ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক
আবদুল্লাহ আল মারুফ ।।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সারাদেশের যোগাযোগের একমাত্র মহাসড়ক এটি। আমদানি-রপ্তানি পণ্য আনা নেওয়ার সময় প্রায়ই গায়েব হয়ে যেতো। চালকরা বলতো ছিনতাই হয়েছে। নিরুপায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দীর্ঘমেয়াদী অভিযানে কখনও সফলভাবে সেগুলো উদ্ধার করা যেতো, আবার কখনও হদিস পাওয়া যেতো না। প্রশ্ন উঠতো নিরাপত্তা নিয়ে। এছাড়াও সার্বক্ষণিক নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন কারণে এবার নজরদারিতে আসছে মহাসড়কটি। মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত বসানো হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন (এআই) সিসি ক্যামেরা।
এডিবির এই প্রকল্পের পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের জুনে ‘হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ক্যামেরা বসানোর কাজ শুরু হয়। যা ২০২৩ সালের জুনের শেষ হওয়ার কথা ছিল। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে এই প্রকল্পে ১৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ২৫০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন (এআই) সিসি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। ক্যামেরাগুলো চীনের হুয়াং প্রতিষ্ঠানের তৈরি। নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড থেকে চট্টগ্রামের সিটিগেট পর্যন্ত মহাসড়ক দুইটি রিজিয়নের বিভক্ত। প্রাথমিকভাবে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো হাইওয়ে কুমিল্লা রিজিয়নের দাউদকান্দি থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত এবং গাজীপুর রিজিয়নের দাউদকান্দি থেকে নারায়ণগঞ্জ সাইনবোর্ড পর্যন্ত এসব সিসি ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে। ৪৯০টি পোলের (স্ট্যান্ড) মাধ্যমে বসছে এক হাজার ৪২৭টি অত্যাধুনিক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। এগুলো নিয়ন্ত্রণে মেঘনাঘাট, দাউদকান্দি, হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা রিজিয়ন ও চট্টগ্রামের সিটিগেট এলাকায় স্থাপন হয়েছে সাব সেন্টার। কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ থাকবে হাইওয়ে পুলিশ সদর দফতরে। ক্যামেরা, অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন ও বৈদ্যুতিক সংযোগ দেয়ার কাজ প্রায় শেষের দিকে। ১০০ টি ক্যামেরা বসানোর কাজ বাকি আছে।
কুমিল্লা থেকে ঢাকাগামী তিশা পরিবাহনের চালক রফিকুল ইসলাম, কাভার্ড ভ্যান চালক ইসমাঈল মোল্লা, মিনি পিকআপ চালক মনির হোসেন বলেন, অনেক চালক দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। এখন তাদের নজরে আনা হবে জেনে নিয়মমতো গাড়ি চালাবে। এছাড়াও অনেক সময় চালকের কোন দোষ থাকে না। তারপরেও মামলায় জড়িয়ে দেয়া হয়। এখন থেকে এমন ঘটনাও ঘটবে না।
এডিবির এই প্রকল্পের পরিচালক হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক বরকত উল্লাহ খান বলেন, আড়াইশ’ কিলোমিটারের নজর রাখতে এসব ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। আমরা কয়েক ধরনের ক্যামেরা লাগিয়েছি। যেমন বুলেট ক্যামেরা, পিটিজেট ক্যামেরা, লং ভিশন ক্যামেরা ও চেক পয়েন্ট ক্যামেরা। এর মধ্যে লং ভিশন ক্যামেরা গুলো লাগানো হয়েছে মহাসড়ক লাগোয়া উঁচু ভবনের ওপর। যাতে কয়েক কিলোমিটার অনায়াসে এই ক্যামেরা রেকর্ড করতে সক্ষম। এছাড়াও চেক পয়েন্ট ক্যামেরা লাগানো হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। এই ক্যামেরা গুলো গাড়ির নাম্বার আইডেন্টিফাই, ওভার স্পিডও শনাক্ত করতে পারবে। এমনকি বিভিন্ন কালারের গাড়িকেও আলাদাভাবে সিলেক্ট করে তা প্রদর্শন করতে সক্ষম।
এসব ক্যামেরা মামলা দিতে পারবে কিনা এমন প্রশ্নে এই কর্মকর্তা বলেন, মূলত অনিয়ম, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, দুর্ঘটনার কারণ, অতিরিক্ত গতি, মহাসড়কে নাশকতা ও মহাসড়কের অপরাধ পরিদর্শনের জন্য লাগানো হয়েছে। যেহেতু এটি একটি সেন্ট্রাল অ্যাপসের মাধ্যমে পরিচালিত তাই একে বিভিন্ন কাজে লাগানো সম্ভব। যেমন অনিয়ম দেখে গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা দেয়া। তবে সয়ংক্রিয়ভাবে মামলার এই পদ্ধতি এখনও চালু করা হয়নি। বিআরটিএ'র সঙ্গে আলোচনা চলছে. তা পরবর্তীতে চালু করা হবে।
এসব সিসি ক্যামেরার সফলতা সম্পর্কে বরকত উল্লাহ খান বলেন, আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে সবটা চালু করতে পারিনি। এখনও ১০০টির মতো ক্যামেরা লাগানো বাকি আছে। তবে আমরা জুনের আগেই সকল কাজ সম্পূর্ণ করতে পারবো। এর মাঝেই আমাদের এই ক্যামেরা সফলতা দেখিয়েছে। কুমিল্লার একটিসহ মোট পাঁচটি ঘটনার আসামি ধরা হয়েছে এই ক্যামেরা দেখে। এছাড়াও গাড়ির স্পিড নিয়ন্ত্রণ, দুর্ঘটনার ভিডিও ধারণ অসম্ভব সফলতা দেখিয়েছে এসব ক্যামেরা।
হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা রিজিওনের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মো. খাইরুল আলম বলেন, এসব সিসি ক্যামেরা হাইওয়ে পুলিশের তত্ত্বাবধানে লাগানো হচ্ছে। আগে দেখা যেতো রাস্তারপাশে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি গুলো পড়ে থাকতো। কারা দুর্ঘটনা ঘটালো। এরজন্য দায়ী কারা তা বের করতে সময় লাগতো। বিশেষ করে হরতাল অবরোধের নামে নাশকতা করলে তাও শনাক্ত করতে সময় লাগতো। সিসি ক্যামেরা গুলো পুরোপুরি নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে বদলে দিয়েছে। এখন দ্রুততম সময়ে তা নির্ণয় করা যাবে। দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান সহজ হবে। এছাড়া চালকরাও সতর্ক হয়ে গাড়ি চালাবেন। এছাড়াও চুরি ছিনতাই হলে তা মহাসড়কে উঠতেই হবে। মহাসড়কে উঠলেই খুঁজে বের করা সহজ হবে। বিশেষ করে এই মহাসড়কের রপ্তানি পণ্যের নিরাপত্তায় এসব ক্যামেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
কুমিল্লা বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক আবদুল মান্নান বলেন, এসব ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা থেকে সুফল পাওয়া শুরু হলে চলাচল করা গাড়ি ও যাত্রীদের নিরাপত্তা ছাড়াও দুর্ঘটনা ও অপরাধ দমন সম্ভব হবে। এছাড়াও আমাদেরও কোন গাড়ির সম্পর্কে তথ্য নিতে সহজ হবে। সর্বোপুরি এটি দেশের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। বিশেষ করে সাধারণ জনগনের নিরাপত্তায়।
মোবাইল: ০১৭১৭-৯১০৭৭৭
ইমেইল: newsamod@gmailcom
www.amodbd.com