প্রধান শিক্ষকের কক্ষই ক্লাসরুম
মহিউদ্দিন মোল্লা ।।
কুমিল্লা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও অটিজম স্কুল। নানা প্রতিবন্ধকতা ও সংকটে ৪০বছর ধরে ধুঁকছে। এখানে নেই প্রয়োজনীয় শিক্ষক ও কর্মচারী। শিক্ষকরাই ঝাড়ুদার ও বাথরুম পরিষ্কারক। পর্যাপ্ত না থাকায় প্রধান শিক্ষকের কক্ষেই ক্লাসরুম করা হয়েছে। কক্ষের সিলিং নেই। নেই সীমা বাউন্ডারি ও গাড়ি। সংকটের সমাধান দাবি করেছেন অভিভাবকরা।
সূত্রমতে, কুমিল্লা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও অটিজম স্কুল সুইড বাংলাদেশ সংস্থার তত্ত্বাবধানে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদ মাধ্যমে এটি পরিচালিত হয়। ১৯৮৪সালে ৬জন শিক্ষার্থী নিয়ে কুমিল্লায় স্কুলটি ৬শতক ভূমিতে প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে শিক্ষার্থী ১৪৫জন। চেয়ার টেবিল,শিক্ষা উপকরণ দানবীরদের থেকে সহযোগিতা নেয়া।
সূত্র আরও জানায়,প্রতি ৫জন অটিজম শিশুর জন্য প্রয়োজন একজন শিক্ষক, একজন শিক্ষা সহকারী। বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ১০জনে প্রয়োজন একজন শিক্ষক, একজন শিক্ষা সহকারী। যেখানে মোট প্রয়োজন ১২জন শিক্ষক। সেখানে রয়েছেন দুইজন শিক্ষক। তারা শিক্ষকের সাথে ঝাড়–দার ও বাথরুম পরিষ্কার করে থাকেন। একজন সহকারী আছেন বিশেষ কোটার মানুষ। তার দায়িত্বও শিক্ষকদের পালন করতে হয়।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের কক্ষে বেঞ্চ রেখে পাঠদান করানো হচ্ছে। মাথার ওপরে সিলিং নেই। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর সাথে অভিভাবক আসেন। তাদের সবার বসার ব্যবস্থা নেই। শিশুদের একসাথে বসার কোন হলরুম নেই। নেই ফিজিও থেরাপিসহ শিক্ষা সরঞ্জাম। মাঠ না থাকায় পাশের নজরুল ইনস্টিটিউট কেন্দ্রের সামনে শিক্ষার্থীদের খেলার আয়োজন করা হয়। কেউ প্লাস্টিকের পাইপের ওপর হাঁটছেন। সে যেন ভালো ভাবে হাঁটতে পারে। এছাড়া নিচে সংখ্যা রেখে তা চেনানো হচ্ছে। শাহিদুল ইসলাম,আবরার শাহরিয়ার,জিদনী সুলতানা, তাসফিয়া তাবাস্সুম ইফতিকে নাচতে ও কবিতা আবৃত্তি করতে দেখা যায়। কোন খেলায় সন্তানরা ভালো করলে বাবা-মায়ের চোখে মুখে খুশি ফুটে উঠতেও দেখা গেছে।
শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান ইমরান। মুখে কথা আটকে যায়। গায়ে ক্রিকেট খেলার পোষাক। মাথায় ক্যাপ। বয়স ১৪এর মতো। খেলা তার পছন্দ। বুদ্ধি প্রতিবন্ধীদের প্রতিযোগিতায় সে খেলে পুরস্কার পেয়েছে। সে এই প্রতিবেদককে দেখে এগিয়ে আসে। ক্রিকেট নিয়ে তার স্বপ্নের কথা বলতে চায়। স্কুলে এলে তার ভালো সময় কাটে বলেও সে জানায়। জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স তার মুখস্ত।
আবরার শাহরিয়ারের মা শিরিন আক্তার ও তাহমিদ তাহমুদ অর্ণবের মা তাহমিনা মজুমদার বলেন,এখানে আসার পর আমাদের সন্তানদের উন্নতি হচ্ছে। তারা স্কুলের কক্ষ,বাউন্ডারি ও সিলিংসহ নানা সংকট সমাধানের দাবি জানান।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তাহমিনা আক্তার বলেন,আমরা দুইজন শিক্ষক ও একজন কর্মচারী। আরো চারজন শিক্ষক অস্থায়ী আছেন। তবে তাদের বেতন নেই। পরীক্ষা বা প্রতিযোগিতার সময় তাদের সহযোগিতা নিই। তাদের স্থায়ী করা হলে আমাদের পাঠদানে অনেক সুবিধা হতো। এছাড়া ঊর্ধ্বমুখী ভবন করলে আমাদের কক্ষ সংকট কেটে যেতো।
সুইড বাংলাদেশ কুমিল্লা শাখার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শাহাজাদা এমরান বলেন,এখানে বাউন্ডারি না থাকায় প্রতিষ্ঠানের ভূমি অরক্ষিত হয়ে পড়ছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
সুইড বাংলাদেশ কুমিল্লা শাখার প্রধান উপদেষ্টা আনোয়ারুল কাদের বাকী বলেন, ৯০সালে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে এটা স্কুলের জন্য লিজ নিয়েছিলাম। এখানে শিক্ষক ও কর্মচারীর সংকট তীব্র রয়েছে। এছাড়া একটা গাড়ি হলে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে সুবিধা হতো। এই প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে আমরা সরকারের পাশাপাশি দানবীরদের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) পঙ্কজ বড়ুয়া বলেন, আমরা ডিসি স্যারসহ বিভিন্ন সময় স্কুলটি পরিদর্শন করেছি। অবকাঠামো উন্নয়নে সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা কাজ করা হবে। অন্যান্য সংকটের বিষয় গুলো নিয়েও আমরা কাজ করবো।
মোবাইল: ০১৭১৭-৯১০৭৭৭
ইমেইল: newsamod@gmailcom
www.amodbd.com