অফিস রিপোর্টার।।
স্ত্রী-সন্তান মিলে তার পরিবারে ৪জন সদস্য। দুই বছর আগে আরেকজন নতুন সদস্য যোগ হয়েছেন। তিনি শঙ্খ চিল পাখি। পাখিটি তাদের সাথে থাকে খায়। পাখিটির দেখাশোনা করছেন কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার আদমপুর গ্রামের শিক্ষক মতিন সৈকত। এ উপজেলার আদমপুর, পুটিয়াসহ আশপাশের গ্রামে প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষ হচ্ছে। বাড়ি থেকে বের হলেই চোখে পড়ে মাছের খামারে ব্যবহার করা জালে কোনো পাখি বা গুইসাপ আটকা পড়েছে। মতিন সৈকত নেমে পড়েন সেটি উদ্ধার করতে। ২২ বছর ধরে তিনি এ কাজ করে আসছেন। এর মধ্যে ২০০০ পাখি উদ্ধারের পর অবমুক্ত করেন। এ ছাড়া বন বিড়াল, গুইসাপ, বেজি, শিয়ালসহ অনেক বন্যপ্রাণীকে অবমুক্ত করেছেন। মতিন সৈকত স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেন। এর পাশাপাশি তিনি মাছ চাষ ও নিরাপদ ফসল উৎপাদন নিয়ে কাজ করেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ানো শেষে বাড়ি ফেরেন। কখনও ঢোল বাদক দিয়ে তা বাজিয়ে লোক জড়ো করেন। তাদের নিরাপদ ফসল উৎপাদনের বিষয়ে ধারণা দেন। কখনও জুতা মোজা খুলে নেমে পড়েন জমির কাদায়। বিষমুক্ত ফসল উৎপাদনে জমিতে ঝাটা জিংলা(গাছের ডাল বা বাঁশের ঝোপ) পুতে দেন। তিনি শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন মানুষকে বুঝান-ডালায় পাখি বসবে। সেই পাখি ক্ষতিকারক পোকা খেয়ে ফেলবে। এতে কীটনাশকের ব্যবহার কমবে। এছাড়া বাড়িতে গড়ে তোলেন পরিবেশ স্কুল। সেখানে কৃষির বিভিন্ন উপকরণ রেখেছেন। তাদের মধ্যে আছে অনেক ঐতিহ্যবাহী সামগ্রীও। সেখানেও শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষদের প্রায়ই ভিড় জমে। এছাড়া তিনি স্বল্প মূল্যে বিঘা প্রতি ২০০টাকায় সেচ দিয়ে আসছেন ২২বছর ধরে।
ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউশন কুমিল্লার ভাইস চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মীর ফজলে রাব্বী বলেন, তার কাজ গুলো দেখার সুযোগ হয়েছে। সমাজ ও পরিবেশ দরদী মানুষের সংখ্যা দিন দিন কমছে। সেখানে মতিন সৈকত ব্যতিক্রম।
মতিন সৈকত বলেন, পাখি-প্রাণী পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অবদান রাখে। তাদের বিপদে পড়তে দেখলে খারাপ লাগে। তাদের উদ্ধার করে মুক্ত পরিবেশে ছেড়ে দেওয়ায় আনন্দ খুঁজে পাই। এ ছাড়া পরিবেশ বিষয়ে গবেষণা এবং জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে পরিবেশ স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছি। ভুর্তুকি দিয়ে স্বল্প মূল্যে সেচসহ অন্যান্য কাজ গুলোর বিষয়ে মতিন সৈকত বলেন, কৃষকের সন্তান। বাবা এই কার্যক্রম শুরু করেন। কৃষিকে এগিয়ে দিতে এই কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি।
স্কুল শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন ও আবদুল মবিন বলেন,স্যার বিষমুক্ত ফসল উৎপাদনের বিষয়ে প্রায়ই সময় আমাদের নানা পরামর্শ দেন। আমরা তা শুনে বাবা-মাকে বলি।
সিঙ্গুলা গ্রামের কৃষক গৌরাঙ্গ চন্দ্র দাস ও তাপস সরকার বলেন, মতিন সৈকতের কাজকে কেউ কেউ ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো বলে মনে করেন। তবে কৃষি নিয়ে তার এসব উদ্যোগে এলাকার মানুষ অনেক উপকার পেয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক আইউব মাহমুদ বলেন, মতিন সৈকত কৃষি নিয়ে কাজ করায় শিক্ষিত তরুণরা কৃষিতে ঝুঁকছে। তিনি স্বল্প মূল্যে সেচ দিয়ে কৃষকদের রোরো চাষে উদ্বুদ্ধ করছেন। এই উদ্যোগের জন্য তাকে অভিবাদন জানাই।
মোবাইল: ০১৭১৭-৯১০৭৭৭
ইমেইল: newsamod@gmailcom
www.amodbd.com