।। প্রকৌশলী মীর ফজলে রাব্বী ।।
গ্যাস অফুরন্ত নয়, তার উপর এটি অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ। দেশের সার, বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ,শিল্পকারখানা, গাড়ির জ্বালানি হিসাবে বহুল প্রচলিত ব্যবহারে আমরা অভ্যস্ত।
বাড়িঘরে গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ হলে কি পরিমাণ জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়,তা ভুক্তভোগীরা অবগত। দেশে গ্যাস বিতরণ এজেন্সিগুলি শত সীমাবদ্ধতা নিয়ে গ্যাস সরবরাহের মত অতি ঝুঁকিপুর্ণ কাজটি দিনের
২৪ঘন্টা ৩৬৫দিন করে যাচ্ছে। এমনকি কোভিড পরিস্থিতির মত ভয়ানক পরিস্থিতিতে গ্যাস কর্মীগণ নিরলসভাবে গ্যাস সরবরাহ কাজে নিয়োজিত থেকে হারিয়েছিলেন প্রাণ এবং আক্রান্তের হারও ছিল আশংকাজনক। কিন্তু গ্যাস ব্যবহারকারী হিসাবে আমরা নিজেরা কি সঠিক দায়িত্ব পালন করছি। গ্যাস এজেন্সিগুলি বকেয়া বিলের পরিমাণ অনেক। অবস্থা এমনই ভয়াবহ যে, বাড়ি গিয়ে না বললে মনে হয় গ্যাসের বিল পরিশোধে আগ্রহ প্রকাশ করি না, অথচ মোবাইল ফোনের কয়েক
ক্লিকেই আপনি বিল পরিশোধ করতে পারছেন। অবৈধ গ্যাস ব্যবহার নিয়ে এমন আচরণ করি যে,গ্যাসের কর্মীদের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ পুলিশ উপস্থিতির প্রয়োজন হয়ে পড়ে। অথচ সহজেই অবৈধ গ্যাস ব্যবহারে নিভৃত হতে পারি। দীর্ঘ ৬ বছরের
অধিক সময় ধরে আবাসিকে গ্যাস সংযোগ বন্ধ জানা থাকলেও নতুন ভবনে গ্যাস সংযোগ নিতে জালিয়াতির আশ্রয় নিচ্ছি। হয়ত অসাধু গ্যাস কর্মী/দালাল/ফরিয়ার আচরণ মিথ্যা আশ্বাস জেনেও নিজকে প্রলুব্দ করছি। রাতের আধাঁরে মাইলের পর মাইল নিম্নমানের ঝুঁকিপুর্ণ পাইপ ব্যবহার করে গ্যাসের লাইন স্থাপনে এলাকার দুস্কৃতিকারীদের সহায়তা করছি, হয়ত জানি না, কি বোমা নিয়ে এসেছি এলাকায়। অসাবধানতায় বড় ধরনের বিপদে নিজের সন্তান, পরিবারকে নিমজ্জিত করেছি। গত ১ বছরেশত কিলোমিটার পাইপ লাইন জব্দসহ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এই কাজে গ্যাসের ঠিকাদারদের লাইসেন্স বাজেয়াপ্তসহ মামলা হয়েছে। চাকুরিচ্যুত হয়েছে
গ্যাস কর্মীরা। অথচ গ্যাস এজেন্সিগুলির তথ্য ভান্ডার এখন এত ডিজিটালাইজড ,চাইলেই কেউ নতুন করে সুযোগ নিতে পারবেনা। শত সীমাবদ্ধতা ও সীমিত জনবল নিয়ে জনগণের সেবা দেওয়ায় দায়িত্ব নিয়ে এজেন্সিগুলি কাজ করে যাচ্ছে। সকল নাগরিকগণ প্রতিনিয়ত নিজের বাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ করলেও গ্যাসের চুলা/ জিআই লাইন/পিতলের চাবির কোন রক্ষণাবেক্ষণ করেননা । ভাবখানা এমন যে,গ্যাসের দুর্ঘটনা আপনার রান্নাঘরে ঘটলেও দায়িত্ব গ্যাসের এজেন্সিগুলির। নিজ দায়িত্বে গ্যাসের ফিটার দিয়ে এটি সময়ে সময়ে পরীক্ষা করা উচিৎ। নিজে পরিবারের নিরাপত্তার দায়িত্ব আপনাকে নিয়মগুলি যথাযথ ভাবে প্রতিপালন করা উচিৎ। গ্যাসের লাইনেকে সুরক্ষিত রাখতে এজেন্সিগুলিকে বিভিন্ন ব্যবস্থাপনার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। গ্যাসের লাইনের দুর্ঘটনার বেশিরভাগই তৃতীয় পক্ষীয় যা, গ্রাহকের অসচেতনতা , অন্যান্য উন্নয়ন এজেন্সিগুলির সাথে কাজে সমন্বয়হীনতা। যেমন একটি
রাস্তা/ ডেনেজ হবে, তার জন্য সে প্রতিস্থানগুলিকে অনেকগুলি ধাপ অতিক্রম করার প্রয়োজন পড়ে, অনেক সময় তা ২/৩ বছর লাগে যায় । অথচ সে সময়ে উন্নয়ন সংস্থাগুলি একবারের জন্যও গ্যাস বিতরণ এজেন্সিগুলিকে অবহিত করার প্রয়োজন বোধ করেনা। ফলাফল রাস্তা/ ড্রেনেজ করার সময় উচ্চ-ঝুঁকিপুর্ণ গ্যাসের লাইনে লিকেজ, লিকেজ থেকে অগ্নিকা-, সম্পদহানি । সুষ্ঠু সমন্বয়হীনতার অভাবে রাষ্ট্রের অর্থের অবচয় হচ্ছে। দেশের উন্নয়নের নাগরিকগণের প্রত্যেক্ষ উপস্থিতিসহ
সকল স্তরে সমন্বয়ে বিষয়টি অতীব আবশ্যক। সকলের মানসিকতা পরিবর্তন রাষ্ট্রকে আধুনিক,উন্নত ও নতুন প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য করার ক্ষেত্রে অনেকদূর এগিয়ে নিবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গঠনে সকলের অংশগ্রহণ অতীব জরুরি।
লেখক- সম্মানী সম্পাদক, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ ( আইইবি), কুমিল্লা।
মোবাইল: ০১৭১৭-৯১০৭৭৭
ইমেইল: newsamod@gmailcom
www.amodbd.com