সুয়াগাজীর সাব বাড়িতে হজরত আবু বকরের বংশধর

মহিউদ্দিন মোল্লা।।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। মহাসড়কের পাশে কুমিল্লার সুয়াগাজী বাজার। কুমিল্লা নগরী লাগোয়া এলাকা। বাজারের পাশে ২শ’ বছরের সুয়াগাজী জমিদার বাড়ি। স্থানীয়রা বলেন-সাব বাড়ি। সাহেব থেকে সাব শব্দের উৎপত্তি। তারা ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর সিদ্দিকের (রা.) বংশধর। সম্মান করে সাহেব বলেন। এই বাড়ির ছেলে বেঙ্গল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক,যুক্তফ্রন্টের শিক্ষামন্ত্রী আশরাফ উদ্দিন চৌধুরী। তার স্ত্রী ছিলেন চাষি কবিতার কবি রাজিয়া খাতুন চৌধুরানী। তাদের মেয়ে রাবেয়া চৌধুরী। তিনি ছিলেন চারবারের সবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান। এছাড়া এই বাড়ির অনেক সদস্য রাজনীতিসহ বিভিন্ন পেশায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। এখনও এই বাড়ির ঐতিহ্য স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল। এই বাড়িতে এসেছেন,নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু,শেরে বাংলা একে ফজলুল হক,সীমান্ত গান্ধী আবুল গাফফার খান,জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সভাপতি হোসাইন আহমেদ মাদানী,কাজী জাফর আহমেদ,খালেদা জিয়া,বদরুদ্দৌজা চৌধুরীসহ প্রমুখ নেতারা।
সরেজমিন সুয়াগাজী গিয়ে দেখা যায়,সুয়াগাজী বাজার পার হয়ে সাব বাড়ি। বড় মাঠের পশ্চিম পাশে দাঁড়িয়ে সাদামাটা ভবনে ইতিহাস সমৃদ্ধ সাব বাড়ি। বাড়িটি ৭২বিঘা জমির উপর। একতলা বাড়ির লাগোয়া ৬টি অংশ। কিছু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশে রয়েছে নতুন দ্বিতল ভবন। রয়েছে শতবর্ষী দুইটি কাঠ ও টিনের ঘর। বাড়ির অন্দরমহলের মাঝে রাখা হয়েছে চাল রাখার শত বছরের মটকা।

পরিবার ও ইতিহাসবিদদের সূত্র জানায়, এই বাড়ির গোড়াপত্তন করেন ফয়েজ আহমেদ চৌধুরী। তিনি ১৮৪৫সালে ত্রিপুরার রাজা থেকে জমিদারি লাভ করেন। তার ছেলে তোফাজ্জল আহমেদ চৌধুরী আনু মিয়া চৌধুরী। আনু মিয়া চৌধুরীর ছয় ছেলে ৩মেয়ে। তাদের একজন ওমর আহমেদ চৌধুরী। ওমর আহমেদ চৌধুরীর ভাই সাবেক শিক্ষামন্ত্রী আশরাফ উদ্দিন চৌধুরী। এই বাড়ির জমিদারদের তৈরি করা মসজিদ,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,পুকুর,দিঘি আজও টিকে আছে।
ইতিহাস গবেষক আহসানুল কবীর বলেন, আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদের মতে ১৫৩২ সনে মক্কা নগরী থেকে হযরত আবু বকরের(রাঃ) বংশের মোহাম্মদ সিদ্দিকি নামের একজন কামেল পুরুষ বাংলাদেশের গৌড় নগরীতে আগমন করেন। ১৫৭৫ সনে গৌড় নগরী ক্ষতিগ্রস্ত হলে তিনি চট্টগ্রামের পটিয়া থানার সারোয়াতলী গ্রামে চলে আসেন। সেখান থেকে তাদের বংশধর কুমিল্লার চন্দ্রপুর এবং বাজগড্ডা গ্রামে আসেন। কুমিল্লা সুয়াগাজী সাব বাড়ির ফয়েজ চৌধুরী এই বংশের প্রথম জমিদার। তার পুত্র তফাজ্জল আহমদ চৌধুরী ওরফে আনু মিয়া চৌধুরী। তার পাঁচ ছেলের মধ্যে ওমর আহম্মদ চৌধুরী জমিদারী পরিচালনা করতেন। তার ভাই আশরাফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর সাথে বেংগল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি যুক্তফ্রন্টের আবু হোসেন মন্ত্রী সভায় শিক্ষা মন্ত্রী ছিলেন। তার তত্ত্বাবধানেই বর্ধমান হাউসকে বাংলা একাডেমিতে রূপান্তর করা হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে এ পরিবার ছড়িয়ে আছে।
আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর মেয়ের দিকের নাতি ইমরান চৌধুরী ও ছেলের দিকের নাতি শরফুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী আদনান বলেন, আমরা বাড়ির ঐতিহ্যকে ধরে রাখার চেষ্টা করছি। বিভিন্ন অংশে সংস্কার করছি। এখনও স্থানীয় মানুষ আমাদের পরিবারকে যা সম্মান করে তার বিরল। মানুষের ভালোবাসায় আমাদের বড় অর্জন। হয়তো আমাদের পূর্ব পুরুষরা মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছেন।
কুমিল্লার সুয়াগাজী সাব বাড়িতে কথা হয় আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর মেয়ে ৯০বছর বয়সী রাবেয়া চৌধুরীর সাথে। বয়সের কারণে এখন তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় নন।
নিজের বিত্তের প্রতি আগ্রহ না থাকার প্রশ্নের উত্তর অনেকটা হেসে উড়িয়ে দেন। বলেন-পরিবার থেকে শিখেছি। রাজনীতি নিজের জন্য নয়,মানুষের জন্য। নীতিবান মানুষের হাতে আবার রাজনীতি ফিরুব। একদিন দেশ মাথা তুলে দাঁড়াবে বলেও তিনি বিশ্বাস করেন।