নটির মসজিদ ঘিরে নতুন সম্ভাবনা

মহিউদ্দিন মোল্লা।।
যেকোন সময় ভেঙে পড়তে পারে। এখনও বটের শেকড়ে ঝুলছে তিনশ’ বছরের ইতিহাস। এমন ভগ্নদশা কুমিল্লা গোমতী নদীর পাড়ে আদর্শ সদর উপজেলার মাঝিগাছায় অবস্থিত নুরজাহান মসজিদের। এনিয়ে কিছুদিন আগেও বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিলো। বৃহষ্পতিবার মসজিদটি পরিদর্শনে যান প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের একটি দল। এতে মসজিটি সংরক্ষণে আশার আলো দেখছেন স্থানীয়রা। এদিকে প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এটি সংরক্ষণে প্রস্তাব পাঠানো হবে বলে জানান।
জনশ্রুতি আছে,এই মসজিদে কখনো আজান ও নামাজ হয়নি। কারণ এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ত্রিপুরা মহারাজা ২য় ধর্ম-মানিক্যের রাজ দরবারের একজন নর্তকী। এটি দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে মানুষ ভিড় জমান।
স্থানীয়দের ধারণা, এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল তৎকালীন ত্রিপুরার রাজা ২য় ধর্ম-মানিক্যের শাসন আমল ১৭১৪-১৭৩৪ সালের মাঝে। মসজিদের পূর্ব, দক্ষিণ, পশ্চিম পাশে কাঠের ছ-মিল ও দোকান রয়েছে। এতে মসজিদটি আড়াল হয়ে গেছে। উত্তর পাশে কবরস্থান রয়েছে। মসজিদের গম্বুজের একাংশ ভেঙে পড়েছে। দেয়ালগুলোও ফাটা। গাছের শেকড় আকড়ে ধরে এখনও টিকে আছে মসজিদটি।
জনশ্রতি রয়েছে, গোমতীর উত্তর পাড়ে মাঝিগাছা গ্রামে তিন বোন নুরজাহান, মোগরজান ও ফুলজান বসবাস করতেন। একদিন কিশোরী নুরজাহানকে সাপে কামড়ালে ভেলায় তাকে গোমতী নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। ত্রিপুরা মহারাজার রাজ দরবারের ব্যক্তিরা তাকে দেখে রাজপ্রাসাদে নিয়ে সুস্থ করে তোলেন। পরবর্তীতে রাজদরবারের মেনেকা তাকে নাচ-গান শিখিয়ে সেরা নর্তকীতে পরিণত করেন। নর্তকী পেশায় রাজা মহারাজাদের দরবারে প্রায় ৩৫ বছর কাটানোর পর মধ্য বয়সে নুরজাহান রাজ দরবার থেকে বিদায় নিয়ে জন্মস্থান মাঝিগাছায় একজন জমিদারের বিধবা স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস শুরু করেন। প্রাসাদ ছেড়ে আসার সময় ত্রিপুরার মহারাজা নুরজাহানকে মাঝিগাছায় কয়েক একর জমি, প্রচুর অর্থ ও স্বর্ণালংকার দান করেন। তিনি গ্রামের মানুষদের সাহায্য সহযোগিতা করতেন। এক সময় অতীত কৃতকর্মের প্রায়শ্চিত্তের জন্য নুরজাহান এলাকায় একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। নুরজাহান গ্রামবাসীদের সঙ্গে বসে মসজিদে নামাজ পড়ার দিন তারিখ ধার্য করতে সভা ডাকেন। এর মধ্যে নুরজাহানের অতীত জীবন জানাজানি হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয় নুরজাহানের অর্থে নির্মিত মসজিদে কেউ নামাজ পড়বে না। সেই সিদ্ধান্তের পর থেকেই এ মসজিদে কোনদিন আজান হয়নি। কেউ নামাজ পড়েনি। এ ঘটনার পর নুরজাহান দুঃখে-কষ্টে নিজ গৃহে একাকীত্ব জীবন কাটিয়েছেন বেশ কয়েক বছর।
অনেকের মতে, গ্রামের মানুষের ওই আচরণে আঘাত পেয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে অন্যত্র চলে গেছেন নুরজাহান। কারো মতে, গ্রামের মানুষের অপবাদ সহ্য করতে না পেরে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তার নির্মিত মসজিদের পাশেই তাকে সমাহিত করা হয়েছে।
লেখক আহম্মেদ কবীর বলেন,এই মসজিদটির প্রকৃত ইতিহাস কেউ জানেন না। এটি নিয়ে প্রথম তিনি একটি উপন্যাস লিখেছেন ‘নুরজাহান বাঈয়ের মসজিদ’নামে। যা ছিলো জনশ্রুতি ও কল্পনার মিশ্রণে। পরবর্তীতে এটি নিয়ে আরো অনেক লেখালেখি হয়েছে। মসজিদটি এখন ধ্বংসের মুখে রয়েছে। এটি সংস্কার করে একটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে গড়ে তোলা যেতে পারে।
প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কুমিল্লা আঞ্চলিক কার্যালয়ের ফিল্ড অফিসার মো. আবু সাইদ ইনাম তানভিরুল বলেন, মসজিদটি পরিদর্শন করেছেন। এটির জরাজীর্ণ অবস্থা। এটি সংরক্ষণের জন্য প্রস্তাবনা প্রেরণ করবেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পরিদর্শন করে এটির সম্ভাব্যতা যাছাই করবেন। তারা প্রয়োজন মনে করলে এটি সংরক্ষণ হতে পারে।
