যে কারণে এক দশক অস্থিতিশীল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

সাবেক দুই ভিসিও তাহের-মেহেদীর রোষানলে পড়েন


অফিস রিপোর্টার।।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর মো. আবু তাহের ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসানের কারণে গত দশ বছর ধরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়(কুবি) অস্থিতিশীল রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উপাচার্য তাদের পছন্দমতো কাজ না করলে রোষানলে পড়েন। কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক দুই ভিসি চাকরির মেয়াদ শেষ হবার আগে একরকম অবরুদ্ধ অবস্থায় দিন পার করেন সমিতির এই নেতাদের কারণে। সম্প্রতি বর্তমান ভিসি ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বিশ^বিদ্যালয়ের অনিয়ম-দুর্নীতি, শিক্ষক-কর্মচারীদের স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ করতে গিয়ে আবারও তাদের রোষানলে পড়েন। এসব কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চরম ক্ষুব্ধ।
অফিসার্স সমিতির সদস্যদের সাথে দুর্বব্যবহার:
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) কর্মকর্তাদের লাঞ্ছিতের অভিযোগ ওঠে শিক্ষক নেতাদের বিরুদ্ধে। এনিয়ে ডেপুটি রেজিস্ট্রার এবং অফিসার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ জাকির হোসেন সাতজন শিক্ষকের নামসহ কুমিল্লার সদর দক্ষিণ মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি(জিডি) করেন।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকেলে উপাচার্য মহোদয়ের কক্ষে দাপ্তরিক কাজে গেলে ভিতরে অবস্থান করা বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ রাজু, ফার্মেসি বিভাগের প্রভাষক মো.কামরুল হাসান, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন, বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. মোকাদ্দেস-উল-ইসলাম, পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক মো. আবু তাহের, মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মেহেদী হাসান ও আইসিটি বিভাগের প্রভাষক আলীমুল রাজীসহ আরো ১৫-২০ জন অফিসারদের এখানে কেন এসেছো বলে গালাগালি ও শারীরিকভাবে নাজেহাল করে। উপাচার্য মহোদয়ের কক্ষে বিকট শব্দ ও হট্টগোল শুনে অন্যান্য অফিসাররা ভিসি স্যারের রুমের সামনে আসেন। শিক্ষকরা তাদের সাথেও খারাপ আচরণ করেন। শিক্ষকরা আমাদেরকে চাকরি কীভাবে করি, বাইরে বের হলে দেখে নিবেন বলে প্রাণনাশের হুমকি দেন। ২১ফেব্রুয়ারি করা জিডিতে তিনি আরো উল্লেখ করেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত অফিসাররা আমাদের চাকরি ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত ।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. আবু তাহের বলেন,আমরা তাদের সাথে কোনো খারাপ আচরণ করিনি। তাদের এসব অভিযোগ মিথ্যা। উল্টো তারা খারাপ আচরণ করেছে।
আগে ফুল দেওয়া নিয়ে হট্টগোল:
মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রথম প্রহরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শহীদ মিনারে ফুল দেয়া নিয়ে হট্টগোল করেছেন শিক্ষক নেতারা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি ড. এ এফ এম আবদুল মঈন। এরপর শিক্ষক সমিতি, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, ছাত্রলীগ, কর্মকর্তা সমিতি ও কর্মচারী সমিতি ফুল দেয়। এরপর কোটবাড়ি পুলিশ ফাঁড়িকে ফুল দেয়ার অনুরোধ জানান উপস্থাপক। এতেই হট্টগোল বাঁধান শিক্ষক সমিতির নেতারা। হট্টগোলের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, শিক্ষক সমিতির নেতারা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তারা জানতে চান, হলের ছাত্ররা আগে ফুল না দিয়ে কেন পুলিশকে সুযোগ দেওয়া হলো? এ ঘটনায় উত্তেজিত শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. আবু তাহের অনুষ্ঠানের আয়োজক কমিটির আহ্বায়ককে ক্ষমা চাইতে বলেন। সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসানকেও আঙ্গুল নাড়িয়ে উত্তেজিত হয়ে কথা বলতে দেখা যায়। উত্তেজিত দেখা যায় সমিতির সহসভাপতি কাজী মো. কামাল উদ্দিনকেও।
অনুষ্ঠান আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ড. মিজানুর রহমান বলেন, পুলিশ সবসময় ডিউটিতে থাকেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বও পালন করেন, তাই তাদেরকে এক ফাঁকে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোথায়ও এমন কিছু লেখা নেই যে পুলিশ আগে ফুল দিতে পারবে না।
নিয়োগ পরীক্ষা ভণ্ডুল:
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান গত ৬ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মইনকে সকলের সামনে খারাপ ভাষায় কটাক্ষের পর পদত্যাগ করতে বলেন। এর আগে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় বাধা দেন।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি নির্বাচিত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করে একটি সাধারণ ডায়েরি, একটি সংবাদ সম্মেলন, একটি মৌন মানববন্ধন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর ৬টি আবেদন ও একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। সর্বশেষ ৬ মার্চ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বাধার মুখে বন্ধ হয়েছে গেছে ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের লিখিত নিয়োগ পরীক্ষা। নিয়োগ পরীক্ষা ভণ্ডুলের পর উপাচার্য দপ্তর থেকে বের হলে শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ তাকে ঘিরে ধরে। পরবর্তীতে শিক্ষক নেতা ও উপাচার্যের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। এ সময় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান উপাচার্যকে পদত্যাগ করতে বলেন। এর আগে ১৯ ফেব্রুয়ারি কুবি শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে জয়ের পরই ওইদিন বিকালে উপাচার্যকে ঘেরাও করে বাগ্বিত-ায় জড়িয়ে পড়েন তারা।
এর আগেও সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মো. আলী আশরাফের সময়ে ২০১৭ সালের ১০ মার্চ অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৫তম সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি হিসেবে সিন্ডিকেট সভায় যোগ দিতে আসেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান। এ সময় সিন্ডিকেট অনুষ্ঠানস্থল ভিসি বাংলোর মূলফটকে গাড়িসহ প্রবেশে চেয়ারম্যানকে বাধা দেয় এবং তার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণে জড়িত ছিলেন তিনি। এতে তৎকালীন শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আবু তাহের, সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসানসহ তৎকালীন শিক্ষক সমিতির আরো সাত সদস্যকে ইউজিসির চিঠির প্রেক্ষিতে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়।
একই বছরের শেষে উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়ম এনে ইউজিসি বরাবর চিঠি দেয় তৎকালীন শিক্ষক সমিতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম, দুর্নীতির বিচারসহ ১৪ দফা দাবিতে ১৫ অক্টোবর উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দেয় শিক্ষক সমিতি। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে উপাচার্য ওই দাবি পূরণ করেননি অভিযোগ এনে পরদিনই (১৬ অক্টোবর) উপাচার্যের দপ্তরে তালা দেন তারা। প্রায় ৩ সপ্তাহ উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ে না আসায় অস্থিতিশীলতা শুরু হয় একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজে। এছাড়া একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ও একটি সিমেন্ট কোম্পানিতে কাজ করার ঘটনাও রয়েছে তার কর্মজীবনে। বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সিমেন্ট কোম্পানি থেকে আয়ের এক চতুর্থাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগারে জমা দেয়ার কথা বললেও এখন পর্যন্ত তিনি জমা দেননি।
সর্বশেষ ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপ নিয়ে অস্ট্রেলিয়া গিয়ে এক বছরে নির্ধারিত সংখ্যক কোর্স শেষ করতে না পারায় বাতিল করা হয় মেহেদী হাসানের ফেলোশিপ। সম্প্রতি বিষয়টি গণমাধ্যমে আসলে জানা যায়, তিনি দেড় বছরের মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য প্রথমে ২ বছরের ছুটি ভোগ করেন। পরবর্তীতে বিনা বেতনে এক বছরের ছুটি ভোগ করেন। সর্বশেষ ১০ মাস ২৬ দিনের অসাধারণ ছুটি কাটান তিনি। পরবর্তীতে তিনি আরো ছুটি চাইলে কুবির সিন্ডিকেট সভায় তা নাকচ হয়। এরপর থেকেই ছুটি ভাগিয়ে নিতে উঠেপড়ে লাগেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, শিক্ষক সমিতিকে বারবার উপাচার্য পতনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয় সাধারণ শিক্ষকদের সেন্টিমেন্ট নিয়ে। এবারও ব্যতিক্রম নয়। নানা কাজে বিতর্কিতরা এবার সবাই এক ছাদের নিচে এসেছে। মেহেদী হাসানকে যদি ছুটি দিয়ে দেয়া হয় তিনি আর শিক্ষক সমিতি নিয়র ভাববেন না। তখন আর আন্দোলন, সংগ্রাম হবে না। সবাই সবার ব্যক্তিস্বার্থ উদ্বারের জন্য এক হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের এক শিক্ষক জানান, উপাচার্য থেকে অযাচিত ছুটি বাগিয়ে নিতে না পারায় এখন কিছু শিক্ষকদের সাথে একত্রিত হয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছেন তিনি।
শিক্ষক সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ:
২০১১ সালে ৪৯ লাখ ৬৯ হাজার টাকা ব্যয়ে ৮ দশমিক ৪ কিলোওয়াটের একটি সোলার প্যানেল স্থাপন প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন তৎকালীন রেজিস্ট্রার ড. তাহের। ওই বছরই সোলার প্যানেলটি অকেজো হয়ে পড়লেও ড. আবু তাহের তাদের দিয়ে তা মেরামত না করিয়ে বাকি অর্থ দিয়ে দেন। তখনই বাংলাদেশ অল্টারনেটিভ এনার্জি সিস্টেম লিমিটেড নামে নিম্নমানের একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়ে এ প্রকল্পের সিংহভাগ টাকা আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ ওঠে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সরেজমিন অভিযানেও প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে বলে ২০২৩ সালে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছিলেন দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মদ আরিফ সাদেক।
এছাড়াও ২০২২ সালের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে ১১ মার্চ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হেডকোয়ার্টারে সেনাবাহিনীর পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ আলী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে স্বাক্ষর করেছিলেন রেজিস্ট্রার ড. মো. আবু তাহের। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করার কথা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামানের। কিন্তু দুর্নীতি করার সুবিধার্থে কোষাধ্যক্ষকে এই প্রকল্পের বাইরে রাখার অংশ হিসেবে রেজিস্ট্রার নিজেই আইনবহির্ভূতভাবে এ স্বাক্ষর করেন বলে তখন অভিযোগ করছিলেন সংশ্লিষ্টরা।
বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তা জানান, প্রায় এক হাজার ৭০০ কোটি টাকার এই প্রকল্পকে ঘিরে রেজিস্ট্রার ড. মো. আবু তাহের দুর্নীতির সুবিধার্থে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কাজে নিজের গ্রুপের ঘনিষ্ঠ লোকজনকে যুক্ত করেন। এর অংশ হিসেবেই সেনাবাহিনীর সাথে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে বেআইনিভাবে স্বাক্ষর করেছিলেন তৎকালীন রেজিস্ট্রার। এছাড়া রেজিস্ট্রার থাকাকালীন অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দেয়ার ঘটনা সামনে আসে। এছাড়া পছন্দের কর্মকর্তা-কর্মচারী, নিজ কোরামের শিক্ষকদের পদোন্নতি দ্রুত দিলেও অপছন্দের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতিতে গড়িমসি করতেন। এছাড়াও ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষে বর্তমান রেজিস্ট্রার ড. আবু তাহের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ইউনিট কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। সে বছর এ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয় বলে অভিযোগ উঠেছিল।
 শিক্ষকদের মতামত:
এ বিষয়ে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. স্বপন চন্দ্র মজুমদার বলেন, অধ্যাপক ড. আবু তাহের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার পদে ছিলেন। কিন্তু সে সময় তিনি তো শিক্ষকদের স্বার্থ বিরোধী কাজেই লিপ্ত ছিলেন। এখন নিজের স্বার্থে আঘাত লাগায় সাধারণ শিক্ষকদের সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগিয়ে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে। শিক্ষক সমিতির নবগঠিত এই কমিটির অনেকেই বিতর্কিত। তাদের বিতর্ক ঢাকতে, উপাচার্যকে চাপ দেয়ার জন্য তারা ব্যক্তি স্বার্থে শিক্ষক সমিতিকে ব্যবহার করেছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. রশিদুল ইসলাম শেখ বলেন, কোনো বিষয় থাকলে, কেউ সংক্ষুব্ধ থাকলে সেটা বসে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে আন্দোলন আমরা সমর্থন করি না। মাননীয় রাষ্ট্রপতি ওনাকে নিয়োগ দিয়েছে। উনি মাননীয় রাষ্ট্রপ্রতির কাছে দায়বদ্ধ। কারো কথায় বা আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে হবে, এমন সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার জন্য এবং বাংলাদেশ সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য একটি চক্র এক সাথে হয়ে উঠেপড়ে লাগছে। প্রতি উপাচার্যের সময়ই তারা একই রকম আচরণ করে। আমরা বঙ্গবন্ধু পরিষদ বর্তমান প্রশাসনের মাননীয় উপাচার্যের সাথে আছি। উনি সততার সাথে উনার দ্বায়িত্ব পালন করছেন।
শিক্ষক সমিতির মতামত:
এ বিষয়ে সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান দেশের বাইরে থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তিনি বিভিন্ন গণমাধ্যমকে বলেন, সে সময় ওই উপাচার্য যেসব ভবনগুলো প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনায় শুরু করেছিলেন তা তো ৬-৭ বছরেও হস্তান্তর হচ্ছে না। তখন সেগুলো নিয়েই তো কথা বলেছিলাম। এদিকে ওইদিন (৬ মার্চ) উপাচার্য সবার সামনে শিক্ষকদের বলেন তারা রিসার্চ করতে পারেন না। এটা তো শিক্ষকদের জন্য চূড়ান্ত অপমান। এসব করলে তো দেশে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান ক্ষুণ্ন করছেন। আর ২০১৭ সালে ও এবারের কমিটিতে হতে পারে আমি ও তাহের স্যার কমিটিতে আছি, সেটা তো গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয়েছি। পূর্বের ঘটনা আর এবারের ঘটনা আলাদা বিষয়। আগেরবারও আমি আর তাহের স্যার ছিলাম এটা হতেই পারে।
এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড.আবু তাহের বলেন , বর্তমান উপাচার্য যোগদানের পর গত দুই বছরে সীমাহীন দুর্নীতি করেছেন। শিক্ষক নিয়োগ ও টেন্ডারের ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক আচরণ করছেন। গ্রেড-১ ও গ্রেড-২ তে পদোন্নতির জন্য করা শিক্ষকদের আবেদন ঝুলিয়ে রেখেছেন। আইন অমান্য করে ইচ্ছেমতো বিভাগীয় প্রধান ও ডিন নিয়োগ দিয়েছেন। প্রাধান্য দিয়েছেন পছন্দের লোকদের। নিজের স্বার্থে এতো দিন শিক্ষক সমিতিকে অকার্যকর করে রেখেছিলেন। তবে অধিকাংশ শিক্ষকদের মতামতের ভিত্তিতে সম্প্রতি শিক্ষক সমিতির নির্বাচন হয়। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে সেই কমিটির সদস্যদের ওপর হামলা করা হয়। অন্যদিকে ঢাকার গেস্ট হাউজের চাবি নিজের কাছে রেখে অন্য শিক্ষকদের ব্যবহার করার সুযোগ দেন না। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে যোগদান করলেও নিয়ম অনুযায়ী তিনি ইনক্রিমেন্ট সুবিধা পাবেন না। অথচ ঠিকই নিচ্ছেন।
উপাচার্যের মতামত:
সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন,আমি দায়িত্ব নেয়ার পর রেজিস্ট্রারসহ অন্যদের দুর্নীতিতে বাধা দিয়েছি। তাই তারা আমার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। বরং রেজিস্ট্রার শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি করেছেন। পদ ছাড়া ১২জন ও অ্যাডহক ভিত্তিতে তিনজন কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছেন। ডিন নিয়োগ দেয় সিন্ডিকেট,সেখানে আমাকে কেন দায়ী করা হচ্ছে?
গেস্ট হাউজের চাবি এস্টেট অফিস ও গেস্ট হাউজে আছে। সেখানে শিক্ষকরা থাকছেনও,আমার কাছে চাবি থাকার অভিযোগ সঠিক নয়। আমি একটি বিভাগের ডিন হলেও ভাতা নেই না। ইনক্রিমেন্ট অন্য শিক্ষকদেও মতো আমার বেতনের সাথেও চলে আসতে পারে। আমি খবর নিয়ে তা বাদ দেবো। আমি আসার পর নির্দিষ্ট কাজের সাথে অতিরিক্ত কাজ করে ইউজিসিতে ৩কোটি ১৪লাখ টাকা ফেরত দিয়েছি। কোন দুর্নীতির প্রমাণ দিতে পারলে আমি তার যথাযথ শাস্তি মাথা পেতে নেবো।
তিনি আরো বলেন,কারো যদি কোন ন্যায্য দাবি থাকে তাহলে আলোচনায় বসা যায় সমাধানের জন্য। শিক্ষকদের একটি মহল প্রতি উপাচার্যের সময় একই কাজ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। শিক্ষক সংকট দূর করার জন্য শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করা হলো কিন্তু তাদের বাধায় সেটা বন্ধ হয়েছে। তারা রাষ্ট্রীয় কাজে বাধা দিয়েছে। তাহলে তারা কি চায় শিক্ষার্থীরা ভুক্তভোগী হোক? এখানে সেশনজট লেগেই থাকুক? তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে আমার শিক্ষার্থীরাই বিচার করবে। আমি সব সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছি।