আবদুল্লাহ আল মারুফ ।।
পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন প্রবাসী আকরাম। এসময় কাঁধে ক্যামেরা ঝুলিয়ে এক কিশোর জিজ্ঞেস করেন- ছবি তুলবে কিনা। কয়েকবার নিষেধ করার পর কিশোরের অনুরোধে ১০০ টাকায় ২০টি ছবি তুলতে রাজি হন। পরে ৫টি কর্নারে সাড়ে সাতশো ছবি তোলে ওই কিশোর। এসময় সাড়ে সাতশো ছবির জন্য টাকা দাবি করলে আকরাম ছবি নেবেন না বলে জানান। পরে কেন ছবি নেবেন না এমন প্রশ্ন তুলে আকরামকে মারধর শুরু করে কয়েকজন ক্যামেরাম্যান। পর্যটন দিবসের আগের দিনের এ চিত্র কুমিল্লার পর্যটন নগরী কোটবাড়ির সংরক্ষিত শালবন বিহারে।
এ ঘটনার পর আকরামের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিনিধির। তিনি জানান, তিনি কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ভারেল্লা ইউনিয়নের বাসিন্দা। দীর্ঘদিন পর প্রবাস থেকে ফিরে পরিবার নিয়ে ঘুরতে যান কুমিল্লার কোটবাড়ি এলাকার শালবন বিহারে। সেখানে প্রবেশের পর ক্যামেরা সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়েন তিনি।
পর্যটন পুলিশের সহায়তায় কোটবাড়ি এলাকা থেকে বের হই। সংরক্ষিত এই এলাকায় এভাবে পর্যটকদের হামলা করলে মানুষ আর এখানে কি করে আসবে?
আকরামের মতো হাজার হাজার পর্যটক প্রতিদিন কুমিল্লার কোটবাড়ি এলাকার সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে ঘুরতে আসেন। এসেই স্থানীয় এই ক্যামেরা সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়েন। অনেক পর্যটক তাদের সর্বস্ব হারিয়ে ভ্রমণের আনন্দের বদলে দুঃখ নিয়ে বাড়ি ফেরেন।
সূত্র বলছে, সপ্তম থেকে বারোশ শতকের বিভিন্ন স্থাপনা দেখতে কুমিল্লাসহ সারাদেশ থেকে পর্যটকরা আসেন কুমিল্লার কোটবাড়ি এলাকায়। যেকারণে সম্ভাবনার দেখা মিলছিল কুমিল্লার পর্যটন শিল্পে। দিন দিন বাড়ছিল পর্যটন খাতের আয়। কিন্তু সম্প্রতি কুমিল্লার পর্যটন নগরীতে এক আতঙ্কের দেখা মিলেছে। যে আতঙ্কে আতঙ্কিত খোদ পর্যটন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও। এই আতঙ্কের নাম ক্যামেরা আতঙ্ক।
কুমিল্লার পর্যটন আগ্রহের স্থানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় কুমিল্লার কোটবাড়ির শালবন বিহার, রূপবান মুড়া, ইটাখোলা মুড়া, ময়নামতি জাদুঘর ও পার্শ্ববর্তী বৌদ্ধ বিহার (মন্দির)। এ ছাড়া বেসরকারি অনেক রিসোর্ট ও পার্ক এই জেলায় পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে।
সূত্র বলছে, ক্যামেরা চক্রের উৎপাত বেড়েছে গত দেড় বছর ধরে। পর্যটক, স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের কর্মকর্তা, কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই চক্রটি পর্যটকদের টার্গেট করে ছবি তুলে দেবে বলে প্রলোভন দেখায়। এসময় তারা নামে মাত্র মূল্যে তারা ছবি তোলার কথা বলে। কিন্তু অতিরিক্ত ছবি তোলার পর অতিরিক্ত মূল্য দাবি করে। সুযোগ পেলে তরুণ তরুণীদের ছবি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েও টাকা আদায় করা হয়। প্রায়শই মূল্য প্রতি ছবি ৫ টাকা বললেও পরে সুন্দর ছবি উঠেছে বলে ১০ টাকা দাবি করা হয়।
পর্যটক মুনমুন বলেন, তারা ১০০ টাকার নিচে ছবি তোলে না। অনেকসময় জোর করেই ছবি তোলা হয়। যতক্ষণ আপনি ছবি না তুলবেন আপনার পিছ ছাড়বে না। আগে সময় পেলেই আসতাম। কিন্তু এখন মন চায় না আসতে।
প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর কুমিল্লার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে এই প্রতিবেদককে বলেন, গত সপ্তাহে ক্যামেরা চক্রের সদস্যরা ঘুরতে আসা এক পর্যটককে মেরে আহত করে। এসময় তারা দলবল নিয়ে আবার তাকে মারার জন্য যায়। পরে লোকজন বিহারের লোকজন দেখে তাদের উদ্ধার করে আনেন। স্থানীয় এ চক্রটি বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তাদের জন্য আমরাও বিপাকে আছি।
শালবন বিহারের দায়িত্বে থাকা ময়নামতি জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান মো. শাহীন আলম বলেন, গত মাসে আমি দায়িত্ব পেয়েছি। এর পরেই দুটি ঘটনা ঘটে গেলো। আমি যখন এসেছি তখনই তাদের তীব্র উৎপাত দেখেছি। একজন পর্যটককে মারা আর তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তার গায়ে হাত দেয়ার সমান। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসারদের সরাসরি বলে দিয়েছি যেন এ ব্যাপারে কঠোর হয়। টুরিস্ট পুলিশের সাথেও কথা হয়েছে।
টুরিস্ট পুলিশের কুমিল্লা অঞ্চলের পরিদর্শক দীপক কুমার দাশ বলেন, আমি একটি অভিযোগ পেয়েছি। তাৎক্ষণিক পুলিশ সদস্যদের ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে।
মোবাইল: ০১৭১৭-৯১০৭৭৭
ইমেইল: newsamod@gmailcom
www.amodbd.com