হত্যা মামলার আসামি আ.লীগ নেতা এখন এনসিপির নেতৃত্বে!

inside post

প্রতিনিধি:

কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপির কমিটিতে হত্যা মামলার আসামি আওয়ামী লীগ নেতাকে স্থান দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

কেন্দ্রীয় এনসিপির সদস্য সচিব আক্তার হোসেন ও মূখ্য সংগঠক দক্ষিণাঞ্চল হাসনাত আব্দুল্লাহ স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে সমন্বয়কারী করা হয়েছে ভূৃঁইয়া মো. সানাউল্লাহ বাবুলকে। যুগ্ম সমন্বয়কারী করা হয়েছে খন্দকার ফারুককে। পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা জসিমউদ্দীনকে সদস্য করা হয়েছে।

এলাকায় জনশ্রুতি আছে খন্দকার ফারুক আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে পরিচিত। তার বাড়ি পৌরসভার দোনারচর গ্রামে। তিনি মৃত কাসেম খন্দকারের পুত্র।
তার রাজনীতি উত্থান ঘটে আওয়ামী লীগের রাজনীতির পথ ধরে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮
দাউদকান্দি পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের তার চাচাতো ভাই কমিশনার খন্দকার মিলনের হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। এরপর থেকে খন্দকার ফারুকের ভাগ্য বদলাতে থাকে। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে তিনি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। উপজেলা থেকে টেণ্ডারবাজি, বালুমহাল নিয়ন্ত্রণ তার হাতে আসতে থাকতে। বালু মহলের নিয়ন্ত্রণ ও ভাগভাটোয়ার নিয়ে কমিশনার মিলন খন্দকারের সঙ্গে বিরোধ হয় খন্দকার ফারুকের। এই বিরোধের জেরে কমিশনার খন্দকার মিলনকে ২০১৩ সালে হত্যার অভিযোগ উঠে  খন্দকার ফারুকসহ তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে। এই হত্যা মামলায় অন্যতম আসামি করা হয় খন্দকার ফারুককে। খন্দকার ফারুক প্রায় ডজনখানেক মামলার আসামি হয়। এক পর্যায়ে তিনি দেশ ছাড়েন। প্রায় দীর্ঘদিন দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দেশে ফিরে কুমিল্লা-১ আসনের তখনকার সাংসদ মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূৃঁইয়াকে ম্যানেজ করে দাউদকান্দিতে ফিরে আসেন। সুবিদ আলী ভূঁইয়ার আজ্ঞাবহ হয়ে তার পক্ষে মাঠ গরম করেন । দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূঁইয়া নৌকার টিকেট না পাওয়া খন্দকার ফারুকও গা ঢাকা দেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় আসেন।

সে বেশ কিছুদিন রাজনীতি থেকে দূরে থাকলেও পরবর্তীতে কুমিল্লা -১ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকার টিকেট পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর। তিনি এমপি হওয়ার পর ভূঁইয়া পরিবারের ঘনিষ্ঠ হওয়ার কোণঠাসা হয়ে যায় খন্দকার ফারুক। নিজেকে গুছিয়ে নেন রাজনীতি থেকে। সেই থেকে তাকে আর আওয়ামী লীগের সভা মিছিলে দেখা য়ায় নি।

তবে তার আধিপত্য ধরে রাখতে কৌশলে এনসিপি কেন্দ্রীয় নেতা নাহিদ ইসলাম,সামান্তাসহ অনেকের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এনসিপি নেতাদের সঙ্গে দেখা স্বাক্ষাৎ করে ছবি তুলে সেসব ছবি তার নিজস্ব ফেসবুক ওয়ালেও দিতে দেখা যায়।

এ নিয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপি নির্বাহী সদস্য ড. খন্দকার মারুফ হোসন ফেসবুক একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি শুক্রবার(৬ জুন) বিকালে তার নিজস্ব ওয়ালে লিখেন,”
একাধিক হত্যা মামলার আসামি ও যুবলীগ নেতা খন্দকার ফারুক ও পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা বিএম জসিম উদ্দিন কিভাবে দাউদকান্দি উপজেলা এনসিপির যুগ্ম সমন্বয়কারী হয় তা দাউদকান্দিবাসী জানতে চায়। এনসিপি কি খুনি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের দায়িত্ব নিয়েছে? ফ্যাসিস্ট খুনি আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের নামে নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী পুর্নবাসন করার কোনও সুযোগ দেয়া হবে না ইনশাআল্লাহ।”

এবিষয়ে জানতে খন্দকার ফারুকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কল রিসিভ না করায় কোনো প্রতিক্রিয়া জানা যায় নি। কেন্দ্রীয় নেতা মূখ্য সংগঠক দক্ষিণাঞ্চল হাসনাত আব্দুল্লাহর ব্যবহৃত একটি মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি কল রিসিভ না করায় কোনো মন্তব্য জানা যায় নি।

আরো পড়ুন