প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ২৩, ২০২৪, ৬:৩২ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুলাই ২৩, ২০২৩, ৭:২৩ অপরাহ্ণ
মাহফুজ নান্টু। ।
ভাঙা শরীর। এক চিলতে জমিতে ছেলে সন্তান নিয়ে থাকেন। কখনও খেয়ে কখনও না খেয়ে। জীবনে কখনও একটা রিকশা কেনার সামর্থ ছিল না। ঋণ করে কিনেছেন পায়ে চাপা প্যাডেলের রিকশা। ভাবতেন একটা মোটর রিকশা হলে অন্তত খেয়ে পরে বাঁচা যেতো। তবে এটা ছিল স্বপ্নের মতো। এখন সে স্বপ্নটা বাস্তবায়ন হবে। তাই ঠোঁটের কোনে হাসি জাহাঙ্গীর হোসেনের মুখে।
রিকশা চালক তিনি কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার খোশবাস উত্তর ইউনিয়নের ইলাশপুর গ্রামের বাসিন্দা। দুই ছেলে দুই মেয়ের সংসারের একমাত্র রোজকারের মানুষ জাহাঙ্গীর। তবে সংসার চলে তার পায়ের চাপা প্যাডেলে। একদিন অসুস্থ হলেই খাবার জোটেনা। ছেলে মেয়ের খাবার, অসুস্থতা, পড়াশোনা সবই তার পায়ের প্যাডেলে।
জানা গেছে, একটি রিকশার জন্য সবার দ্বারে দ্বারে গিয়েও কোন লাভ হয়নি। পরে লোক লজ্জায় মাথা নুয়িয়ে ঘরের কোণেই চোখের পানি ফেলেন। এই খবর পেয়ে তার স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিলেন শফিউদ্দিন শামীম৷ শুধু জাহাঙ্গীর নয় আরও ২৭ পরিবারের এমন ধোঁয়াসার স্বপ্নকে সত্যিতে পরিণত করলেন তিনি। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এ. জেড. এম. শফিউদ্দিন (শামীম)।
তার অর্থায়নে কর্মহীন লোকদের কর্মসংস্থান ও দারিদ্র বিমোচনের জন্য সামাজিক দায়বদ্ধতার আওতায় অটোরিকশা, সেলাইমেশিন, দরিদ্র রোগীদের অনুদান, মসজিদ-মন্দির সহায়তাসহ বিভিন্ন আর্থিক অনুদান বিতরণ করা হয়েছে।
শনিবার (২২ জুলাই) খোশবাস উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ মাঠে বরুড়া উপজেলার খোশবাস উত্তর ইউনিয়নের ৯ টি ওয়ার্ডে ৯ জনকে রিকশা, ৯ জনকে সেলাইমেশিন, ৯জন অসহায় দরিদ্র রোগীকে চিকিৎসার জন্য সহায়তাসহ মসজিদ-মন্দিরে নগদ অর্থ অনুদান বিতরণ করা হয়।
আরেকটি রিকশা পেয়েছেন খোশবাস উত্তর ইউনিয়নের সোহাগ হোসেন। বাবা শফিউল্লাহ ছোটবেলায় মারা যান। রাজমিস্ত্রী কাজ করে
রামমোহন তমিজিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেনিতে পড়াশোনা করে ছোট ভাই মো. মিলন। তার পড়াশোনার দায়ভার সোহাগেরই। কিন্তু রাজমিস্ত্রীর কাজ করে আর পেরে উঠছিলেন না।
সোহাগ বলেন, আমার জীবনের একটা বড় পাওয়া। আমি খুবই খুশি। আমি ভাবিওনি আমার ভাইয়ের পড়াশোনা চালিয়ে নিতে পারবো। এখন আমার আর কোন সমস্যা নেই। অভাবে নিজে পড়াশোনা না করলেও আমার ভাইকে পড়াতে পারবো।
খোশবাস উঃ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শাহ আলমের সভাপতিত্বে ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এ. জেড. এম. শফিউদ্দিন (শামীম)।
রিকশা পাওয়া জাহাঙ্গীর বলেন, অনেক কষ্ট করে দিনযাপন করতাম, দিন এনে দিন খেতাম। এখন নিজের একটি রিকশা হলো। বৌ বাচ্চা নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে না। এখন আমার মনে হইতাছে আমি একজন সুখী মানুষ।
একই ভাবে সেলাই মেশিন নিতে আসা ফাতেমা বেগম বলেন, সেলাই প্রশিক্ষণ নেয়া আছে কিন্তু টাকার অভাবে মেশিন কিনতে পারিনি। এখন সংসারও দেখতে পারবো, আবার ঘরে বসেই সেলাই কাজের অর্ডার নিতে পারবো। চার মেয়ে এক ছেলের সংসার চলছিলনা চা বিক্রেতা স্বামীর দ্বারা। আমি এখন তাকেও একটু স্বস্তি দিতে পারবো। মেয়েদেরও প্রশিক্ষণ দিয়েছি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, আমার ইউনিয়নের তিন পরিবার ও একটি মসজিদকে তিনি সহযোগিতার ব্যবস্থা করেছেন। তিন পরিবার আজ থেকে স্বচ্ছল। আমার এলাকায় যারা অসহায় শামীম ভাই তাদের তালিকা করতে বলেছেন। আমরা তালিকা করছি। বাকি সবাইকে আমরা তালিকা করে দেবো। প্রত্যেক ওয়ার্ডে তিনি একই নির্দেশনা দয়েছেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ. জেড. এম. শফিউদ্দিন (শামীম) বলেন, আমরা পরনির্ভরশীলতা কমাতে এবং আত্নকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে এ ধরনের সাহায্যের উদ্যোগ নিয়েছি। পর্যায়ক্রমে বরুড়া উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানান। তিনি বলেন, অসচ্ছল মানুষকে স্বাবলম্বী করা, দারিদ্র্য দূরীকরণ, বেকারত্ব হ্রাস, দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি এস কিউ ফাউন্ডেশনের অন্যতম লক্ষ্য। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমার পরিবার ৩০ বছর ধরে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও কুমিল্লা জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল আবু তাহের, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য ও বরুড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজ আহমেদ, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ও বরুড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র মোঃ বাহাদুরুজ্জামান, বরুড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও আগানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাজহারুল ইসলাম মিঠুসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।