ভোগান্তিতে লকডাউনের প্রথম দিন পার কুমিল্লা নগরীর বাসিন্দাদের

মাহফুজ নান্টু।।
করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শুরু হলো কুমিল্লা নগরীর চারটি ওয়ার্ডের লকডাউন। চলবে ৩ জুলাই পর্যন্ত। তবে নানা সমস্যায় প্রথম দিন পার করলো লকডাউন করা চারটি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা।
শনিবার সকাল ৮টা। নগরীর ৩ নং ওয়ার্ড রেইসকোর্স। সেখানে গিয়ে দেখা যায় ছোট বড় ১১ টি স্পটে বাঁশ-বেড়া দিয়ে লকডাউন করা। যার মধ্যে চারটি স্পট দিয়ে বিশেষ কারণ দেখিয়ে লোকজন আসা যাওয়া করতে পারেন। তবে রেইসকোর্স এলাকায় বসবারত চিকিৎসকগণ লকডাউনে পড়েন। তারা গতকাল তাদের কর্মস্থলে যেতে পারেননি। নাম না প্রকাশ করার শর্তে রেইসকোর্স নিশা টাওয়ারে বসবাস করেন কয়েকজন ডাক্তার জানান, লকডাউনের কারণে তারা বাসা থেকে বের হতে পারেননি। চিকিৎসকদের মধ্যে অনেকেই কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরি করেন। কেউবা চাকুরি করেন ডায়বেটিকস হসপিটালে।
রেইসকোর্স সান মেডিকেল সার্ভিসেস গলির মাথায় দেখা গেলো স্বেচ্ছাসেবক ফারুককে। তিনি জানান, হাসপাতালটি লকডাউনের আওতাভুক্ত। তাই হসপিটালের কার্যক্রম নেই। প্রথম দিনে লকডাউন করা মানুষের মধ্যে ঔষধের চাহিদা ছাড়া অন্য কোন সমস্যা ছিলো না। তারা সবার জন্য ঔষধ এনে দেয়ার ব্যবস্থা করছেন।
এদিকে ডাক্তারদের অভিযোগের বিষয়ে ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিল সরকার মাহমুদ জাবেদ জানান,আমরা নিশা টাওয়ারে বসবাসরত ডাক্তারদের জন্য আন্ডার গ্রাউন্ড দিয়ে চলাচলের রাস্তা অনুমোদন করেছি। ডাক্তাররা চাইলে সে রাস্তাটি ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও সান মেডিকেল সার্ভিস লকডাউনের মধ্যে রাখার বিষয়ে কাউন্সিলর জাবেদ জানান, ওই গলির ১৮ জন করোনা আক্রান্ত। এখন কঠোর না হলে অদূর ভবিষ্যতে আক্রান্তের সংখ্যা আরো বেশী হবে। তাই হসপিটাল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। তবে আশা করি রবিবার থেকে আর তেমন সমস্যা থাকবে না।
নগরীর ১০ নং ওয়ার্ডে তেমন সমস্যা চোখে পড়েনি। প্রচার-প্রচারণা বেশী থাকায় ১০ নং ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষজন আগে থেকেই লকডাউনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। কাউন্সিলর মঞ্জুর কাদের মনি জানান, ওয়ার্ডের ডাক্তার, নার্স ও ইপিজেড কর্মীদের সরকারি নির্দেশনা মেনেই যেতে দেয়া হয়েছে। ডাক্তার নার্স ও বিদ্যুৎ অফিসে চাকুরি করা তাদের জরুরী সেবার অংশ। তাই তাদেরকে যেতে দেয়া হয়েছে। এদিকে শনিবার সকাল থেকে সমস্যা দেখা গেলো নগরীর ১২ নং ওয়ার্ডে। এখানে চিকিৎসক, গামেন্টকর্মীদের বসবাস বেশী। শনিবার সকাল ৯ টায় কর্মস্থলে যেতে বিড়ম্বনায় পড়েন বিভিন্ন পেশাশ্রেণীর মানুষ।
১২ নং ওয়ার্ডের নানুয়ার দিঘরিপাড় ভাড়া বাসায় থাকেন আবদুল ওহাব। তিনি জানান, কুমিল্লা ইপিজেডে চাকুরি করেন। লকডাউনেও অফিস থেকে ছুটি নেই। পাশাপাশি সকালে এলাকা থেকে বের হতে পারেননি। পরে কাউন্সিলর ইমরান বাচ্চুর কাছে বলে বের হয়েছেন। লকডাউনে ১২ নং ওয়ার্ডে তার মত অর্ধশত গামেন্টকর্মীর অবস্থা একই রকম। খুবই বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। অফিসে না গেলে চাকুরি থাকবে না। এদিকে আবার ঘর থেকেও বের হতে পারছেন না।
রাজগঞ্জ মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, ১২ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইমরান বাচ্চু লকডাউন কার্যক্রম পরিদর্শন করছেন। তিনি জানান, আসলে লকডাউন করার আগে আমাদের প্রচুর প্রচার প্রচারণা করার দরকার ছিলো। আমরা তা পারি নাই। আমরা ওয়ার্ডে নানান পেশা শ্রেণীর মানুষ বসবাস করে। যাদের মধ্যে ইপিজেডের কর্মী, দোকানের কর্মচারী, হকার-ফেরীওলা রয়েছেন। তবে গামেন্টস কর্মীদের কথা মাথায় রেখে আমরা সবাইকে যেতে দিয়েছি। আমরা তাদেরকে বলেছি তাদের অফিসে ছুটির দরখাস্ত দিতে। যদি মালিক পক্ষ ছুটি মঞ্জুর না করে তাহলে আমরা বিষয়টি আমাদের জেলা প্রশাসক মহোদয়কে লিখিত আকারে জানাবো।
১৩ নং ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ১১ টি স্পটে বাঁশের বেড়া দিয়ে চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সেখানে দায়িত্বরত স্বেচ্ছাসেবক রবিন ও দিদারুল হক জানান, সকাল থেকে সাধারণ শুধু মাত্র ঔষধ ছাড়া আর কোন সমস্যা চোখে পড়েনি। সবার জন্য ঔষধের ব্যবস্থা করেছেন। ১৩ নং ওয়ার্ডের আরেকজন স্বেচ্ছাসেবক মিতুল জানান, ১৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দারা এখন লকডাউন দেখতে বের হন। যা নিয়ে আমরা স্বেচ্ছাসেবকরা বিব্রত। তাদেরকে বুঝিয়ে বলতে হয় যেন ঘরে থাকেন।
তবে ১৩ নং ওয়ার্ডের বসবাসরত ইপিজেড কর্মীদের জন্য সকালেই গেইট খুলে দিতে হয়। তাই শতভাগ লকডাউন সফল করা সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে ১৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাখাওয়াত উল্লাহ শিপন জানান, রবিবার থেকে বিভিন্ন পেশাজীবীদের জন্য একটা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। এদিকে নগরীর চারটি ওয়ার্ডে লকডাউন কার্যকর করতে ওয়ার্ডের বিভিন্ন অংশে পুলিশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে।