২ শতাংশের জন্য পরিবহন, ৪ শতাংশের আবাসন
বাহার উদ্দিন খান।।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রি শাখায় প্রায় সাতাশ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। এই সাতাশ হাজার শিক্ষার্থীর অধিকাংশই জেলার বিভিন্ন উপজেলা হতে কিংবা পাশের জেলা গুলো থেকে এসে অধ্যয়ন করে। এই অধ্যয়নরত সাতাশ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র ৬৩০ জনের পরিবহন এবং ১,০১৬ জনের জন্য আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। কলেজের পরিবহন ব্যবস্থার দৈন্যদশার কারণে একদিকে যেমন শিক্ষার্থীরা অনেক দূরদূরান্ত থেকে কলেজে যাতায়াত করায় বাড়তি ভাড়া গুনতে হয় এবং চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়, তেমনি অন্যদিকে কলেজের আবাসন ব্যবস্থার চরম অপ্রতুলতার কারণেও শিক্ষার্থীরা হলে থাকতে পারছে না। যার ফলে এখানেও শিক্ষার্থীদের বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে।
প্রশাসনিক সূত্র জানায়, কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শাখা এবং ডিগ্রি শাখা মিলিয়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা সাতাশ হাজারের কাছাকাছি। এই সাতাশ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য কলেজের একটি নিজস্ব গাড়ি ও ১৩ টি ভাড়া গাড়িসহ মোট ১৪ টি গাড়ি জেলার বরুড়া, কোম্পানীগঞ্জ, দেবিদ্বার, বাগড়া, লাকসাম, চান্দিনা, শংকুচাইল, ব্রাহ্মণপাড়া, গৌরীপুর এবং সদরের বিভিন্ন রুটে যাতায়াত করে। এসব গাড়িতে সর্বোচ্চ ৬৩০ জনের আসন রয়েছে। অন্যদিকে উচ্চ মাধ্যমিক শাখার ছাত্রীদের জন্য ২০২২ সালে নির্মিত শেরে বাংলা হোস্টেলে ১৩৬ আসন, নিউ হোস্টেলে ৮০ জন, কবি নজরুল হলে ৪০০ জন এবং নওয়াব ফয়জুন্নেসা ছাত্রী নিবাসে ৪০০ জনসহ সর্বমোট ১,০১৬ জনের আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। সূত্র আরও জানায়, পরিবহন খাতে প্রতিবছর ভর্তির সময় ৬০০ টাকা এবং ফর্ম ফিলাপের সময় ১০০ টাকাসহ মোট ৭০০ টাকা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হয় এবং যারা হোস্টেলে সিট বরাদ্দ পান তাদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট একটি ফি নেওয়া হয়। এদিকে নতুন নির্মিত হোস্টেল ছাড়া বাকি হোস্টেলগুলোর অবস্থাও প্রায় বসবাস অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
দুর্ভোগ ও গুনতে হয় বাড়তি ভাড়া
ভাড়াসহ কলেজের ১৪ টি বাসে জেলার ৫/৬ টি উপজেলা থেকে শিক্ষার্থীরা আসা-যাওয়া করে। এর বাইরে চৌদ্দগ্রাম, সদর দক্ষিণসহ অনেক উপজেলাই এই পরিবহন সুবিধার বাইরে। কলেজে বাসের এই অপ্রতুলতার কারণে অধিকাংশ শিক্ষার্থী পাবলিক বাসে যাতায়াত করে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের একদিকে পরিবহনে বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে, অন্যদিকে অনেক শিক্ষার্থী বাসে সিট না পেয়ে দাঁড়িয়ে কিংবা গাদাগাদি করে কলেজ বাসে যাতায়াত করে। অনেক অন্তঃসত্ত্বা শিক্ষার্থী এই গাদাগাদির মধ্যেও যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন।
স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্রী রুমি আক্তার বলেন, “আমরা প্রতিদিন ভাড়া বাসে যাতায়াত করি। ভোরবেলা বের হলেও পাবলিক বাসে প্রচণ্ড ভিড় থাকে। দাঁড়িয়ে থাকতে হয় দীর্ঘ পথ, যা শারীরিকভাবে কষ্টকর।”
উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, “কলেজ বাসের সিট সীমিত। বেশিরভাগ সময় গাদাগাদি করে যেতে হয়। অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে প্রাইভেট বাসে গেলে খরচ বেড়ে যায়।”
আবাসনেও চরম দুর্ভোগ
অনেক শিক্ষার্থী বাসের এই অপ্রতুলতা, আবাসনের অপর্যাপ্ত ব্যবস্থা এবং বিভিন্ন দুর্ভোগের কথা মাথায় রেখে নগরীর বিভিন্ন মেস কিংবা ভাড়া বাসায় থাকছে। যার ফলে এখানেও শিক্ষার্থীদের একদিকে যেমন বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে, অন্যদিকে নিরাপত্তার শঙ্কা নিয়ে কলেজের বাইরে মেস বা ভাড়া বাসায় থাকতে হচ্ছে। কলেজের ৪ টি হলের তিনটির অবস্থাই নাজুক। এগুলোর সবগুলোই নানা সমস্যায় বসবাসের প্রায় অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
স্নাতকোত্তর প্রথম বর্ষের ছাত্রী নাবিলা খানম বলেন, “হোস্টেলে সিট বরাদ্দ পাইনি, তাই ভাড়া বাসায় থাকতে হচ্ছে। প্রতিমাসে খরচ মেটানো কঠিন হয়ে যায়। নতুন হোস্টেল নির্মাণ অত্যন্ত জরুরী”
স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নিজামুল ইসলাম বলেন, “হোস্টেলের সিট পেতে অনেক চেষ্টা করেও পাইনি। নিরাপত্তার ঝুঁকি ও বাড়তি অনেক টাকা দিয়ে মেসে থাকতে হচ্ছে।”
এদিকে শিক্ষার্থীরা সম্প্রতি কলেজে বাস বাড়ানো এবং এই সমস্যা নিরসনে অধ্যক্ষ বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে এবং আবাসন সমস্যা নিরসনে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে।
কলেজের পরিবহন কমিটির আহ্বায়ক ও সহযোগী অধ্যাপক রাজু আহমেদ বলেন, “বর্তমানে আর্থিক সংকট আছে, তাই বর্তমানে বাস বাড়ানোর বিষয়টি কতটুকু সম্ভব তা যাচাই-বাছাই করতে হচ্ছে। ভবিষ্যতে পর্যাপ্ত বাজেট পেলে দ্রুতই বাস বাড়ানো সম্ভব হবে।”
কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল বাশার ভূঁঞা বলেন, “শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক। এ বিষয়ে শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করব। শিক্ষার্থীদের নির্বিঘ্ন যাতায়াত নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেওয়া হবে দ্রুত। আর কলেজে দুইটি হোস্টেল বাড়ানোর জন্য পরিকল্পনাসহ আবেদন ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। যতটুকু জানি খুব শিগগিরই একনেকের সভায় এটি উঠবে। আমরা আশা করছি আমাদের প্রকল্পটি পাশ হবে।”
মোবাইল: ০১৭১৭-৯১০৭৭৭
ইমেইল: newsamod@gmailcom
www.amodbd.com