হজের টাকায় মানুষের পাশে

মাহফুজ নান্টুঃ
খুব ইচ্ছে ছিলো স্ত্রী কন্যাকে নিয়ে পবিত্র হজ পালন করবেন। সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার কারনে হজে যেতে পারেননি। তবে মহান সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য পেতে ভিন্ন পথ বেছে নিলেন। হজের জন্য জমানো টাকা খরচ করেছেন করোনায় বিপর্যস্ত অসহায় নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে। কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির সাবেক কোষাধ্যক্ষ এড.জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া। এবছর স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে হজে যাওয়ার জন্য জমানো টাকা করোনায় বিপর্যস্ত নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে খরচ করেন। তাদের হাতে তুলে দিয়েছেন খাদ্য পোষাক ও সামগ্রী।

এড.জাহাঙ্গীর আলম ভূইয়া জানান, করোনা সংক্রমণের শুরুতে তার গ্রামের বাড়ি জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মনোহরপুর থেকে তিনি করোনায় বিপর্যস্তদের নিয়ে কাজ করেন। এলাকার পাঁচ হাজার মানুষের মাঝে মাস্ক বিতরণ করেন। পরে দুই হাজার মানুষের মাঝে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করেন।

২৭ এপ্রিল ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মালাপাড়া ইউনিয়নে ২৭০ জন নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন। গত ১৩ মে উপজেলার ৪’শ জন সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা ও রিক্সা চালকদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন। একই সময়ে আরো ২’শ অন্যান্য পেশার নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে খাদ্র সামগ্রী বিতরণ করেন।

পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে অন্তত নয়শ’জন নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে ঈদের নতুন পোষাক ও ঈদ সামগ্রী বিতরণ করেন।
এড.জাহাঙ্গীর আলম ভুঁইয়া কুমিল্লা মডেল কলেজের দাতা সদস্য। কলেজ পরিবারের পক্ষ থেকে ১০ হাজার মানুষের জন্য ২৫ কেজি করে প্রতিজনকে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়। প্রতিজনের জন্য চাল,ডাল,আটা মসুরির ডাল ছিলো পর্যাপ্ত। এছাড়াও নিজের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নম্বরটি হট নম্বর হিসেবে চালু করেছেন। যেখানে অন্তত মধ্যবিত্ত পরিবারের ১৮৮ জন রেসপন্স করেন। তাদের সবাইর জন্য খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয়।
এড.জাহাঙ্গীর আলম জানান, এ বছর তিনি তার স্ত্রী ও ছোট কন্যাকে নিয়ে হজ করতে যাবেন। সে জন্য নয় লাখ টাকা রেখেছিলেন। করোনার জন্য যেতে পারেননি। তাই অসহায় নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে হজের সেই নয় লাখসহ আরো আট লাখ মিলিয়ে মোট ১৭ লাখ টাকার খাদ্য সামগ্রী ও পোষাক পরিচ্ছেদ তুলে দেন। শুধু তিনিই নন, তার স্ত্রীও বহু মানুষের কাছে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন।

এমন কাজের উৎসাহের নেপথ্যের কথা বলতে গিয়ে এড.জাহাঙ্গীর আলম ভূইয়া বলেন, আমি কলেজে পড়ার সময় থেকে মানুষের জন্য কাজ করার অনুপ্রেরণা পাই। এলাকায় একটি মাদ্রাসা স্থাপন করেছি। শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে লেখাপড়াসহ আবাসিক সুবিধা রয়েছে। যেখান থেকে শতাধিক শিক্ষার্থী হাফেজ হয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সুনামের সাথে ধর্মীয় শিক্ষায় কাজ করছেন। পেশাগত জীবনেও অনেক মামলা বিনা খরচে নিষ্পত্তি করে দিয়েছি। পারিবারিক শিক্ষাটাই আমার ভালো কাজের উৎস। আর এমন ভালো কাজে রয়েছে ঐশ^রিক প্রশান্তি। মানুষের সেবার মাঝেই রয়েছে মহান সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভের সবচেয়ে সহজ উপায়। আমি আমৃত্যু সে কাজটাই করে যেতে চাই ।