সানোয়ার হোসেন।।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে পূর্ব শত্রুতার জেরে বিদ্যুতের খুঁটির সাথে বেঁধে মায়ের সামনে ইমরান হোসেন (২১) নামের এক যুবককে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতনের একটি সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। নির্যাতিত যুবক উপজেলার কনকাপৈত ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের শাহ আলমের ছেলে। এই ঘটনায় নির্যাতিতের পরিবার স্থানীয় শহিদুর রেজা রতন মিয়াজীকে প্রধান আসামি করে ১৮ জনের বিরুদ্ধে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ইমরান একজন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। শুক্রবার রাতে স্থানীয় তারাশাইল বাজারের মোবাইল ব্যাংকিং দোকান থেকে টাকা উত্তোলন করে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে শহিদুর রেজা রতন মিয়াজীর নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী পথরোধ করে অস্ত্রের মুখে আটকে মারধর শুরু করে। এ সময় তার চিৎকারে মা আফরোজা বেগম এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা তাকেও অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। তার সামনে ইমরানকে মসজিদের পাশের বৈদ্যুতিক খুঁটির সাথে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে। সন্ত্রাসীরা চতুর্দিকে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেওয়াতে স্থানীয়রা এগিয়ে আসতে সাহস পায়নি। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত প্রায় ৯টা পর্যন্ত নির্যাতন চালানোর একপর্যায়ে ইমরান অচেতন হয়ে পড়েন। মৃত ভেবে সন্ত্রাসীরা তাকে রেখে পালিয়ে যায়। স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে ইমরানের অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে কুমিল্লা মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জাবেদ হোসেন বলেন, 'রাত ১২টার পর ইমরান হোসেনকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।'
ইমরানের মা আফরোজা বেগম বলেন, শহিদুর রেজা রতন মিয়াজী চিহিৃত সন্ত্রাসী। এলাকায় তার নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে। তার সামাজিক অপকর্মের বিরুদ্ধে আমার ছেলে প্রায় সময়ে প্রতিবাদ করতো। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আমার ছেলেকে হুমকি দিয়ে আসছিল। শুক্রবার সন্ধ্যার পরে বাড়ি ফেরার পথে সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মারধর শুরু করে। ছেলের চিৎকার শুনে আমি এগিয়ে গেলে তারা আমাকেও অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। এ সময়ে তারা মসজিদের সামনের বিদ্যুতের খুঁটির সাথে বেঁধে প্রায় ৩ ঘন্টা নির্যাতন করে মৃত ভেবে রেখে যায়।
ওই গ্রামের শিক্ষক মোঃ হাছান জানান,পূর্ব শত্রুতার জের ধরে মারধরের ঘটনা ঘটে। ইমরান আগে তিনজনকে মারধর করে। তিন চার মাস আগে শিমুল নামে একজনকে মারধর করে। ভুক্তভোগীরা মামলা করতে চেয়েও করতে পারেনি তখন। ঘটনার পর থেকে ইমরান আত্মগোপনে থাকতেন। ঘটনার সময় প্রধান অভিযুক্ত শহিদুর রেজা রতন মিয়াজী ঘটনাস্থলে ছিলেন না। তবে রতন মিয়াজী ওই পক্ষের প্রভাবশালী।
ঘটনায় অভিযুক্ত শহিদুর রেজা রতন মিয়াজী মোবাইল ফোনে জানান, তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না, মসজিদের সামনে গ-গোলের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন।
চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ জানান, 'ইমরান নামে এক যুবককে নির্যাতনের একটি ভিডিও চিত্র আমার নজরে এসেছে। অভিযুক্ত শহিদুর রেজা রতন মিয়াজীকে প্রধান আসামি করে ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে ১৮ জনের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীর পরিবার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে।'
মোবাইল: ০১৭১৭-৯১০৭৭৭
ইমেইল: newsamod@gmailcom
www.amodbd.com