার বদলি প্রত্যাহারে জেলা প্রশাসনে স্মারকলিপি দিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরের গ্রাম শিদলাই। সেখানে স্থানীয়দের মুখে জানা গেলো শিদলাইয়ের নানা সংঘর্ষের ঘটনা। ১০০ বছর আগে থেকে ওই এলাকার কয়েকটি বংশ সংঘর্ষ জড়িত রয়েছে। ধারাবাহিকভাবে কয়েটি খুনের ঘটনাও ঘটে। ভয়ে অনেকে এই শিদলাইয়ে পা দেন না। এই এলাকার মানুষ ঝগড়ায় জড়ান দেশীয় অস্ত্র হাতে।
স্থানীয় চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম আলাওল জানালেন, এই ইউনিয়নের প্রত্যেক বাড়িতেই প্রবেশ করেছেন ইউএনও সোহেল রানা। ১৭ মাসের মাঝে তিনি শিদলাই, নাগাইশ ও বিভিন্ন এলাকার ১০০ বছর কোথাও ৭০ বছর ধরে চলে আসা বংশীয় সংঘর্ষ শান্তিচুক্তির মাধ্যমে বন্ধ করেন। সীমান্তবর্তী হওয়াতে এখানকার কিছু মানুষ মাদক ব্যবসায় জড়িত। এই এলাকার মানুষ কাউকে ইজ্জত দিতো না। কিন্তু সোহেল রানা স্যার যা যা বললো এই এলাকার মানুষ তাই মেনে নিল। তিনি এখনই চলে গেলে এই এলাকায় আবার মাদকের হাঁট বসবে। আমরা চাই এলাকার মানুষ আরও কদিন তার সংস্পর্শে থাকুক।
নাগাইশ গ্রামের এক চা দোকানে কথা হয় আবুল কাশেম নামের এক পঞ্চাশ ঊর্ধ্ব অটোরিকশা চালকের সঙ্গে। তিনি বলেন, এই ইউএনও আসার আগে মানুষ ইউএনও কি তাই জানতো না। মানুষ মনে করতো পুলিশই সব। এখন মানুষ শান্তিতে আছে। তাদের এই খুশির মধ্যে এমন খবর দুঃখজনক।
এদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. নজরুল ইসলাম বলেন, এমন ইউএনও ব্রাহ্মণপাড়ার ইতিহাসে প্রথম। তার সাথে একটি কুচক্রী পক্ষের বনিবনা হচ্ছিলা। তারা এলাকায় মাদক ঢুকাতে চাইছে। কিন্তু সোহেল রানা সাহেবের জন্য পারছেনা।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা কলেজ শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বড়ধুশিয়া আদর্শ কলেজ সহকারী অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা বলেন, সোহেল রানা এসে ব্রাহ্মণপাড়া থেকে নকল উঠিয়েছেন। প্রথম দিনই তিনি অ্যাকশন নিয়েছেন। সেদিন থেকেই তার পিছু লেগেছে চক্রটি।
ব্রাহ্মণপাড়া প্রেসক্লাবের আইন সম্পাদক মো. শাহজাহান বলেন, আগে এই বাজারে দুই থেকে তিন ঘণ্টার জ্যাম লেগে থাকতো। বাজার থেকে বের হতে অনেক সময় লাগতো। তিনি একটি বাইপাস সড়ক করে পুরো বাজারের যানজট নাই করে দিয়েছেন। মানুষ সেকারণে তাকে ছাড়তে চায়না।
ইউএনও সোহেল রানা বলেন, আমার বদলির চাকরি। সরকার যেখানে পাঠায় সেখানে যেতে হবে। এনিয়ে বলার কিছু নেই। তবে আমার জন্য মানুষ স্মারকলিপি দিচ্ছে। বদলি প্রতাহার চাচ্ছে। এটাকে আমার প্রতি তাদের ভালোবাসার বহি:প্রকাশই বলবো।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ুয়া বলেন, সোহেল রানা ইউএনও হিসেবে বেশ ভালো করছে। তার বদলি যেন প্রত্যাহার করা হয় সে জন্য ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা একটি স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। আমরা বিষয়টি বিভাগীয় কমিশনার স্যারকে জানাবো।
মোবাইল: ০১৭১৭-৯১০৭৭৭
ইমেইল: newsamod@gmailcom
www.amodbd.com