একই কর্মস্থলে ২৮ বছর!

বাতিসা ইউপি সচিবের যত অনিয়ম ও দুর্নীতি

প্রতিনিধি।।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাতিসা ইউনিয়ন পরিষদে কর্মরত সচিব মনির হোসেনের স্বেচ্ছাচারিতায় অতিষ্ঠ ইউনিয়নের বাসিন্দারা। দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে সে নিজের খেয়াল খুশিমতো অফিসে আসা যাওয়া, বিভিন্ন অজুহাতে নাগরিক সেবায় হয়রানি ও অতিরিক্ত অর্থ আদায়, উন্নয়ন প্রকল্পে ইউপি সদস্যদের স্বাক্ষর জালিয়াতি, ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে টাকা উত্তোলনসহ তার বিরুদ্ধে রয়েছে অনেক অভিযোগ। দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে থাকার সুবাদে তিনি গড়ে তুলেছেন নিজস্ব চক্র।
জানা গেছে কুমিল্লা সদর উপজেলার মোগলটুলী গাংচর এলাকার বাসিন্দা হামিদ আলীর সন্তান মোঃ মনির হোসেন ১৯৯৭ সালে জেলার দেবিদ্বার উপজেলার ধামতি ইউনিয়ন পরিষদে সচিব হিসেবে প্রথম যোগদান করেন। সেখান থেকে ১৯৯৮ সালের শেষের দিকে বাতিসা ইউনিয়ন পরিষদে যোগ দেন। ওই সময় থেকে অদ্যবদি পর্যন্ত বিগত ২৮ বছর তিনি বাতিসা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এর মাঝে ২০১৭ সালে একবার বদলি হয়ে একই উপজেলার ঘোলপাশা ইউনিয়ন পরিষদে যোগদান করলেও মাত্র ৬ মাস পরেই আবার তার পছন্দের কর্মস্হল বাতিসায় ফিরে আসেন। টানা ২৮ বছরে সচিব মনির হোসেন কাজ করেছেন ৫ জন চেয়ারম্যান যথাক্রমে মীর হোসেন মীরু, রেজাউল হক খোকন, জাহিদ হোসেন টিপু (২ সেশন), কাজী ফখরুল আলম ফরহাদ ও প্যানেল চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিনের সাথে। তবে তার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ বিগত আওয়ামী শাসনামল থেকে। আওয়ামী লীগের ১৭ বছরে চরম স্বেচ্ছাচারিতা করা এই সচিব জুলাই অভ্যুত্থানের পরও বহাল তবিয়তে থাকায় ক্ষোভে ফোঁসে উঠেছে স্হানীয় অনেক বাসিন্দা। তার বহু অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য প্রমাণ সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেন অনেকে।
সম্প্রতি জন্ম নিবন্ধনে অতিরিক্ত অর্থ দাবি করা নিয়ে সেবা প্রত্যাশীর সাথে বাকবিতন্ডার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিওতে জন্ম নিবন্ধন ফি ৩০০ টাকা দাবি করেন এই সচিব। ওই পোস্টে শত শত মানুষ তাদের মন্তব্যে বিভিন্ন সময়ে হয়রানি ও অতিরিক্ত অর্থ প্রদানের কথা তুলে ধরেন। তাতে আনোয়ার হোসেন নামের একজন লিখেন “কয়েকদিন ঘুরেও সে ছেলের জন্ম নিবন্ধন করাতে পারেনি। কারণ সচিব নিয়মিত অফিসে আসেন না। ফোন করলে নানা ব্যস্ততার কথা বলেন।”
কাজী আবদুর রহমান নামের একজন অভিযোগ করেন, “ছোট ভাইয়ের বিদেশ যাওয়ার জন্য জন্ম নিবন্ধনে বয়স সংশোধন করতে গেলে সচিব বলেন এটি সম্ভব না। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পর তিনি আমার হাতে গোপনে একটি মোবাইল নম্বর ধরিয়ে দিয়ে বলেন রাতে যোগাযোগ করতে।”
তবে ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষের প্রশ্ন একই কর্মস্থলে কোন অদৃশ্য বলে কীভাবে ২৮ বছর এই সচিব বহাল আছেন। দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে থাকার সুযোগে সব রাজনৈতিক দলের নেতা ও প্রভাবশালীদের সাথে গড়ে তুলেছেন সখ্যতা। তাই সরকার পাল্টালেও এবং শত অভিযোগেও নড়েনা সচিব মনির হোসেনের চেয়ার।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সচিব মনির হোসেন বলেন, ফেইজবুকে ‘ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি পুরনো। বিগত ১৭ বছরে দলীয় চেয়ারম্যানদের নির্ধারিত ফি নেয়া হয়েছে। তখন চেয়ারম্যানরাই নির্ধারণ করে দিতো কোন সেবায় কতো নিবে। সে সময় সরকার নির্ধারিত নাগরিক সেবা ফি নেয়া হতো না।’
ইউপি সচিব মনির হোসেনের বিরুদ্ধে স্হানীয় নাগরিকদের অভিযোগের ব্যাপারে প্যানেল চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কাছে কেউ লিখিত অভিযোগ দেয় নি, তবে জন্মনিবন্ধন, নাগরিক সনদসহ অন্যান্য কাজে সরকার নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত টাকা আদায়ের ব্যাপারে মাঝেমাঝে কিছু অভিযোগ আসলে অতিরিক্ত টাকা না নিতে আমি নিষেধ করি। একই কর্মস্থলে দীর্ঘ দিন চাকরির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সিদ্ধান্তের এখতিয়ার।’
একই কর্মস্থলে একজন কর্মচারী কিভাবে টানা ২৮ বছর দায়িত্বে থাকে এবং নাগরিক সেবায় ইউপি সচিব কর্তৃক হয়রানি ও তার বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জামাল হোসেন বলেন, ‘তার ব্যাপারে স্হানীয় নাগরিকদের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্হা নেয়া হবে। আর কোন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী একই কর্মস্থলে টানা ২৮ বছর দায়িত্বে থাকার সুযোগ নেই। বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখবো।’