ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লিচুু করোনার দু:সময়েও আশা জাগাচ্ছে

এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
লিচু। গ্রীষ্মকালীন একটি সুস্বাদু ফল। কেবল সুস্বাদু ফলই নয়, গ্রীষ্মকালীন ফলের মধ্যে অন্যতমও বটে। গত প্রায় দুই দশক ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হচ্ছে লিচুর আবাদ। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য জেলাতেও যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লিচু। জেলার তিনটি উপজেলা এলাকায় ক্রমশই বাড়ছে লিচুর আবাদ। জেলার বিজয়নগর উপজেলায় সীমান্তবর্তী একটি বাজার ‘লিচু বাজার’ নামে গোটা দেশেই বেশ সুপরিচিত। বর্তমানে করোনা মহামারির এই দু:সময়েও কৃষকদের মনে আশা জাগাচ্ছে লিচু। 
ইতোমধ্যে বাজারে ওঠেছে মৌসুমি রসালো ফল লিচু। চলতি মৌসুমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৫১০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। এবার প্রায় সাড়ে ১৫ কোটি টাকা মূল্যের লিচু বাজারজাত করার আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রদত্ত তথ্যমতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর, আখাউড়া এবং কসবা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি লিচুর আবাদ হয়। এবারও এই তিন উপজেলায় ৪৯৫ হেক্টর জমিতে বোম্বাই, পাটনাই এবং চায়না-৩ জাতের লিচুর আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে জেলার বিজয়নগর উপজেলায় ৩৭৫ হেক্টর, আখাউড়া উপজেলায় ৯০ হেক্টর এবং কসবা উপজেলায় ৩০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ করেছেন কৃষকরা। জেলার অন্যান্য উপজেলাগুলোতে ১৫ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। জেলায় মোট লিচুর বাগান রয়েছে ৪৩০টি।
লিচু চাষী এবং স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, শীতের শেষ দিকে লিচু গাছে মুকুল আসার আগেই অধিকাংশ কৃষক তাদের বাগান মৌসুমি ফল ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেন। এরপর ফল ব্যবসায়ীরা গাছে লিচু ধরা এবং বাজারজাত করার আগ পর্যন্ত বাগান পরিচর্যা করেন। এই বছর প্রতি হেক্টর জমিতে তিন টন করে ফলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। সেই হিসেবে এবার জেলায় এক হাজার ৫৩০ মেট্রিক টন লিচুর ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রতি টন লিচুর গড় মূল্য ধরা হয়েছে এক লাখ টাকা। সেই হিসেবে এবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ১৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা মূল্যের লিচু বাজারজাত করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট বিভাগ নিশ্চিত করেছেন।যদিও প্রতি হেক্টর জমিতে কৃষি বিভাগের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আরও বেশি ফলন হবে বলে জানিয়েছেন কৃষক ও স্থানীয়রা।
জেলার বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের কালাছড়া গ্রামের লিচু চাষী আক্তার হোসেন বলেন, ‘আমার লিচু বাগানটি ৬০ শতাংশ জায়গাজুড়ে। এবার বোম্বাই জাতের লিচু চাষ করেছি। আগে মৌসুমের শুরুতে বাগান বিক্রি করে দিতাম। কিন্তু এবার বিক্রি করিনি। আশা করছি খরচ মিটিয়ে আড়াই লাখ টাকার লিচু বিক্রি করতে পারবো।’ একই গ্রামের আরেক চাষী মহসিন আহমেদ জানান, ‘আমার ১২০ শতাংশ জমিতে তিনটি লিচুর বাগান রয়েছে। বিগত বছরের তুলনায় এবার খরার কারণে ফলন কিছুটা কম হয়েছে। তিনটি বাগানের লিচু তিন লাখ টাকার মতো বিক্রি হবে। তবে গত বছর একটি বাগানের লিচুই বিক্রি করেছিলাম দুই লাখ টাকা।’ বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ছতরপুর গ্রামের বাসিন্দা শেখ সায়মন জানান, ‘আমার এক প্রতিবেশী কৃষকের কাছ থেকে তিন বছরের জন্য সাড়ে তিন লাখ টাকায় দুুুুইটি বাগান কিনেছি। দুইটি বাগান দু’টোতে ৬০ টি লিচু গাছ আছে। বাগানগুলো পরিচর্যায় খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। আর দুইটি বাগানে যে পরিমাণ লিচু এসেছে, তা অন্তত দেড় লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করছি।’
বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নে আউলিয়াবাজার গ্রামে একটি বাজার রয়েছে। এই বাজারে রীতিমতো লিচুর হাট বসে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যে অবধি। বাজারটির অনতিদূরেই অবস্থিত ঢাকা-সিলেট রেলপথের মুকুন্দপুর রেলস্টেশন। আবার সড়কপথে উপজেলা সদর, পাশের আখাউড়া উপজেলা, জেলা সদর এবং পার্শ্ববর্তী হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার সাথে আউলিয়াবাজারের সড়ক যোগাযোগ বেশ সুবিধের। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে পাইকাররা লিচু কিনতে আসেন এখানে। লিচু ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায় পুরো মৌসুমজুড়েই বাজারটি থাকে সরগরম। ফলে স্থানীয়দের পাশাপাশি গোটা দেশজুড়ে এই আউলিয়াবাজার ‘লিচু বাজার’ নামেও সমধিক পরিচিতি লাভ করেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. রবিউল হক মজুমদার বলেন, ‘এবার অন্তত ১৫ কেটি ৩০ লাখ টাকা মূল্যের লিচু বাজারজাত হবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে। লিচুর ফলন কিভাবে ভালো করা যায়, সে বিষয়ে আমরা কৃষকদের সব ধরণের সহযোগিতা পরামর্শ দিয়েছি।’