ভোরেও কুমিল্লা কর্মসংস্থান কার্যালয়ে ভিড়

 

তৈয়বুর রহমান সোহেল।।
তখনও ভোরের আলো ফুটেনি। বৈদ্যুতিক বাতির উপরই ভরসা। সেই আলো-আঁধারির ভোরে কুমিল্লার জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সামনে বিদেশগামীদের ভিড় দেখা গেছে। তারা এসেছেন বিভিন্ন উপজেলা থেকে। গণ পরিবহন বন্ধ। কেউ হোটেলে কেউ স্বজনের বাড়িতে উঠেছেন। বাড়ি ফেরা নিয়ে রয়েছেন দুশ্চিন্তায়।

কুমিল্লা জেলা জনশক্তি ও কর্মসংস্থান কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সারা দেশে এক সপ্তাহের লকডাউন শুরু হলেও বিদেশগামী ও বিদেশ ফেরত যাত্রীরা এর আওতামুক্ত থাকবে। এতে বিদেশগামী যাত্রীদের ফিঙ্গার প্রিন্ট ও রেজিস্ট্রেশনসহ অফিস সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম চালু রাখতে হচ্ছে। সাধারণ পার্সপোর্ট যাদের আছে, তাদের ক্ষেত্রে কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিদেশগামীরা, ই-পাসপোর্ট যাদের আছে, তাদের ক্ষেত্রে কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনীর প্রবাসীরা কুমিল্লা আঞ্চলিক কার্যালয়ে সেবা গ্রহণ করেন।

কার্যালয় সূত্রে আরও জানা যায়, খুব দ্রুত কাজ করলেও প্রতিদিন গড়ে ৫শ মানুষকে সেবা দেওয়া যায়। কিন্তু এখানে প্রতিদিন ৭০০ থেকে ১২০০জন বিদেশগামী এ কার্যালয় থেকে সেবাগ্রহণের জন্য ভিড় করেন। এতে ভোররাত ৪টা বা কখনো তার আগে থেকেই বিদেশগামীরা এসে জড়ো হন। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বাড়তে থাকে অপেক্ষমাণদের সারি। তবু ভিড় কমে না।

০৫এপ্রিল ভোরে কুমিল্লা জেলা জনশক্তি ও কর্মসংস্থান কার্যালেয় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় দীর্ঘ সারি। এদিকে সোমবার থেকে সারাদেশে শুরু হয়েছে লকডাউন। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে গণপরিবহনও। এ কার্যালয়ে সেবা গ্রহণ করতে আসা ব্যক্তিদের কেউ কেউ দুই-তিনদিন ধরে কুমিল্লা অবস্থান করছেন। সেবাগ্রহীতা বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, ফিঙ্গার প্রিন্ট ও রেজিস্ট্রেশনের কাজ শেষ হলেও বাড়ি ফেরা নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তা রয়েছে। অনেক লুকোচুরি করে গ্রামে গেলেও বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে তাদের। চারগুণ পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া লেগে যেতে পারে তাদের। আছে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও পুলিশের জেরার ভীতিও।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার আফসার উদ্দিন যাবেন সৌদি আরব। ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে এসেছেন রোববার সকালে। ওইদিন কাজ শেষ না করতে পেরে সোমবার ভোর রাত ৪টা থেকে অবস্থান করছেন কুমিল্লা জেলা জনশক্তি ও কর্মসংস্থান কার্যালয়ে। তিনি জানান,‘আজ কাজ শেষ করতে পারলে বাড়ি যাবার চেষ্টা করবো। কোনো বাধার সম্মুখীন হলে পুরো সপ্তাহ কুমিল্লায় থেকে যেতে হবে।’

একই ধরনের কথা বলেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার লিটন মিয়া। তিনি যাবেন দুবাই। লিটন মিয়া বলেন,‘ আজ অফিস খোলা থাকবে, তা আগে থেকেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। না হয় আসতাম না।’

কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার ফখরুল ইসলাম জানান,‘ দেশে দীর্ঘদিন বেকার অবস্থায় আছি। সৌদি আরব যাবো। বাঁচার তাগিদে এখন বিদেশ যাওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।’

সচেতন নাগরিক কমিটি কুমিল্লার সভাপতি বদরুল হুদা জেনু জানান,‘ সরকার জরুরি প্রয়োজনেই দেশে লকডাউন দিয়েছে। লকডাউন মেনে চলার বিকল্প নেই। কিন্তু এসময়ে দূর-দূরান্ত থেকে স্ব-শরীরে কোনো কার্যালয়ে এসে কাজ করতে দেওয়া দ্বি-চারিতার শামিল। আমাদের ইউনিয়ন পরিষদগুলোর সক্ষমতা আছে ফিঙ্গার প্রিন্ট নেওয়ার, কিন্তু তারা তা করছে না। এতে বিদেশগামীরা বাধ্য হয়ে এখানে ভিড় করছেন।’
কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবুল হাসনাত বাবুলের বাড়ি কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও জেলা জনশক্তি ও কর্মসংস্থান কার্যালয়ের পাশেই। তিনি বলেন,‘প্রচণ্ড ভিড় থাকে এ কার্যালয়ে। লকডাউন সরকারের ভালো সিদ্ধান্ত। আগে প্রাণ বাঁচুক। এক সপ্তাহ পর কেউ কাজ করলে খুব একটা সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এখন অফিস যদি খোলা থাকে, সেবাগ্রহীতারা আসবেই। ঝুঁকি রেখে লকডাউন দিয়ে কি লাভ?’

এ বিষয়ে জেলা জনশক্তি ও কর্মসংস্থান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক দেবব্রত ঘোষ জানান,‘ গত লকডাউনে বিদেশগামীদের সেবা বন্ধ রাখাতে বেশ চাপে পড়ে যেতে হয় আমাদের। এবার আবার সেবা বন্ধ রাখলে আরও মারাত্মক চাপের মুখে পড়তে হবে। এমনিতেই আমরা রাত-দিন পরিশ্রম করছি। তার ওপর শুক্র-শনিবারেও মাঝেমাঝে অফিস খোলা রাখছি। সেবা বন্ধ রাখলে পরে সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। তাই হয়তো সরকার সেবা কার্যক্রম চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’