লাউ গ্রামের মিষ্টি সকাল


মহিউদ্দিন মোল্লা।।
হেমন্তের মাঝমাঝির সকাল। দূর্বায় কুয়াশা নামতে শুরু করেছে। বাতসের গায়েও শীত আসার বার্তা। সূর্যও একটু আলসেমি করছে। এই সময়ে এমন দৃশ্য বাংলাদেশের প্রায় সব গ্রামেই চোখে পড়ে। তবে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার লালমতি গ্রামে এই দৃশ্যটাও আরও একটু বেশি স্নিগ্ধ ও সুন্দর। গ্রাম জুড়ে লাউয়ের মাচা। মাচায় ঝুলছে নানা আকারের লাউ। মাচার ফাঁক দিয়ে প্রবেশ করা সকালের আলো গায়ে মেখে লাউ গুলোও ঝলমলিয়ে উঠে।


সরেজমিন লালমতি গ্রামের মিলগেট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়,লালমাই পাহাড়ের নিকটবর্তী গ্রাম লালমতি। গ্রামটিতে ভালো সবজির আবাদ হয়। বেশি হয় বরবটি, কচুরচড়া ও লাউ। কেউ লাউয়ের মরা পাতা ফেলছেন। কেউ ঘাস পরিস্কার করছেন। কেউ লাউ কাটছেন। পাশের পদুয়ার বাজারে বৃহস্পতিবার ও রবিবার হাট বসে। এই দুই দিন সকাল বেশি ব্যস্ততায় কাটে কৃষকদের। লাউ কেটে জমি সংলগ্ন সড়কের পাশে রাখা হচ্ছে। এরপর পাইকার এসে নিয়ে যান। অনেক কৃষক সাইকেলের দুই পাশে ঝুড়ি ঝুলিয়ে লাউ নিয়ে গ্রামের পথে বেরিয়ে যান। তারা একটু বেশি দাম পান। লালমতি মেইল গেইট এলাকায় একটি ত্রিমোহনী আছে। সেখানে কিছু দোকান বসে। সেই মোড়েও চলে লাউয়ের বেচাকেনা।
কৃষক সিরাজ মিয়া বলেন, লালমতি গ্রামে কয়েক যুগ বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে লাউয়ের চাষ হয়। তিনি ২০শতক জমিতে লাউ চাষ করেছেন। তিনি একশ‘ লাউ পাইকারি ২৫০০টাকা বিক্রি করেন। এতে তার লাভ কম হয়। তিনি হেঁটে বিক্রি করলে তার লাভ দ্বিগুণের বেশি হয়।
আবদুল মালেক বলেন, এবার লাউয়ের ভালো ফলন হয়েছে, তবে দাম কম পাচ্ছি। সারের ও বীজের দাম বেশি হওয়ায় লাভ কম হবে। আমাদের লালমতিসহ পাশের সুধন্যপুর.উত্তর বিজয়পুর, দক্ষিণ বিজয়পুর,হোসেনপুর লাউয়ের বাণিজ্যিক চাষ হয়।
মিজানুর রহমান বলেন, দেশের বাইরে ছিলাম ১৯বছর। দেশে এসে দুই বছর ধরে লাউয়ের চাষ করছি। গত বছর ভালো দাম পেয়েছি, এবছর দাম কম পাচ্ছি। আগে একশ‘ লাউ বিক্রি করে ৭হাজার- ১০হাজার টাকা পেতাম, এবার ৩০০০হাজারের বেশি পাচ্ছি না। কখনও আরো কম পাচ্ছি।
পাইকারি ক্রেতা সাদেক মিয়া বলেন, সবার লাউ একসাথে উঠায় দাম কমেছে। আগে তো পাইকারি ৮০টাকা পেয়েছে। এখন তা ২৫-৩০ হয়ে গেছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার জোনায়েদ কবির খান বলেন, সদর দক্ষিণ উপজেলায় ৩০ হেক্টর জমিতে লাউয়ের চাষ হয়। পাহাড়ি এলাকায় হয় ৮ হেক্টর জমিতে লাউয়ের চাষ। লালমতি গ্রামসহ কিসমত ব্লকে ২হেক্টর জমিতে লাউয়ের চাষ হচ্ছে । আমরা তাদের পরামর্শ দিয়ে থাকে। তারা লাউয়ের চাষ করে খুশি, ওই এলাকায় আগামীতে আরো আবাদ বাড়বে।