১০ কৃষক পরিবারকে উচ্ছেদ করে ভূমিহীনদের জন্য ঘর!

 

অফিস রিপোর্টার।।

কুমিল্লার সদর দক্ষিণে আদালতের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এক কৃষকের জমিতে
আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে
ওই কৃষকদের পরিবার বৃহস্পতিবার বিকেলে কুমিল্লা নগরীর পুলিশ লাইনস এলাকার একটি
মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। অভিযোগ করা হয়, আদালতের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা ও
মামলা চলমান থাকার মধ্যেই ওই কৃষককে সম্পত্তিতে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে।
ভাঙচুর করা হয়েছে তাঁর বাড়ি-ঘর। এছাড়া কেটে নেওয়া হয়েছে বাড়িতে থাকা
বেশকিছু গাছপালা।
ভুক্তভোগী কৃষক সুলতান মিয়া উপজেলা বিজয়পুর ইউনিয়নের রাজারখোলা গ্রামের মৃত
আপ্তব উদ্দিনের ছেলে। সংবাদ সম্মেলনে তাঁর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ওই এলাকার
বাসিন্দা মজিবুর রহমান বাবুল। এ সময় একই এলাকার বাসিন্দা হাতেম আলীসহ কৃষকের
পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
ওই কৃষকের পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো.রেজাউল কবির ও মজিবুর রহমান বাবুল
জানান, উপজেলার রাজারখোলা এলাকায় লালমাই মৌজায় কৃষক সুলতান মিয়া ১৯৮০ সালের
দিকে কয়েকটি দলিলে ১ একর ৫৮ শতক সম্পত্তি ক্রয় করেন। এরপর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত
সেখানে বাড়ি-ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছেন। ওই সম্পত্তির পাশেই পাহাড়ে রয়েছে
সরকারি খাস জমি। ১৯৯৩ সালে বিএস খতিয়ানের জপির হওয়ার সময় কৃষক সুলতান
মিয়ার ওই জমি বাড়ি ভূমি হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়। তবে তখন ভুলক্রমে এটি সরকারের পক্ষে
রেকর্ড হয়। এই খতিয়ান বাতিলের জন্য আদালতে মামলা দায়ের করেন। এই সম্পত্তি দখলের
চেষ্টা শুরু হলে গত বছরের ৮ জুন আদালতের নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মামলা দায়ের করেন। এরপর
আদালত সম্পত্তিতে অন্য কারও প্রবেশ বা দখলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। আদালতের
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সম্প্রতি সময়ে ওই সম্পত্তিতে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে বাড়ি-ঘর
ভাঙচুর করা হয়।
অ্যাডভোকেট মো.রেজাউল কবির বলেন, আদালতের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা ও মামলা চলমান থাকা
অবস্থায় সেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্প করার কোন সুযোগ নেই। উপজেলা সহকারী কমিশনার
(ভূমি) এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে লিগ্যাল নোটিশও দিয়েছি। কিন্তু তাঁরা
কিছুতেই তাঁদের কর্মকা- থামাননি।
কৃষক সুলতান মিয়া বলেন, আমি কৃষক মানুষ, পড়াশোনা জানি না। ১৯৮০ সাল থেকে
এই সম্পত্তিতে আমার বসবাস। আমার সব শেষ হয়ে গেছে। আমি পরিবার নিয়ে এখন
রাস্তায় নেমে এসেছি। আমি প্রশাসনের কাছে ন্যায় বিচার চাই। এটা আমার কষ্টে
কেনা সম্পত্তি। আশ-পাশে অনেক সরকারি খাস জায়গা আছে, আমার সম্পত্তিতে কেন
আশ্রয়ণ প্রকল্প করতে হবে? আদালতে মামলা নিষ্পত্তি হলে আমার বিশ^াস রায় আমার পক্ষেই
আসবে। কারণ আমার সকল কাগজপত্র আছে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুর রহমান বলেন, ওই সম্পত্তি সুলতান মিয়ার দখলে থাকলেও এর সকল কাগজপত্র সরকারের পক্ষে। সেখানে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার বিষয়টি
আমার জানা নেই। আমরা উচ্ছেদ মামলা করেই তারপর সরকারি সম্পত্তি দখলমুক্ত করেছি।
বর্তমানে সেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। তাঁদের এসব অভিযোগ ও
দাবি সঠিক নয়।