শীতল সুমেরু মহাসাগর 

।। মতিন সৈকত ।। 
উত্তর মহাসাগর কে সুমেরু মহাসাগর বা আর্কটিক মহাসাগর বলা হয়।পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট এবং সবচেয়ে কম গভীর মহাসাগর। এটি উত্তর গোলার্ধের সুমেরু অঞ্চলে অবস্থিত এবং উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার উপকূল দ্বারা বেষ্টিত। পৃথিবীর একেবারে উত্তরে  সুমেরু অঞ্চলে অবস্থিত। বেরিং স্ট্রেইট নামক একটি সংকীর্ণ অগভীর জলের মাধ্যমে এটি প্রশান্ত মহাসাগরের সাথে যুক্ত হয়েছে। সুমেরু মহাসাগরের আয়তন  এক কোটি চল্লিশ লাখ ছাপ্পান্ন হাজার বর্গকিলোমিটার।
অধিকাংশ সময় এ মহাসাগরের বেশিরভাগ অংশ বরফে ঢাকা থাকে। এটি বিশ্বের অন্যতম শীতল মহাসাগর।
যা উত্তর মেরুকে ঘিরে রয়েছে।  আর্কটিক মহাসাগর  উত্তর গোলার্ধের সুমেরু অঞ্চলে অবস্থিত। উত্তর মেরুকে কেন্দ্র করে এটি বিস্তৃত।
এর বেশিরভাগ অংশ বহুবর্ষজীবী বরফের আবরণে ঢাকা থাকে। ভারত মহাসাগরের আয়তনের মাত্র এক-ষষ্ঠাংশের কিছু বেশি। আর্কটিক মহাসাগরকে বিশ্বের অন্যান্য মহাসাগরের তুলনায় বেশ রহস্যময় বলা হয়ে। আর্কটিক অঞ্চলে ভূ-রাজনৈতিক সংঘাতের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট।  চীনা বিশেষজ্ঞ এবং যুক্তরাষ্ট্র ক্রমবর্ধমানভাবে আর্কটিক অঞ্চলে নিজেদের আধিপত্য নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে।
আর্কটিক মহাসাগর পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের অতিরিক্ত তাপমাত্রা কার্যত শুষে নেয় এবং সেই সাথে বড় একটি অংশ মহাকাশে প্রতিফলিত করে।
উত্তর সাগর আটলান্টিক মহাসাগরের একটি প্রান্তীয়, ভূভাগীয় সাগর, যেটি ইউরোপীয় মহীসোপানের উপর অবস্থিত। উত্তর সাগরের উত্তর তটরেখা সুউচ্চ খাড়া ঢাল।
উত্তর মহাসাগর উত্তর গোলার্ধের মাঝখানে উত্তর মেরু অঞ্চলকে অন্তর্ভুক্ত করে ও দক্ষিণে প্রায় ৬০°উ পর্যন্ত বিস্তৃত। উত্তর মহাসাগরের প্রায় সমগ্র অংশই ইউরেশিয়া ও উত্তর আমেরিকা মহাদেশ দ্বারা বেষ্টিত।
আর্কটিক বা উত্তর মহাসাগর পৃথিবীর জলবায়ুর সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ উপাদানগুলোর একটি।
জীবনের অস্তিত্ব প্রধানত সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী।তিমি, সীল, এবং ওয়ালরাস, এবং বিভিন্ন মাছ, প্ল্যাঙ্কটন ও আর্কটিক অঞ্চলে বসবাসকারী মেরু ভালুকদের উপর নির্ভরশীল। এই মহাসাগরটি পৃথিবীর শীতলতম ও ক্ষুদ্রতম মহাসাগর। এর পরিবেশ অত্যন্ত প্রতিকূল ও বরফ-আচ্ছাদিত। যা জীববৈচিত্র্যের জন্য বিশেষ অভিযোজনকে বাধ্য করে। তিমি, সীল ও ওয়ালরাসরা এই মহাসাগরের গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী, যারা ঠান্ডা পানি ও বরফের মধ্যে বেঁচে থাকার জন্য বিশেষ অভিযোজিত।
আর্কটিক মহাসাগরের পানিতে বিভিন্ন ধরনের মাছ ও প্ল্যাঙ্কটন দেখা যায়, যা খাদ্য শৃঙ্খলের ভিত্তি।
মেরু ভালুকগুলোও এই এলাকার একটি পরিচিত অংশ। বরফ-ঢাকা অঞ্চলে এদের উপস্থিতি দেখা যায়, যা এ মহাসাগরের বাস্তুতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
উত্তর মহাসাগরের বেশিরভাগ এলাকা বরফ দ্বারা আচ্ছাদিত এবং তাপমাত্রা অত্যন্ত শীতল, যা অনেক প্রাণীর জন্য জীবনধারণকে কঠিন করে তোলে। যে প্রাণীগুলো এখানে বসবাস করে, তাদের ঠান্ডা পরিবেশে টিকে থাকার জন্য বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
বর্তমানে উত্তর মহাসাগরে ন্যানোপ্লাস্টিকের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সামুদ্রিক জীবন ও খাদ্য শৃঙ্খলের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। মহাদেশীয় অঞ্চলের আশেপাশে কিছু দ্বীপে মানুষের বসবাস থাকলেও, অনেক দ্বীপ সম্পূর্ণরূপে বরফে ঢাকা এবং মানুষ বাসযোগ্য নয়। প্রতিকূল পরিবেশ সত্ত্বেও, উত্তর মহাসাগরের জীবন অত্যন্ত সমৃদ্ধ, যা বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক ও মেরু প্রাণী এবং উদ্ভিদ দ্বারা গঠিত
উত্তর মহাসাগরে পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস, প্লেসার মজুদ, পলিমেটালিক নোডুলস, বালি, নুড়ি, মাছ, সীল এবং তিমির মতো প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। এই মহাসাগরে পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্র, পলিমেটালিক নোডুলস, বালি ও নুড়ি সমষ্টি, মাছ, সীল এবং তিমির মতো মূল্যবান সম্পদ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।
প্রাকৃতিক সম্পদের তালিকায় রয়েছে পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাস।
প্লেসার, পলিমেটালিক নোডুলসবালি ও নুড়ি সমষ্টি।
জীববৈচিত্র্য ও মৎস্য সম্পদ মাছ, সীল এবং তিমি।
লায়ন্স মানি জেলিফিশ, ব্যান্ডেড গানেল এবং মিনকে তিমি। এই সম্পদগুলি উত্তর মহাসাগরের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
বাষ্পীভবনের নিম্নহার, বিভিন্ন নদী থেকে আসা মিঠা পানির প্রবাহ এবং অন্যান্য মহাসাগরের সাথে সীমিত সংযোগের কারণে এর পানির লবণাক্ততার পরিমাণ কম।
আর্কটিক মহাসাগরের রহস্যগুলো মূলত এর প্রতিকূল পরিবেশ, বরফের চাদরের নিচে লুকানো গভীরতা, এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে ঘিরে আবর্তিত হয়। বিজ্ঞানীরা গ্যাকল শৈলশিরার মতো অপ্রকাশিত অঞ্চলে উষ্ণ প্রস্রবণ খুঁজে পেয়েছেন, যা সামুদ্রিক জীবনের একটি নতুন দিক উন্মোচন করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দ্রুত উষ্ণ হওয়া এবং বরফ গলে যাওয়ার ফলে এর প্রভাব বিশ্বের বাকি অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা একটি বড় অজানা রহস্য।
গ্যাকল শৈলশিরার মতো কিছু অঞ্চল এখনো অনাবিষ্কৃত। ২০০৩ সালে এই অঞ্চলে প্রথম উষ্ণ প্রস্রবণ আবিষ্কৃত হয়, যা সামুদ্রিক জীবনের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে এবং এটি প্রমাণ করে যে, বরফ-আচ্ছাদিত পরিবেশেও জীবন বিদ্যমান থাকতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আর্কটিক মহাসাগর দ্রুত উষ্ণ হচ্ছে। এই পরিবর্তনের ফলে এখানকার বরফ দ্রুত গলে যাচ্ছে, যা শুধু এই অঞ্চলেই নয়, বরং বিশ্বের বাকি মহাসাগরগুলোতেও গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন।
মহাসাগরের গভীরে, যেখানে সূর্যের আলো পৌঁছায় না, সেখানে কী ধরনের সামুদ্রিক প্রাণীর বসবাস রয়েছে তা এখনো অজানা।
সুমেরু মহাসাগরের প্রধান প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে  বরফ গলে যাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তন, সমুদ্রে
অম্লীকরণ এবং প্রাকৃতিক সম্পদের উপর চাপ বৃদ্ধি।
সুমেরু অঞ্চলে তাপমাত্রা দ্রুত বাড়ছে। যার ফলে বরফ ও হিমবাহ গলতে শুরু করেছে। বরফ গলার কারণে সমুদ্রের পানির স্তর বাড়ছে, যা উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য হুমকি। বরফ গলে গেলে মেরু অঞ্চলের প্রাণীদের বাসস্থান ও খাদ্যের অভাব দেখা দেয়, যা তাদের বাস্তুতন্ত্রকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রের পানিতে কার্বন ডাই অক্সাইড বেড়ে যাওয়ায় সমুদ্রের অম্লতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে সামুদ্রিক প্রাণীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বরফ গলার কারণে নতুন জলপথ উন্মুক্ত হওয়ায় সমুদ্রের প্রাকৃতিক সম্পদের উপরও চাপ বাড়ছে।
সমুদ্রের পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কারণে বৈশ্বিক মৎস্য উৎপাদনে মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হবে। বরফ গলে যাওয়ায় নতুন জলপথ তৈরি হচ্ছে, যা সামুদ্রিক চলাচল ও ভূ-রাজনৈতিক প্রভাবের ক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসছে।
জলবায়ু সংকট দেখা দিচ্ছে। সুমেরু অঞ্চলের প্রাকৃতিক চিত্র বদলে যাচ্ছে খুব দ্রুত। গড়ে উঠছে পরিবর্তিত এক সুমেরু অঞ্চল। তাপমাত্রা বেড়ে হচ্ছে গগনচুম্বী, সমুদ্রের বরফ কমছে। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে, উত্তর মেরু অঞ্চল খুব শীঘ্রই একেবারে অচেনা রূপ ধারণ করতে চলেছে।
–বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য উপাত্ত উল্লেখ করেছি।
inside post
লেখক, চারবার জাতীয় পদক প্রাপ্ত এগ্রিকালচারাল ইম্পর্ট্যান্ট পারসন এআইপি।
আরো পড়ুন