।। হুমায়ুন কবির।।
আমার বাবার বয়স থেকে ১০ বছরের ছোট একটি পত্রিকা ‘সাপ্তাহিক আমোদ’। যতদূর মনে পড়ে আমার বাবার জন্ম ১৯৪৫ সালে। ৫ মে, ১৯৫৫ ‘সাপ্তাহিক আমোদ' পত্রিকার জন্ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। সেই হিসেবে ৫ মে, ১৯৫৫ এই তারিখ থেকে ৭১ বছর পূর্ণ হবে। এই দিন কুমিল্লায় ‘মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী’ এই পত্রিকার প্রথম প্রকাশনা শুরু করেন। প্রথমে এটি পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম ক্রীড়া সাপ্তাহিক হিসেবে যাত্রা শুরু করে, পরে তা সাধারণ সংবাদপত্রে পরিণত হয়।
এই পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ‘মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী’ তার স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ “কাগজের নৌকা”তে লিখছেন এবং তা পড়তে গিয়ে জানতে পারি যে তিনি এর প্রকাশনা ১৯৭১ এ যুদ্ধকালীন সময়েও বন্ধ করেননি। যেখানে জীবনেরই ঠিক নাই। ৭৫ সালে ১৪ সপ্তাহের জন্য এর প্রকাশনা সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে বন্ধ হয়। কিন্তু নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে ‘সাপ্তাহিক আমোদ’ এর কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তার সেই স্বপ্নকে তার মৃত্যুর পর স্ত্রী সামনের দিকে এগিয়ে নিতে শক্ত হাতে হাল ধরেন। তার স্ত্রীর পর তার হাল ধরেছেন তারই সুযোগ্য সন্তান “বাকীন রাব্বী” সম্পাদক ও প্রকাশকের দায়িত্বে। ‘সাপ্তাহিক আমোদ’ উক্ত পত্রিকাটির ‘কুমিল্লা সিটির’ বা কুমিল্লা শহরের একমাত্র সাপ্তাহিক পত্রিকা ছিল তদানীন্তন সময়ে।
‘ইউনেস্কো’ থেকে ১৯৮৫ সালে মনোনীত এশিয়ার ৫ টি সফল আঞ্চলিক পত্রিকার মধ্যে হয়েছিলো ‘সাপ্তাহিক আমোদ’। এই পত্রিকাটিকে একটি আদর্শ ‘পারিবারিক পত্রিকা’ বললে ভাল হয়। কারণ একটি পরিবারে মা-বাবা ও ভাই-বোন সবাই মিলে একটি পত্রিকাকে সাফল্য ম-িত করে তোলা। অনেকের অনেক অভিজ্ঞতা থাকবে ঠিকই কিন্তু আমি হলফ করে বলতে পারি একটি পত্রিকার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত হবার অভিজ্ঞতা খুব কম পরিবারেরই আছে। সেদিক থেকে ফজলে রাব্বীর পরিবার সিনসিয়ারলি খুব-খুব ভাগ্যবান! এমন ভাগ্য সব মানুষের জীবনে হয় না। সেদিক থেকে ফজলে রাব্বী পরিবার নিজেদের নিয়ে গর্ব করতেই পারে।
আজকাল অনলাইনের যুগে পত্রিকা চালানো কঠিন। সেই তালে তালে আমোদ পত্রিকাটিকে ঠিক সঠিক দিকনির্দেশনার মাধ্যমে উন্নতির চরম শিখরে নিয়ে যাবে ‘আমোদ’ টিম। ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মহিউদ্দিন মোল্লা অনলাইন দিয়ে জয় করে চলেছেন প্রতিটি ‘পাঠক’ আর ‘ভিউয়ার’ এর হৃদয়। এখন কোন পত্রিকাই এখন আর লোকাল পত্রিকা নেই। এটা আসলেই আর কুমিল্লার পত্রিকা না। এটা সারা বিশ্বের যত বাংলা ভাষাভাষী জনের পত্রিকা। আমাদের ‘আমোদ’, কুমিল্লার ‘আমোদ’। মানব জীবনে ৭১ বছর হওয়া মানে বুড়ো হয়ে যাওয়া। আর কোন পত্রিকার ৭১ মানে সে কত পরিপোক্ত আর বিশ্বের দরবারে তার সাস্টেইনবল মডেল। ‘আমোদ’ ই তার একমাত্র উদাহরণ। আমি এখন “সাপ্তাহিক আমোদে” লিখছি।
সেই পৃথিবীতে সবার হৃদয়ে ছড়িয়ে পড়ুক। ‘আমোদ’ এর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। দোয়া করি এই পত্রিকায় সে লিখবে, যে আজও জন্ম গ্রহণ করেনি। সেই সুদীর্ঘ কালের প্রত্যাশা রাখছি, আশা করছি শতবর্ষের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে লিখার।
লেখক:উদ্যোক্তা,টাট্কা এগ্রোফার্ম,বুড়িচং।
মোবাইল: ০১৭১৭-৯১০৭৭৭
ইমেইল: newsamod@gmailcom
www.amodbd.com