মহিউদ্দিন মোল্লা ।।
মা, স্ত্রী-সন্তান। পরিবারে ৫ সদস্য। তিন বছর আগে আরেকজন নতুন সদস্য যোগ হয়। তবে তিনি মানুষ নন। শঙ্খ চিল। গত ৬টি ঈদ তার কেটেছে ওই পরিবারের সাথে। ২০২১সালের ঈদ-উল ফিতরের দিন এই পরিবারে আসে পাখিটি। তাদের সাথে থাকে খায়। কয়েকদিন আগে পাখিটি হারিয়ে যায়। পাখিটির দেখাশোনা করতেন কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার আদমপুর গ্রামের মতিন সৈকত। এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে মতিন সৈকতের মা শাহানারা বেগমও পরপারে চলে যান। দুই স্বজন হারিয়ে ব্যথিত মতিন সৈকত। তাদের হারিয়ে তার আগামী ঈদও নিরানন্দে কাটবে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন,পাশের কুশিয়ারা গ্রামের কিশোর রাসেল। সে পাখিটিকে এই বাড়িতে এনে রেখে যায়। তার ধারণা, অন্যত্র রেখে দিলে শিশুরা তাকে খেলনা বানিয়ে মেরে ফেলবে। তিনি পাখিটিকে প্রাণি সম্পদ অফিসে নিয়ে চিকিৎসা করান। তারপরেও তার একটি ডানা নষ্ট হয়ে যায়। সে উড়তে পারে না। ছোট শঙ্খ চিলের তিন বছরে ছানা বড় হয়ে যায়। পাখিটি উড়তে পারে না। এলাকায় এমন কোন প্রাণী নেই যে তাকে ধরে নিয়ে যাবে। তার ধারণা কোন মানুষ পাখিটি বাড়ির সামনে পেয়ে নিয়ে গেছে। সকালে বিকালে পাখিটিকে খাবার দিতেন। তাকে হারিয়ে তিনি স্বজন হারানোর বেদনা অনুভব করছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়,দাউদকান্দি উপজেলার আদমপুর, পুটিয়াসহ আশপাশের গ্রামে প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষ হচ্ছে। বাড়ি থেকে বের হলেই চোখে পড়ে মাছের খামারে ব্যবহার করা জালে কোনো পাখি বা গুইসাপ আটকা পড়েছে। মতিন সৈকত নেমে পড়েন সেটি উদ্ধার করতে। ২২ বছর ধরে তিনি এ কাজ করে আসছেন। এর মধ্যে ২০০০ পাখি উদ্ধারের পর অবমুক্ত করেন। এ ছাড়া বন বিড়াল, গুইসাপ, বেজি, শিয়ালসহ অনেক বন্যপ্রাণীকে অবমুক্ত করেছেন। মতিন সৈকত স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেন। এর পাশাপাশি তিনি মাছ চাষ ও নিরাপদ ফসল উৎপাদন নিয়ে কাজ করেন।
ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউশন কুমিল্লার ভাইস চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মীর ফজলে রাব্বী বলেন, প্রাণী,পাখি ও কৃষি প্রেমী মানুষ মতিন সৈকত। তার কাজ গুলো দেখার সুযোগ হয়েছে। সমাজ ও পরিবেশ দরদী মানুষের সংখ্যা দিন দিন কমছে। সেখানে মতিন সৈকত ব্যতিক্রম।
(ছবি: ইলিয়াস হোসাইন)
মোবাইল: ০১৭১৭-৯১০৭৭৭
ইমেইল: newsamod@gmailcom
www.amodbd.com