মনোয়ার হোসেন রতন ।।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক নতুন বাস্তবতা
বর্তমান বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নিঃশব্দ পরিবর্তনের ঢেউ উঠছে — যার নাম জেনারেশন জেড (Generation Z)। তারা হলো সেই তরুণ জনগোষ্ঠী, যারা ডিজিটাল যুগে জন্মেছে, বেড়ে উঠেছে স্মার্টফোন, ইন্টারনেট ও অবাধ তথ্যপ্রবাহের সঙ্গে।
এই প্রজন্ম এখন আর কেবল ভবিষ্যতের অংশীদার নয়, বরং বর্তমান রাজনীতির গেমচেঞ্জার। আগামী নির্বাচনে তাদের ভোট হবে শুধু সংখ্যায় নয়, গুণে ও প্রভাবেও সবচেয়ে বড় নিয়ামক শক্তি।
এই প্রবন্ধে বিশ্লেষণ করা হবে কিভাবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় জেনারেশন জেড বড় ধরনের পরিবর্তনের হাওয়া নিয়ে আসছে, কেন তাদের নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নতুন করে ভাবতে হবে, এবং ভবিষ্যতের সম্ভাব্য রাজনৈতিক রূপরেখা কেমন হতে পারে।
জেনারেশন জেড কারা এবং কেন তারা গুরুত্বপূর্ণ?
জেনারেশন জেড বলতে মূলত ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্ম নেয়া নাগরিকদের বোঝায়, যাদের বয়স এখন ১৩ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে। তবে নির্বাচনের প্রেক্ষিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীরা, যারা আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ভোটার হিসেবে যুক্ত হচ্ছেন।
বাংলাদেশে এই বয়সসীমার ভেতরে থাকা নাগরিকদের সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি। এটি দেশের মোট ভোটারের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ।
অর্থাৎ, এই প্রজন্মের রায়ই নির্ধারণ করবে কারা ক্ষমতায় যাবে।
তরুণদের ভোট না দেওয়ার প্রবণতা ও তার মনস্তত্ত্ব
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৫৪% তরুণ ভোটার তাঁদের জীবনে কখনো ভোট দেননি।
তারা কেন ভোট দেন না?
তবে এই উদাসীনতা এখন ভাঙতে শুরু করেছে। বিশেষ করে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ঘটে যাওয়া “জুলাই বিপ্লব” তরুণদের নতুন করে রাজনীতির প্রতি আগ্রহী করে তোলে।
জুলাই বিপ্লব ২০২৪: রাজনীতিতে তরুণদের নতুন জাগরণ
২০২৪ সালের “জুলাই বিপ্লব” ছিল একটি যুগান্তকারী ছাত্র ও যুব আন্দোলন — যা শুরু হয়েছিল কোটা সংস্কার ও চাকরিতে স্বচ্ছ নিয়োগ দাবির মাধ্যমে, কিন্তু দ্রুতই তা রূপ নেয় রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সংস্কারের দাবিতে।
এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন মূলত Gen Z ছাত্র-ছাত্রী, চাকরিপ্রত্যাশী ও সামাজিক মিডিয়ার অ্যাক্টিভিস্টরা।
তাদের কিছু বৈশিষ্ট্য:
এই প্রজন্ম কেবল প্রতিবাদী নয়, তারা নেতৃত্ব দিতেও প্রস্তুত।
সোশ্যাল মিডিয়া: নতুন রাজনীতির মঞ্চ
Gen Z রাজনীতি করে ফেসবুক পোস্টে, ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে, টুইটার থ্রেডে এবং ইউটিউব লাইভে।
তাদের রাজনীতির ভাষা হচ্ছে:
Gen Z মানে "রিয়েল টাইম রাজনীতি" — ধরা পড়লে পরদিনই ট্রেন্ডিং লিস্টে।
তারা কেবল না বলে না — তারা হ্যাঁ বলার পথও দেখায়
এই প্রজন্মের অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো, তারা শুধু সমস্যা চিহ্নিত করে না, সমাধানের দিকও দেখায়।
তাদের চাওয়া:
তারা চায়, “উন্নয়ন হোক জনগণের; শুধু পরিসংখ্যানে নয়, বাস্তবে।”
রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য সতর্ক সংকেত
রাজনৈতিক দলগুলো যদি এই নতুন ভোটার শ্রেণিকে উপেক্ষা করে, তাহলে তারা আগামী নির্বাচনে মারাত্মক বিপদের মুখোমুখি হতে পারে। কারণ:
অতএব, রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের সঙ্গে সরাসরি সংলাপে আসতে হবে, প্রতিশ্রুতি নয় — বাস্তব কাজ দেখাতে হবে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে জেনারেশন জেড এখন আর দর্শক নয় — তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী। তারা এমন এক প্রজন্ম, যারা ভোটাধিকারকে ব্যক্তিগত অস্ত্র হিসেবে দেখছে, সমাজ পরিবর্তনের জন্য।
তাদের ভোটে হবে পরিবর্তন, তাদের মুখে হবে প্রতিবাদ, তাদের চেতনায় গড়ে উঠবে আগামী দিনের বাংলাদেশ। রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এখন সময় এসেছে এই প্রজন্মকে “টার্গেট গ্রুপ” নয়, বরং “সহযোদ্ধা” হিসেবে দেখার।
তথ্যসূত্র (সংক্ষেপে)
প্রবন্ধের মূল বক্তব্য হলো — জেনারেশন জেড বাংলাদেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ নয়, বরং বর্তমানের রূপকার। তাদের ভোট, মত, ও আন্দোলন আগামী নির্বাচনে শুধু রায় দেবে না, নতুন রাজনৈতিক ভাষ্য রচনাও করবে।
মোবাইল: ০১৭১৭-৯১০৭৭৭
ইমেইল: newsamod@gmailcom
www.amodbd.com