হোসাইন মোহাম্মদ দিদার।।
অলকানন্দা উপন্যাস পড়ে হৃদয়ে এক নতুন ভাবনা তৈরি হলো—
বাংলাভাষার একজন নবীন লেখক কেমন করে দেশ-বিদেশি ঘটনা অবলম্বনে— এতো মমতা, এতো প্রেম দিয়ে একটি উপন্যাস দাঁড় করাতে পারে তা লেখকের এই প্রথম সৃষ্টি 'অলাকানন্দ' না পড়লে বুঝতে পারতাম না। এই উপন্যাসের লেখক
শামশাদ সুলতানা খানম এ ক্ষেত্রে আমার দৃষ্টিতে একজন সিদ্ধহস্ত লেখকের পরিচয় দিয়েছেন। কারো কারো দ্বিমত থাকতেই পারে। বইটির —পাতায় পাতায়, বাক্যেবাক্যে তার সাবলীল শব্দের বুনন ও ভাবধারা যেকোনো পাঠককে সহজে আকৃষ্ট করবে। কোনো চরিত্র বর্ণনা করতে গিয়েই পুনরাবৃত্তি ঘটেনি। লেখায় চমৎকার স্বতন্ত্র অবয়ব ফুটিয়েছেন।
বাক্যগঠনেও তিনি এক মনোমুগ্ধকর সংযোগ স্থাপন করেছেন ,শব্দের ব্যবহারেও সতর্ক ও সংযত থেকেছেন বলে তার লেখার স্বকীয়তায় বুঝা যায়।
যে কেউ এই কথা সাহিত্যিকের লেখনীর মায়ায় পড়তে পারেন,মানুষের জীবনের ঘটনার সঙ্গে মিল রেখে হুবহু কলমের ঘূর্ণিতে তুলে ধরাই একজন লেখকের কাজ। সেই কাজটি বিভিন্ন অনুষঙ্গের মিশেলে সহজেই ফুটিয়ে তুলছেন এই ঔপন্যাসিক।
এটি এই কথা সাহিত্যিকের প্রথম উপন্যাস,প্রথম উপন্যাস হলেও তিনি কাব্য, ছোট গল্প লিখে নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে নিজের লেখালেখির হাত পোক্ত করছেন। তার এই উপন্যাসের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা স্থান পেয়েছে, কলমের ছোঁয়ায় ওঠে এসেছে সেইসময়ের কিছু বীভৎসতা। যা আপনাকে ৭১ সালে মুক্তিদ্ধের হৃদয় বিদারক ঘটনার উপর দেশপ্রেম জাগাবে।
তাছাড়া তিনি ৫২ এর ভাষা আন্দোলন ও ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের কথা বলতেও ভুলেননি।
মাধুবীলতা ও নাজিব চরিত্রে শিক্ষক-ছাত্রীর প্রেমের রসায়ন দারুণ বর্ণনায় জাগিয়ে তুলছেন।এ যেন এই সমাজের বাস্তব চিত্র।
এমন ঘটনা তুলে ধরে অবশ্য লেখক প্রতিটি পরিবারকে একটি সতর্ক বার্তা দিয়েছেন।
প্রায়শই ছাত্রী শিক্ষকের এমন ঘটনার খবর চাউর হচ্ছে।
একাধিক চরিত্রের ধারা অব্যাহত রেখে উপন্যাসের শেষোধবি লেখক ভিন্ন এক মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। তবে এই উপন্যাসের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের দিকে শেষেবেলায় আরেকটু সুবিন্যস্ত বা মীমাংসিত হলে পাঠক এক সুখকর অনুভূতি পেয়ে তৃপ্ত হতে পারতেন।
কিন্তু অনেক বোদ্ধার দৃষ্টিতে লেখকের উপন্যাস নিয়ে নেতিবাচক সমালোচনা আসতেও পারে কারণ হিসেবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো—
হিরোশিমা বা মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা নিয়ে অনেক কিছু লেখা আছে,অনেক গল্প কাহিনি হয়েছে,চিত্রায়ন হয়েছে।
এ নিয়ে লেখক নিজ দেশের গল্পের সঙ্গে সংমিশ্রণ ঘটিয়ে ভিনদেশি ঘটনা প্রবাহ তৈরি করায় হয়তো কিছু সাহিত্য সমালোচক বাঁকা চোখে দেখতে পারেন।
অথবা, তার রচিত এই বই থেকে পাঠক প্রকৃতপক্ষে নিজেকে সন্তোষ রাখার মতো কী পজিটিভ বার্তা পেলো?
এমন ভাবনার অবকাশের উত্তর অবশ্যই আছে, তিনি এই উপন্যাসে চৌদ্দটি পর্বে সুবিস্তীর্ণ পরিসরে প্লট তৈরি করে পাঠককে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেছেন।
বিভিন্ন চরিত্রে এই সমাজকে একটি পজেটিভ বার্তা দিয়েছেন। প্রকৃত লেখককের কাজ হলো মানবতার পক্ষে কথা বলা; তিনি অলকানন্দা বা এলি গারফিল্ড চরিত্রটির জীবনাচার তুলে ধরে ভিন্ন আঙ্গিকে মানবতার পক্ষে কথা বলেছেন বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। এই চরিত্রে একটি হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে।
বলা যায়, এলি গারফিল্ড এই উপন্যাসের প্রাণশক্তিপূর্ণ একটি গদ্যায়ন ; যা পাঠক হৃদয় ভাবনার জালে বিভোর থাকতে বাধ্য হবে।
তাছাড়া শুরুতেই কিয়োশি চরিত্রের মাঝে তুলে ধরেছেন যে, মানুষ কেন বারবার মনের মানুষ পরিবর্তন করেন।
এটা খুবই জঘন্যরকম ঘৃণ্য কাজ এমন বিষয় থেকে অবশ্যই পজেটিভ শিক্ষা নিতে পারেন পাঠকমহল।
তাছাড়া কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষার্থীদের দ্বারা র্যাগিং স্বীকারে নাজেহাল হয় নবীন শিক্ষার্থীরা এমন চরম একটি সত্য বিষয় তুলে ধরতে পিছপা হননি এই কথাকার।
আরেক জায়গায় লিখেছেন—রহমান নামের এক ডাক্তার অসুস্থ মানসিক রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলে তাকে তিনি বিয়ে করেছেন।
কারণ সমাজ তো ভালো ও এলিট শ্রেণির মানুষদের বেশি কদর করে কিন্তু সেক্ষেত্রে ডাক্তার রহমানের এই চরিত্র তুলে ধরে এই সমাজকে একটি পজিটিভ বার্তা তুলে দিয়েছেন এই ঔপন্যাসিক
তিনি ডা. রহমান চরিত্রে বুঝিয়েছেন যে, ভাঙা গড়া এই জীবনে একটা অন্নহীন সংসারহীন মানুষকে সঠিক পরিচর্যায় স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো যায়।
তাছাড়াও এই উপন্যাসের একাধিক প্লটে তিনি চরিত্রের স্বার্থে দুএক জায়গায় কবিতা বা গান আওররিয়েছেন কিন্তু সেটা লেখক স্বত্ত্ব তিনি দেননি, এটা অনেক সমালোচক কুটু দৃষ্টিতে দেখতে পারেন; অবশ্যই এ বিষয়ে এই ঔপন্যাসিককে আরও সতর্ক হতে হবে।
এছাড়া লেখক এই বইটি নিজস্ব দর্শন ও চিন্তা তুলে ধরেছেন যেটা পাঠককে স্বস্তি দিবে,যেমন তিনি বলেছেন—
তারপরেও এই ঔপন্যাসিকের প্রথম উপন্যাস সৃষ্টির মধ্য দিয়ে তিনি সফলতার পথে এগিয়ে যাচ্ছেন এমনটাই আভাস পাওয়া যায়। এটি একটি সুন্দর,সার্থক ও ব্যতিক্রমধর্মী উপন্যাস। তবে তিনি ভবিষ্যতে হয়তো আরও ভালো কিছু সৃষ্টি নিয়ে পাঠকের কাছে হাজির হবেন— এমনটাই আগামীর পাঠকের চাওয়া।
মোবাইল: ০১৭১৭-৯১০৭৭৭
ইমেইল: newsamod@gmailcom
www.amodbd.com