প্রিন্ট এর তারিখঃ জুন ২০, ২০২৫, ১০:০৮ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুন ২০, ২০২৫, ১:০৮ অপরাহ্ণ

মনোয়ার হোসেন রতন।।
সম্প্রতি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি এক বিস্ফোরক বার্তা উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন—'তোমরা জানতে চাও আমরা কারা? তাহলে কারবালার ইতিহাস পড়ুন!' এই একটি মাত্র বাক্য যেন হয়ে উঠেছে ইতিহাস, দর্শন এবং প্রতিরোধ চেতনার সম্মিলিত কণ্ঠস্বর। এটি কেবল কূটনৈতিক বা সামরিক প্রতিক্রিয়া নয়—বরং আদর্শ, আত্মপরিচয় এবং ন্যায়ের পথে দাঁড়ানো এক অঘোষিত ঘোষণাপত্র।
কারবালার ইতিহাস: আত্মপরিচয়ের আয়না:
কারবালা কেবল একটা সংঘর্ষ নয়; এটি ছিল এক মহৎ আত্মত্যাগের অধ্যায়। হিজরি ৬১ সালের ১০ মহররম, মহানবী (সা.)-এর দৌহিত্র ইমাম হুসাইন (আ.) ও তাঁর ৭২ জন সঙ্গী ইয়াজিদের অন্যায় ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে শহীদ হন। তাঁদের আত্মত্যাগ ছিল নিপীড়কের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের এক চূড়ান্ত নিদর্শন। ইমাম হুসাইন ঘোষণা করেছিলেন—'আমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চাই। আমি দাদার উম্মাহর সংস্কার চাই।' এ উচ্চারণ ছিল একটি আদর্শিক বিপ্লবের সূচনা, যা চিরকাল সত্য-ন্যায়ের পক্ষে দৃঢ়তা ও আত্মোৎসর্গের প্রতীক হয়ে আছে।
আমরা কারা?—এ প্রশ্নের উত্তর:
আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর বক্তব্যে 'আমরা কারা'—এর জবাব নিহিত আছে হুসাইনি চেতনায়। তিনি পরোক্ষভাবে বলতেচেয়েছেন—আমরা সেই জাতি, যারা অন্যায়ের কাছে মাথা নত করি না।আমরা ন্যায়ের জন্য জীবন দিতেও পিছপা হই না।
আমাদের রক্তে আছে প্রতিরোধের উত্তরাধিকার। আমরা হুসাইনি দর্শনের উত্তরসূরি, ইয়াজিদি শাসনের নয়। এই বক্তব্যে ইরান কেবল নিজেদের অবস্থানই জানান দেয়নি; বরং পৃথিবীর সকল নিপীড়িত জনগণের পক্ষেও এক চেতনার আলো জ্বালিয়েছে।
বর্তমান বিশ্ব ও কারবালার প্রতিধ্বনি আজকের বাস্তবতা—ফিলিস্তিনে গণহত্যা,
ইরাক-সিরিয়া-ইয়েমেন-আফগানিস্তানে সাম্রাজ্যবাদী হস্তক্ষেপ, বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ ছড়ানোর কৌশল—এ সবই এক প্রকার আধুনিক ইয়াজিদি দর্শনের প্রতিফলন। এর বিপরীতে যারা প্রতিরোধ গড়ে তুলছে, তারা হুসাইনি দর্শনের উত্তরাধিকার বহন করছে।
কারবালার ইতিহাস আজ আর শুধু অতীত নয়, বরং বর্তমান প্রতিরোধের মানচিত্রও।
কেন আমেরিকাকে 'কারবালা পড়তে' বলা হলো? কারণ, পশ্চিমা পরাশক্তি আত্মত্যাগকে দেখে চরমপন্থা হিসেবে, আর প্রতিরোধকে সন্ত্রাস হিসেবে। অথচ কারবালা শেখায়—প্রতিরোধ কোনো অপরাধ নয়, বরং নৈতিক দায়িত্ব, আত্মত্যাগ দুর্বলতার নয়, বরং সাহসিকতার প্রতীক ক্ষমতার দম্ভে নয়, আদর্শের দৃঢ়তায় গড়ে ওঠে ইতিহাস,
খামেনীর এই আহ্বান তাই কেবল যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমা জগৎকে নয়, গোটা মানবতাকে স্মরণ করিয়ে দেয়—ন্যায় কখনো নিঃশব্দ থাকে না, প্রতিরোধ কখনো নিঃশেষ হয় না।
আয়াতুল্লাহ খামেনির 'আমরা কারা জানতে চাইলে কারবালার ইতিহাস পড়ুন'—এই বাক্যটি কেবল একটি রাজনৈতিক বার্তা নয়। এটি এক আদর্শিক আহ্বান, যা প্রতিটি নির্যাতিত, সংগ্রামী, ও ন্যায়ের পক্ষে থাকা মানুষের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।
কারবালা শুধুই মুসলিম ইতিহাসের অংশ নয়, এটি প্রতিরোধরত নির্যাতিত নিপীড়িত সকল জাতির চেতনার মশাল। এমন এক সময়ে, যখন 'শান্তি' শব্দটিও রাজনীতি হয়ে গেছে, খামেনীর কণ্ঠে উচ্চারিত 'কারবালা পড়ো'
—বাক্যটি যেন বিশ্বমানবতার হৃদয়ে আবারও একবার জ্বালিয়ে দিল প্রতিরোধের আগুন।