শুশুন্ডা। কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার একটি গ্রাম। গ্রামের সুয়া মিয়া নামের একজন কৃষক একসাথে ৪২ জাতের লেবু চাষ করছেন! স্থানীয়রা অনেকে তার এই সংগ্রহকে লেবু ব্যাংকও বলে থাকেন। জেলার আর কোথাও এত জাতের লেবু চাষ করা হয় কিনা তা কৃষি কর্মকর্তারাও নিশ্চিত করতে পারেননি। এই লেবুতে তার সংসার চলে। এসেছে সচ্ছলতা। তার লেবু নিয়ে গবেষণা করছেন কৃষি বিভাগ।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়,বরুড়ার পৌর সভার কার্যালয় সংলগ্ন গ্রাম শুশুন্ডা। ব্যতিক্রম সব জাতের লেবু চাষের কারণে শুশুন্ডা গ্রামের সুয়া মিয়াকে উপজেলা সদরের প্রায় সবাই চেনেন। বাড়ির আঙিনায় তার বড় লেবুর বাগান। এছাড়া তার আরও চার খণ্ডে রয়েছে লেবু বাগান। তিনি এক একর তিন শতক জমিতে লেবুর চাষ করছেন। লেবু বাগানে ঢুকতে নাকে মিষ্টি সব ঘ্রাণ এসে লাগে। গাছে ঝুলছে ছোট,মাঝারি,বড় আকার ও নানা জাতের লেবু।
সুয়া মিয়া বলেন,১১বছর সৌদি আরবে ছিলেন। রোজগার করে খেয়ে ফেলেছেন। সঞ্চয় করতে পারেননি। বাড়িতে এসে মনে করলেন কিছু করবেন। সে চিন্তায় চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি এলাকায় গিয়ে লেবু চাষ দেখলেন। এলাকায় এসে লেবু চাষ শুরু করলেন। তার লেবু চাষ দেখে অনেকে হাসাহাসি করতো। এই লেবু এখানে হবে কিনা। বাজার পাবে কিনা ইত্যাদি। তিনি বিভিন্ন বাজারে ঘুরে বিভিন্ন জাতের লেবুর চারা সংগ্রহ করেন। এছাড়া স্বজনের মাধ্যমে বিদেশ থেকে লেবুর জাত আনেন। কৃষি অফিসও তাকে বিভিন্ন জাত সরবরাহ করেছেন। তিনি ১৫বছর ধরে লেবু চাষ করছেন। তার বাগানে ৪২জাতের লেবু আছে। এখন তিনি সারা বছর লেবু বিক্রি করেন। তার প্রথমে জমি তৈরি ও চারা লাগানো,কৃষি শ্রমিকে ২লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। এখান তিনি প্রতি বছর লাখ টাকা খরচ বাদ দিয়ে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা আয় করেন। গাছের কলমও বিক্রি করেন লক্ষাধিক টাকার। এছাড়া লেবু বাগানে থানকুনি,হলুদ,আদা,ডাঁটা,পুঁই শাক,পাট শাকসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করেন। যা নিজের পরিবারের চাহিদা পূরণের সাথে বিক্রিও করছেন। বাগানের আয়ে তিনি পরিবার চালানোর সাথে কিছু জমিও ক্রয় করেছেন। তাকে সহায়তা করেন মেঝ ছেলে আবদুল্লাহ আল সোহেল।
আবদুল্লাহ আল সোহেল জানান,তিনি একাদশ শ্রেণীতে পড়েন। তাদের লেখা পড়া,পরিবারের খরচ সব লেবু বাগানের আয় থেকে চলে। তাদের বাগানে সৌদির তায়েফ,ইরান,কানাডা,ভারতসহ বিভিন্ন দেশের লেবু রয়েছে। রয়েছে সিলেটের জারা লেবু,যশোরের কাগজি লেবু, জাম্বুরা লেবু,বারি -৩ ও বারি -৪ প্রভৃতি জাত। হালি ১০০টাকাও বিক্রি করেন কিছু লেবুর জাত। রমজান ও তার পরবর্তী সময়ে বেশি লেবু তারা বিক্রি করেন।
বরুড়ার সাবেক কৃষি কর্মকর্তা, জেলা বীজ প্রত্যয়ন কর্মকর্তা তারিক মাহমুদুল ইসলাম বলেন,সুয়া ওই এলাকার সফল লেবু চাষি। তিনি তার আয় নিয়ে সব সময় খুশি থাকেন।
যে কেউ কম পুঁজিতে লেবু চাষে তার মতো সফল হতে পারেন।
আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র কুমিল্লার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড.মো. ওবায়দুল্লাহ কায়সার বলেন,জানামতে সুয়া মিয়া জেলার বেশি জাতের লেবু চাষকারী কৃষক। তার কিছু জাত নিয়ে আমরা কাজ করছি। আশা করছি তা মাঠে অন্য কৃষকদের জন্য উন্মুক্ত করতে পারবো।
মোবাইল: ০১৭১৭-৯১০৭৭৭
ইমেইল: newsamod@gmailcom
www.amodbd.com