মহিউদ্দিন মোল্লা।।
কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ। একটি নদী-খাল-পুকুর বেষ্টিত উপজেলা। এই উপজেলায় প্রায় প্রতি মাসে শিশুরা পানিতে ডুবে মারা যান। তাদের মরদেহ আসে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। স্বজনদের আজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে। চোখ ভিজে যায় কঠিন হৃদয়ের মানুষদেরও। বিষয়টি নাড়া দেয় ডা. নিসর্গ মেরাজ চৌধুরীকে। তিনি তখন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছিলেন। ২০২১সালে উদ্যোগ নেন শিশুদের পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার কমাতে। ছুটে যান বিভিন্ন গ্রামে। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেন। পুকুর পাড়ে সবুজ সবজি চাষ করতে কিংবা সবুজ নেট দিয়ে বেষ্টনি দিতে বলেন। এই প্রক্রিয়াটি কয়েকটি গ্রামে সাড়া ফেলে। মানুষ এগিয়ে আসে। কমে শিশু মৃত্যু হার। বিশেষ কওে উপজেলার লৎসর ও দিশাবন্ধ গ্রামে মানুষ সবুজ বেষ্টনী পদ্ধতি প্রয়োগ করেন।
লৎসর গ্রামের নারী বিবি কুলসুম বলেন, আমাদের বাড়ির পাশে পুকুর। সকালে রান্নায় ব্যস্ত থাকি। এসময় সন্তাদের কাছে রাখতে পারিনা। এনিয়ে ভয়ে সময় কাটে। কখন কি হয়। ডাক্তাররা বলার পর পুকুরের পাড়ে নেট দিয়ে বেড়া দিয়েছি। এখন নিশ্চিন্তে থাকতে পারি।
দিশাবন্ধ গ্রামের আক্তার হোসেন বলেন, এই এলাকায় পুকুর বেশি। শিশুরাও বেশি পানিতে পড়ে। তাই পুকুরের পাড়ে সবজি চাষ করেছি। এতে শিশুরা পুকুর পাড়ে বাধা প্রাপ্ত হয়। পানিতে পড়ে না। সাথে সবজি দিয়ে পরিবারের চাহিদা মেটাতে পারছি।
পানিতে ডুবে সন্তান মারা যান লৎসর গ্রামের মিজানুর রহমান দুলালের। তিনি বলেন, আমার ছেলে পানিতে ডুবে মারা যায়। এই পদ্ধতি আমরা আগে জানতাম না। জানলে ছেলে পানিতে ডুবে মারা যেতো না। এখন সবুজ বেষ্টনী চালু হওয়ায় মানুষ উপকৃত হচ্ছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য বাবুল ইসমাইল হোসেন বাবুল বলেন, আমাদের এলাকায় অনেক শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। সবুজ বেষ্টনী কার্যক্রম চালু হওয়ায় শিশু মৃত্যুর হার কমেছে। এটি আরো প্রসার করা প্রয়োজন।
স্থানীয় মেডিকেল অফিসার ডা. রাশেদ রায়হান জানান,সবুজ বেষ্টনীর সাথে আমরা আরো কিছু বিষয় যোগ করেছি। বিশেষ করে পানিতে পড়ে গেলে যেন তাকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে নেয়া যায়। সেজন্য তরুণদের দিয়ে স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তাদের ফোন নম্বর স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিকট দেয়া হয়েছে।
ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নিসর্গ মেরাজ চৌধুরী বলেন, মনোহরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনকালে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর বিষয়টি চোখে পড়ে। এনিয়ে আমরা পরিকল্পনা করি। কাজের ফাঁকে চিকিৎসক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে উদ্ধুদ্ধ করি। এতে মানুষের বেশ সাড়াও মিলে। যাদের নেট কেনার টাকা নেই তাদের সহযোগিতার জন্য জনপ্রতিনিধি ও সমাজপতিদের অনুরোধ করি। এই সবুজ বেষ্টনী প্রকল্পটি জেলার দেবিদ্বার ও দাউদকান্দিতেও চালু করা হয়েছে। এটি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার কমবে বলে আশা করছি।
উল্লেখ্য- জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, চলতি বছর কুমিল্লা জেলায় ২৫৮জন শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। গত ছয় মাসে দাউদকান্দিতে ২৩ জন,মুরাদনগরে ৩৪জন এবং দেবিদ্বারে ২১জন শিশু পানিতে ডুবে মারা যান।
মোবাইল: ০১৭১৭-৯১০৭৭৭
ইমেইল: newsamod@gmailcom
www.amodbd.com