বেহাল সড়কে বাড়ছে উৎপাদন খরচ
মহিউদ্দিন মোল্লা।।
চারদিকে হাঁকডাক। দরদামে ব্যস্ত ক্রেতা বিক্রেতা। সমঝোতা হলে টাকা আদান প্রদান। বিক্রেতা আরো ৫০০টাকা বেশি দাবি করেন। কিন্তু ক্রেতা হাসি দিয়ে ছাড় চান। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা নৌকায় মাথায় তুলে পিকআপ ভ্যানে তুলে দেন। কেউ তুলে নেন রিকশা ভ্যানে। এ যেন নদীপথের নৌকার সড়ক বিলাস! এই দৃশ্য কুমিল্লা মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর বাজারের নৌকার হাটের। এখানে শত বছরের বেশি সময় ধরে নৌকার হাট বসে। জলপথ কমে গেলেও বাজারে এখনও ক্রেতা বিক্রেতারা বেচাবিক্রির উৎসবের ঢেউ তোলেন। বাজার সংলগ্ন সড়ক বেহাল হওয়ায় বাড়ছে উৎপাদন খরচ। সড়কটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
নৌকার ক্রেতাদের একজন কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার মীরপুর গ্রামের জহিরুল ইসলাম। তিনি ১১হাজার টাকা দিয়ে একটি নৌকা কিনেছেন। বুড়িচংয়ের দক্ষিণগ্রামের পদ্মবিলের দর্শনার্থীদের জন্য এই নৌকা কিনেছেন। আসা যাওয়া,শ্রমিক ও ইজারা মিলে তার ১৫হাজার টাকা খরচ পড়বে।
ক্রেতাদের আরেকজন মুরাদনগরের কালারাইয়া গ্রামের সামছু মিয়া। তিনি গরুর ঘাস কাটার জন্য নৌকা কিনেছেন। আরেকজন স্থানীয় জুনাব আলী। তিনিও নৌকা কিনেছেন গরুর ঘাস কাটতে। তিনি বলেন, আগে নদী ও খাল সচল ছিলো। বাজার করার জন্য কিংবা স্বজনের বাড়িতে যেতে নৌকা ব্যবহার হতো। তবে এখন মাছের খামাওে নৌকা বেশি ব্যবহার হয়।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়,রোদে যেন নৌকা শুকিয়ে না যায়, তাই বিক্রেতারা পানি ছিটিয়ে দিচ্ছেন। ক্রেতারা নৌকার কাঠে হাত দিয়ে আঘাত করে পরীক্ষা করে দেখছেন কাঠ কেমন? এই বাজারে পাশের খৈজুরি গ্রামের বিক্রেতাদের নৌকাই বেশি। সম্প্রতি পাশের হোমনা উপজেলার ডুমুরিয়া গ্রামের বিক্রেতারাও আসছেন। বাজারে শতাধিক নৌকা নিয়ে বিক্রির অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেল বিক্রেতাদের। বাজারে কোষা ও পাতাইল্লা কোষা দুই ধরণের নৌকা বিক্রি হয়। উড়িকাঠ কাঠের নৌকা ১০-১২হাজার এবং কড়িকাঠের নৌকা ৭-৮হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
খৈজুরি গ্রামের বিক্রেতা রিপন চন্দ্র সরকার ও স্বপন চন্দ্র সরকার বলেন, আমাদের গ্রামের অনেক পরিবার নৌকা তৈরি করেন। বর্ষায় বেশি তৈরি করা হয়। আমাদের গ্রামের রাস্তাটি ভালো নয়। যে কারণে আমাদের নৌকা দ্বিগুণ খরচ লাগে।
ডুমুরিয়া গ্রামের গোপাল চন্দ্র জানান,আমরা দাউদকান্দির গৌরিপুর,তিতাস ও মুরাদনগরের রামচন্দ্রপুর বাজারে নৌকা নিয়ে আসি। আমাদের গ্রামের ১৬০পরিবার নৌকা তৈরি করেন। এই বাজারে নৌকার ভালো চাহিদা রয়েছে।
বাজারের ইজরাদার বিমল চন্দ্র সরকার বলেন,রামচন্দ্রপুর প্রাচীন বাজার। প্রতি মঙ্গলবার ভোর থেকে বাজার বসে। বাজারে কাঠ বিক্রি হয়। সেখান থেকে কাঠ কিনে নৌকা বানিয়ে বাজারে নিয়ে আসেন মিস্ত্রিরা। কাঠসহ অন্যান্য সরঞ্জামের দাম বাড়ায় নৌকার দাম অনেক বেড়ে গেছে। ১০বছর আগে যে নৌকা ৩০০০টাকায় বিক্রি হতো এখন তা ১২০০০টাকা।
স্থানীয় রামচন্দ্রপুর অধ্যাপক আবদুল মজিদ কলেজের বাংলা বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন,রামচন্দ্রপুর বাজার ব্রিটিশ আমলা থেকে প্রসিদ্ধ। নৌকার হাটের বয়স শত বছরের বেশি। পাশের হোমনা,বাঞ্ছারামপুর,নবীনগরসহ বিভিন্ন উপজেলার মানুষ এখানে নৌকা কিনতে আসেন।
রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া খোকন বলেন,খৈজুরি সড়কের বেহাল অবস্থা নিয়ে অবগত রয়েছি। এটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করি দ্রুত সংস্কার করতে পারবো।
মোবাইল: ০১৭১৭-৯১০৭৭৭
ইমেইল: newsamod@gmailcom
www.amodbd.com