উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়াকে আশুগঞ্জে অবাঞ্ছিত ঘোষণা
এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়াকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপি। সোমবার (০২ জানুয়ারি) দুপুরে আশুগঞ্জ বাজারের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে উপজেলা বিএনপির এক জরুরি সভায় এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসন থেকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে পাঁচবার নির্বাচিত হন। সম্প্রতি প্রবীণ এই সংসদ সদস্যের কিছু কর্মকাণ্ডে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি তাকে গত রোববার দল থেকে বহিষ্কার করে। এরই ধারাবাহিকতায় আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপি এহেন পদক্ষেপ নেয়। এবিষয়ে উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার ছেলে মো. মাইনুল হাসান তুষার বলেন, নির্বাচনে বাবার (আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া) অংশগ্রহণের বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। আর দল থেকে বহিষ্কার ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা বিএনপির একান্ত দলীয় বিষয়।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক গত ১১ ডিসেম্বর বিএনপির যে সাতজন এম.পি জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন তার মধ্যে উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া একজন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। এদিকে নির্বাচন কমিশন এই আসনে উপ-নির্বাচনের তপসিল ঘোষণা করলে তিনি গত ২৯ ডিসেম্বর ব্যক্তিগত কারণে দল থেকে পদত্যাগ করেন। উপ-নির্বাচনে অংশ নিতে গত রোববার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা নির্বাচন অফিস থেকে মনোনয়নপত্রও সংগ্রহ করেন। প্রবীণ এই সাবেক সংসদ সদস্যের এহেন কর্মকাণ্ডে সারা দেশের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন। জেলা-উপজেলায় বিএনপির নেতাকর্মীরা পড়েন বিব্রতকর অবস্থায়। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় বিএনপি গত রোববার (০১ জানুয়ারি) তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেন। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার দুপুরে উপজেলা বিএনপি দলীয় সিদ্ধান্তে তাঁকে এবং তার ছেলেকে আশুগঞ্জ উপজেলায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।
আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপি‘র সভায় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপি‘র সভাপতি মো. শাহজাহান সিরাজ, সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. ইদ্রিস আলী ভুঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. নাসির মুন্সি ও সাংগঠনিক সম্পাদক মো. কামাল হোসেন জয় প্রমুখ। সভায় বক্তারা বলেন, বিএনপি‘র সাবেক এ নেতা বিএনপি থেকে পাঁচবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং অনেক সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। গত নির্বাচনে জয়ী হয়ে তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদেরও মূল্যায়ন করেননি। এছাড়া তিনি দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে উপ-নির্বাচনে অংশগ্রহণে মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেন। তাই তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি তাঁর ছেলেকে (মাইনুল হাসান তুষার) উপজেলা বিএনপি অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আরও বলেন, উপজেলা বিএনপির কোন নেতাকর্মী তার সঙ্গে যোগাযোগ বা নির্বাচনী কাজে সহযোগিতা করলে তার বিরূদ্ধে দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার মতামত জানতে তাঁর ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তাঁর ছেলে তুষার ফোনটি রিসিভ করে বলেন, ‘আমার বাবা বিএনপি‘র প্রবীণ নেতা হলেও ইদানিং দল তাকে তেমন সম্মান দেয়নি। তাছাড়া ব্যক্তিগত কারণে তিনি দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। আর নির্বাচনের ব্যাপারে একজন আমার বাবার পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণে এলাকাবাসী ও কর্মী সমর্থকদের পক্ষ থেকে চাপ রয়েছে। তবে দল থেকে বহিষ্কার ও অবাঞ্ছিত ঘোষণা বিএনপির একান্ত দলীয় বিষয়।’
উল্লেখ্য, উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া ১৯৭৯ সালে প্রথম তৎকালীন কুমিল্লা-১ (নাসিরনগর ও সরাইলের একাংশ) বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে তিনি একই বছর বিএনপিতে যোগ দেন। এরপর তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২-(সরাইল-আশুগঞ্ জ) আসন থেকে ১৯৯১ সালে এবং ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনসহ ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়া তিনি ২৭ বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন।