জঙ্গলের খুপড়িতে সাপ-ইঁদুরের সাথে ১৭বছর!


পাশে দাঁড়ালেন দেবিদ্বার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান
অফিস রিপোর্টার।।
১৭ বছর জঙ্গলে খুপড়িতে ছিলেন। শিয়াল, সাপ,ইঁদুর ও বিচ্ছুর সাথে অর্ধাহার- অনাহারে কেটেছে সময়। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করেছেন। তিনি মুজিবুর রহমান (৬০)। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশের পর ঘটনাস্থলে যান কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। শুনলেন চিরকুমার মুজিবুর রহমানের মানবেতর জীবনযাপনের গল্প। তার পাশে দাঁড়ালেন দেবিদ্বার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ।

inside post


রোববার কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ১০নং গুনাইঘর দক্ষিণ ইউনিয়নের মাশিকাড়া গ্রামের উত্তরপাড়া মৌলভী বাড়ির পাশে একটি জঙ্গলে গিয়ে এমন দৃশ্যের দেখা মিলে। একটি জঙ্গলের মাঝে ঝোপ-বাঁশঝাড় পেরিয়ে দেখা যায় পলিথিনে মোড়ানো ছাউনির একটি ছোট খুুপড়িতে বসে আছেন ৬০ বছর বয়সী চিরকুমার মুজিবুর রহমান।
প্রশাসনের লোকজন আসার সংবাদে বেরিয়ে আসেন খুপড়ি থেকে। বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে কান্নাজড়িত কন্ঠে খুপড়িতে বসবাস করার জীবনের গল্প শোনালেন মুজিবুর। তার গল্প শুনে অশ্রুসিক্ত সবার চোখ। অর্থ-বিত্তে সাজানো সংসার। সৎ ভাইদের রোষানলে পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করায় তাকে জঙ্গলেই ঠাঁই নিতে হয়েছে। জঙ্গলের খুপড়িতে থাকায় বিয়েটাও করতে পারেননি তিনি।
মুজিবুর রহমান জানান, তার বাবা মরহুম লাল মিয়ার প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন তার মাকে। এ সংসারে মায়ের এক মাত্র সন্তান ছিলেন তিনি। প্রথম সংসারে ২ ভাই ফরিদুল ইসলাম ও জহিরুল ইসলাম। দ্বিতীয় সংসারে মো. মুজিবুর রহমান। তার বাবা লাল মিয়া রেলওয়েতে চাকরি করতেন। সৎ ভাই ফরিদুল আলম পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে চাকরি করতেন। মুজিবুর কাঁচপুর মালেক জুট মিলে চাকরি করে সৎ ভাই জহিরুল ইসলামকে বিএ পাশ করান। সেই জহিরুল ইসলামই তার পৈত্রিক সম্পত্তির ১০৫ শতাংশ জমির মধ্যে ৮৫ শতাংশ জমি লিখে নেয়। তাকেও বাড়ি থেকে বের করে দেয়। স্থানীয়দের সহযোগিতায় ২০০৭ সাল থেকে জঙ্গলে খুপড়ি বানিয়ে ঠাঁই নেন। মিলের চাকরি ছেড়ে বাড়িতে এসে ইলেক্ট্রিক লাইনের কাজ শুরু করেন। বাম চোখটিও নষ্ট হয় গেছে। বয়স হয়েছে এখন কাজে নিতে চায়না কেউ। অর্ধাহার-অনাহারে, রোদ, ঝড়-বাদলে, শেয়ালের হাঁক-ডাকের মাঝেই খুপড়ির মধ্যেই থাকেন। কখনো লাকড়ির চুলায় ভাত আর আলু সিদ্ধ করে লবণ মরিচ দিয়ে খেতেন। কখনো শুকনা খাবার খেয়ে থাকেন। তিনি দুঃখ করে আরো বলেন, শিয়াল-সাপ-বিচ্ছু-মশা আমার ক্ষতি কওে নাই- মানুষ যা করেছে।
এ ব্যাপাওে জানতে মুজিবুরের ভাই জহিরুলকে পাওয়া যায়নি। জহিরুলের বড় ভাই ফরিদুল আলমের ছেলে আল-আমিন জানান, আমার কাকা অভিমানী, আমার দাদার জায়গা জমি ভাগ হয়নি এখনো, তবে চাচা কিছু জমি নিজ নামে লিখে নিয়েছে। চাচার পাওনা বুঝিয়ে দিতে আমাদের আপত্তি নাই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিগার সুলতানা জানান, মজিবুর রহমানকে তার পিতার জমির কাগজপত্র নিয়ে এসিল্যান্ডের সাথে দেখা করার জন্য বলা হয়েছে। কাগজপত্র ঠিক থাকলে তার পাওনা জমি তাকে উদ্ধার করে দেওয়া হবে। না হয় আবাসনের ব্যবস্থা করে দেব।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা (উঃ) জেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আবুল কালাম আজাদ তাৎক্ষণিক চক্ষু চিকিৎসার জন্য ১০ হাজার টাকা প্রদান করেন। স্বচ্ছলতা আনয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও আশ্বাস দেন।

আরো পড়ুন