কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ: একটি চলমান ইতিহাস– ড. মোঃ রাজু আহাম্মদ
আমি
আমার বাবা
এবং তার বাবা
এবং তার বাবা
আমরা সবাই
গত একশ’ বছর
আমাদের জীবনে কুসুমফোটার কালে
ঠাঁই পেয়েছি সরসীতীরের এই আলোর ভুবনে
হয়তো মানুষ হয়েছি হয়তো হইনি
হয়তো মানুষকে ভালবাসতে পেরেছি হয়তো পারিনি
তবু শতবর্ষী হে বন্ধু চিরঞ্জীব সুহৃদ আমার
তোমার জন্যে এক বুক ভালবাসা
একদিন এই জনপদে জেগে উঠে শুনি
আমাদের কলেজের নাকি বয়স হয়ে গেছে একশ বছর
কী যে খুশি লাগলো সেদিন
যেন শতায়ু হয়েছেন আমাদের মা
যেন চারদিকে ছড়িয়ে আলো
দাড়িয়ে রয়েছেন তিনি তিমিরবিনাশী
আর আমি তার জড়িয়ে গলা
করি উচ্চারণ “মাগো, আমি তোমাকে ভালবাসি
বড় ভালবাসি।”
(কবিতাটি ওল্ড ভিক্টোরিয়ান্স কর্তৃক কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে লিখিত)
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ এক শতকের বেশি সময় বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের শিক্ষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সভ্যতার ধারক ও বাহক। অধ্যাপক আহমদ শরীফ বলেন,“শতবছর আগে এমন একটি কলেজ ছিল এক একটা বিশাল অন্ধকার অঞ্চলে এক একটা সুউচ্চ আলোকস্তম্ভ-এক একটা বাতিঘর স্বরূপ।”কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ তৎকালীন পূর্ব ভারতের অন্যতম নামকরা কলেজ ছিল। এ-সুখ্যাতির পেছনে ছিল কলেজের সৃষ্ট সুদীর্ঘ ইতিহাস ও ঐতিহ্য।
জমিদার রায় বাহাদুর আনন্দচন্দ্র রায় উদ্যোগে ১৮৮৬ সালে ‘রায় এন্ট্রান্স স্কুল’ নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৮৮ সালে মহারানি ভিক্টোরিয়ার রাজত্বের ৫০বছরে সুবর্ণ জয়ন্তী স্মারক চিহ্ন স্বরূপ এটিকে মহারানি ভারতের সম্রাজ্ঞীর নামে ‘ভিক্টোরিয়া স্কুল’-এ নামকরণ করা হয়েছিল (বর্তমান নাম ‘কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল’)। বিদ্যালয়ের সাফল্য এবং প্রদেশের এই অঞ্চলে উচ্চ শিক্ষার ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে রায় বাহাদুর আনন্দচন্দ্র রায় ১৮৯৯ সালের জুনে কলেজের ক্লাস চালু করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন।১৮৯৯ সালের ২২ জুন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এফ.এ স্ট্যান্ডার্ড পর্যন্ত বিদ্যাপীঠের অনুমোদন করে কলেজ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। শুরুতে প্রতিষ্ঠাতা পাঁচ সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিটির সহায়তায় কলেজ পরিচালনা করেন। তিনি সভাপতি এবং কলেজের অধ্যক্ষ কমিটির সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
কলেজ প্রতিষ্ঠাবার্ষিক তারিখ নিয়ে মতদ্বৈততা: কলেজ প্রতিষ্ঠাবার্ষিক তারিখ নিয়ে দুটি মত পাওয়া যায়। একটি হলো ২৪ সেপ্টেম্বর, ১৮৯৯ সাল এবং অন্যটি হলো ২৪ নভেম্বর, ১৮৯৯ সাল। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ সম্পর্কিত একমাত্র গবেষণাধর্মী গ্রন্থেও লেখক অধ্যাপক তিতাশ চৌধুরী তাঁর গ্রন্থ ‘কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ: এ যুগের কিংবদন্তি’-এ ত্রিশ ও চল্লিশ দশকের ভিক্টোরিয়া কলেজ ক্রনিক্যাল ও ম্যাগাজিনগুলির তথ্যের ভিত্তিতে ২৪ সেপ্টেম্বর, ১৮৯৯ সালকে কলেজের প্রতিষ্ঠা বার্ষিক দিবস হিসেবে উল্লেখ করেন।
কলেজ প্রতিষ্ঠাবার্ষিক তারিখ সম্পর্কিত বিভ্রান্তি দূর করার জন্য ওল্ড ভিক্টোরিয়ান্স নামক প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন কলেজের প্রাক্তন ছাত্র আবদুল আউয়ালকে (আবু হেনা) কলেজ প্রতিষ্ঠা বার্ষিক তারিখের তথ্য অনুসন্ধানের দায়িত্ব প্রদান করে। ১৯৯৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর ওল্ড ভিক্টোরিয়ান্সের কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় তিনি ২৪ নভেম্বর, ১৮৯৯ সালকে কলেজের প্রতিষ্ঠা বার্ষিক দিবস হিসেবে যুক্তি উপস্থাপন করেন। এক্ষেত্রে তিনি ১৯৪৬ ও ১৯৪৯ সালের কলেজ ছুটির তালিকায় কলেজের প্রতিষ্ঠাতা আনন্দচন্দ্র রায়-এর জন্মতারিখ ২৪ নভেম্বর তারিখকে ‘ফাউন্ডার্স ডে’ হিসাবে ছুটি ঘোষণা এবং ১৯৪৯ সালের অ্যাডভাইজারি কাউন্সিলের সভার কার্যবিবরণে কলেজের ৫০ বছর পূর্তি তথা সুবর্ণ জয়ন্তী পালনের জন্য ২৫ থেকে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত কর্মসূচি গ্রহণ করার কারণে কলেজ প্রতিষ্ঠাতা আনন্দচন্দ্র রায়-এর জন্মদিনেই কলেজের উদ্বোধন হয়েছিল বলে ধরে নেয়া হয়। অধ্যাপক তিতাশ চৌধুরী এ মতের বিরোধিতা করেন এবং তিনি তাঁর গ্রন্থে বলেন, “সবচেয়ে মজার ব্যাপার, কলেজের প্রতিষ্ঠা বার্ষিক নিয়ে এতো যে আলোচনা, গবেষণা, কালক্ষেপণ, কমিটি গঠন ও তোলপাড় অথচ কিনা কলেজ প্রাক্তন শিক্ষার্থী সমিতি কর্তৃক প্রথম প্রকাশিত পত্রিকা ‘সরসী তীরে’-এর দ্বিতীয় পৃষ্ঠায়ই ওই তারিখ (অর্থাৎ২৪শে সেপ্টেম্বর, ১৮৯৯) লিপিবদ্ধ রয়েছে। কী বিস্ময় !” কলেজ প্রতিষ্ঠাবার্ষিক তারিখ নিয়ে নির্ভুল তথ্যের জন্য আরো গবেষণা হওয়া দরকার।
কলেজ প্রতিষ্ঠাতা রায় বাহাদুর আনন্দচন্দ্র রায়: ‘সিলেট-ত্রিপুরা-নোয়াখালী অঞ্চলে উচ্চতর প্রতীচ্যবিদ্যা দানের ব্যবস্থায় পথিকৃৎ’রায় বাহাদুর আনন্দ চন্দ্র রায় চৌধুরী ছিলেন তাঁর পিতা রামদুলাল রায়ের প্রথম সন্তান। তাঁর জন্ম ১৮৬৩ সালের ২৪ নভেম্বর। জ্ঞানী, বিচক্ষণ ও দয়ালু হিসেবে প্রজাসাধারণের কাছে তিনি ছিলেন এক মহান ব্যক্তিত্ব। তিনি ১৯২০ সালের ৮ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।শ্রীআনন্দচন্দ্র রায় (১৮৬৩-১৯২০) মূলত পশ্চিম দেশীয় লোক ছিলেন। তাঁদের পূর্বপুরুষের উপাধি ছিল সিং। এই বংশের আদিপুরুষের নাম তিলকচন্দ্র সিং।
ভিক্টোরিয়া স্কুল স্থাপনের পরই বৃটিশ সরকার তাঁকে রায় বাহাদুর’ উপাধিতে ভূষিত করেন। পরে এটি কলেজে উন্নীত করা হয়। প্রকৃতপক্ষে, জমিদার আনন্দচন্দ্র রায় ও তাঁর ভ্রাতা সতীশচন্দ্র রায়ের উদ্যম ও উদ্যোগেই প্রধানত এই প্রতিষ্ঠানটি স্থাপিত হয়েছিল।ব্যক্তিগত জীবনে আনন্দচন্দ্র রায় ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা ভদ্রলোক ছিলেন। প্রফেসর তিতাশ চৌধুরীর ভাষায়, “পরিবারে ঐতিহ্যগতভাবেই একটা শিক্ষার অনুক‚ল পরিবেশ বহমান ছিল। এমন একটি পরিবেশ ও মানসিকতার যেখানে পরিচর্যা ও চাষ হত- সেখানে ভিক্টোরিয়া কলেজের মতো একটি বিদ্যাপীঠের জন্ম কোন অস্বাভাবিক ঘটনা ছিল না। বরং এটি ছিল আনন্দচন্দ্র রায়দের ঐতিহ্যগত মানসিক চিন্তা-চেতনা এবং বিশ্বাস ও উপলব্ধির স্বাভাবিক বিকাশ।”
কলেজের উন্নয়নে ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা ও অন্যান্যদের অবদান: ভিক্টোরিয়া কলেজের ন্যায় বাংলাদেশের প্রাচীন বিদ্যাপীঠের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠার মূলে রয়েছে তৎকালীন জমিদার শ্রেণির শিক্ষানুরাগ, বিদ্যোৎসাহিতা ও আর্থিক আনুকূল্য। ১৮৯৯ সালে ভিক্টোরিয়া কলেজ কয়েকটি টালির ঘর নিয়ে শুরু হয়েছিল। পরে অনেকের অর্থানুক‚ল্যে বর্তমান উচ্চ মাধ্যমিক শাখার অধ্যক্ষের চেম্বার, আপিস কক্ষ, লাইব্রেরি ও অধ্যাপক মিলনায়তনটি নির্মিত হয়। শোনা যায়, এই কলেজটি ব্যারিস্টার এ. রসুল, নবাব হোচ্চাম হায়দার চৌধুরী, নবাব ফয়জুন্নেসা প্রমুখ ব্যক্তিত্বের আর্থিক আনুক‚ল্য লাভ করেছিল।
১৯০৪ সালে একটি‘ট্রাস্ট চুক্তি’র মাধ্যমেই স্কুল ও কলেজটিকে পৃথক করা সম্ভব হয়েছিল। মনে করা হয় যে, কলেজের জমি বরাদ্ধ ও আর্থিক সংকটই কাটিয়ে উঠার জন্য শ্রীআনন্দচন্দ্র রায় ১৯০৪ সালে একটি ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। পার্বত্য ত্রিপুরার রাজা ও চাকলা-রোসনাবাদের জমিদার, পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের ত্রিপুরা জেলার ম্যাজিস্ট্রেট এবং প্রতিষ্ঠাতা রায় বাহাদুর আনন্দচন্দ্র রায় এই তিনজনকে নিয়ে ট্রাস্ট গঠিত হয়েছিল।
১৯০৮ সালে ২৪শে মার্চ, শ্রীআনন্দচন্দ্র রায় তৎকালীন পার্বত্য ত্রিপুরার রাজা রাধাকিশোর দেববর্মণ মাণিক্য ও পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের ত্রিপুরা জেলার ম্যাজিস্ট্রেট এ.এইচ. ক্লেটন সাহেবের সঙ্গে আরেকটি ‘ট্রাস্ট চুক্তি’-তে স্বাক্ষর করেন। এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কলেজের সার্বিক উন্নতি বিধান। কারণ-এই ‘ট্রাস্ট চুক্তি’র আরোপিত শর্ত অনুসারেপার্বত্য ত্রিপুরার রাজা রাজা কলেজ, বোর্ডিং হাউস এবং অধ্যক্ষের বাসভবনের উদ্দেশ্যে ট্রাস্টিগণকে বিনামূল্যে জমি উপহার দিবেন। কলেজের জন্য পাকা ভবন নির্মাণের খরচ বাবদ ৫০০০ রুপি প্রদান করবেন। রাজা প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ ক্রয়ের জন্য ৫০০০রুপি এবং বার্ষিক ৫০০রুপি স্থায়ী অনুদান কলেজকে প্রদান করবেন। চুক্তি অনুসারে প্রতিষ্ঠাতা আনন্দ চন্দ্র রায় তাঁর জীবনের সময়কালে কলেজকে বার্ষিক ৩০০ রুপি অনুদান প্রদান করবেন। এছাড়া কলেজসমূহের গ্র্যান্ট ইন এইড হিসেবে ভিক্টোরিয়া কলেজ পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের সরকার থেকে স্পেশাল গ্র্যান্ট হিসেবে এককালীন ২৮০০০ টাকা এবং রিকুরিং গ্র্যান্ট হিসেবে প্রতি বছর ২৫০০ টাকা করে পাবে বলেও সাব্যস্ত হয়।
পরিচালনা পর্ষদ :কলেজ পরিচালনার জন্যএকটি পরিচালনা পর্ষদ ছিল।পরিচালনা পর্ষদ ত্রিপুরা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, কলেজ অধ্যক্ষ ও কলেজ প্রতিষ্ঠাতা শ্রীআনন্দচন্দ্র রায়ের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল। শ্রীআনন্দচন্দ্র রায় ছিলেন এই পরিচালনা পর্ষদের প্রথম সম্পাদক। ১৯০৪ সালের ট্রাস্ট চুক্তিতে মুখ্যত শ্রীআনন্দচন্দ্র রায়কে কলেজ গভর্নিং বডির আজীবন সম্পাদক রাখার সপক্ষে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এরপর বোধ হয় কলেজ পরিচালনার জন্য একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত হয়েছিল। এর সদস্য ছিলেন আই. এ. খান এস্কোয়ার, পি.এ.এস, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, সভাপতি খ. মিস্টার প্রবোধচন্দ্র রায়। গ. মৌলবী হাসান ইমাম। ঘ, মিস্টার অতীন্দ্রমোহন রায় ঙ. প্রফেসর আবদুল জব্বার এম.এ. চ, প্রফেসর এস. এ. ভূঞা এম.এ.। ছ, অধ্যক্ষ এইচ.সি চক্রবর্তী এম.এ. সেক্রেটারি প্রমুখ। এই উপদেষ্টা পরিষদ আখতার হামিদ খান পর্যন্ত কার্যকর ছিল।
সহশিক্ষা: ভিক্টোরিয়া কলেজে জন্মলগ্ন থেকে সহশিক্ষা ব্যবস্থা চালু ছিল না। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে প্রথম সহশিক্ষা ব্যবস্থা চালু হয়। ভিক্টোরিয়া কলেজে সহশিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তনের ইতিহাস বেশ চমকপ্রদ ও কৌতূহলোদ্দীপক বর্ণনা ১৩৩৮ সালে প্রকাশিত ভিক্টোরিয়া কলেজ ক্রনিক্যাল থেকে জানা যায়, “স্থানীয় কোনও বিশিষ্ট সভ্রান্ত পরিবারের জনৈকা সন্তানবতী মা পড়িতে ইচ্ছা করেন। তিনি তৎপূর্বেই কাশী হিন্দু বিদ্যাপীঠ ও ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট বোর্ডে পড়িয়াছেন। নানা কারণে সেই সময়ে তাহার কুমিল্লা ছাড়িয়া অন্যত্র যাওয়া অসম্ভব হয়ে। পড়ায় তিনি আমাদের কলেজে (অর্থাৎ ভিক্টোরিয়া কলেজে ছেলেদের সঙ্গে একত্রে) পড়িবার জন্য ভর্তি হইতে চাহেন। নানা প্রতিক‚ল অবস্থার মধ্য দিয়া তাহার এই অভিনব (?) প্রার্থনা মঞ্জুর হয়-আমাদের বর্তমান অধ্যক্ষ (তখন সহ অধ্যক্ষ) শ্রীযুক্ত রাধাগোবিন্দ নাথ মহোদয়ের বিশেষ চেষ্টায় কলেজ পরিচালক সমিতির সভাপতি তখনকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিস্টার রবার্টস এই কলেজে সহ শিক্ষার ব্যবস্থা করিয়া দেন। ইংরেজি ১৯২৯ সনেঐ মহিলা তৃতীয় বার্ষিক শ্রেণিতে (অর্থাৎ প্রথম বর্ষ স্নাতক) ছেলেদের সঙ্গে যথারীতি এক বৎসর আমাদের কলেজে পড়িয়াছেন। … ঐ বর্ষীয়সী মহিলার সাধু দৃষ্টান্তে অনুপ্রাণিত হইয়াই এই বৎসর (অর্থাৎ ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দ) আইএ প্রথম শ্রেণিতে ৪টি মেয়ে ভর্তি হইয়াছে।” তখন থেকেই ভিক্টোরিয়া কলেজে সহশিক্ষা ব্যবস্থা চালু হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও সময় কলেজ স্থানান্তর: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪১-৪৩ সালে ভিক্টোরিয়া কলেজ সামরিক বাহিনীর একটি ছাউনীতে পরিণত হয়েছিল। ১৪শ বাহিনীর সেনা-নায়ক লর্ড ওয়েডেল এই ছাউনীতে অবস্থান পূর্বক দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রণাঙ্গন পরিচালনা করেন। ফলে ভিক্টোরিয়া কলেজ দুটি ইউনিটে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল সত্য। কিন্তু এর একটি চাঁদপুরে স্থানান্তরিত হয়েছিল, অন্যটি কুমিল্লার কালিয়াজুরী আইনুদ্দীন শাহর দরগাহ সংলগ্ন পুকুরের দক্ষিণ পাড়ে সরে গিয়েছিল। ভিক্টোরিয়া কলেজের শাখাটিই অবশেষে চাঁদপুর কলেজে রূপান্তরিত হয়।
কলেজের নাম পরিবর্তনের উদ্যোগ: ‘ভিক্টোরিয়া’ নামের সাথে ব্রিটিশ উপনিবেশিক নাম জড়িত থাকায় পাকিস্তান সৃষ্টির পর পরই এই কলেজের নাম পরিবর্তনের কথা ওঠে। কেননা ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ম্যাগাজিনের সম্পাদক ও ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক জনাব নায়েব আলী চৌধুরীর বার্ষিক রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে যে, কলেজের নাম পরিবর্তন করা নিয়ে যে বিতÐার সৃষ্টি হয়েছে-তা এড়ানোর একমাত্র পথ ‘ভিক্টোরিয়া’ শব্দটি উঠিয়ে দিয়ে শুধু ‘কুমিল্লা কলেজ’ নামকরণ করা। ‘ভিক্টোরিয়া শব্দটি উঠিয়ে দেবার আন্দোলন বোধ হয় অধ্যক্ষ আখতার হামিদ খান পর্যন্ত এগিয়েছিল। কারণ ১৯৪৮ সালের পর কলেজের সাহিত্য পত্রের নামকরণও হয়েছে ‘কুমিল্লা কলেজ ম্যাগাজিন বা সাহিত্যপত্র’। তবে ‘ভিক্টোরিয়া’ শব্দটির পরিবর্তনের আবেগ আগাতে পারেনি।
ভিক্টোরিয়া কলেজের ডিগ্রি শাখা ধর্মপুর এলাকায় স্থানান্তর ও সরকারিকরণ: ১৯৬২ সালে কলেজের ডিগ্রি শাখা ধর্মপুর এলাকায় স্থানান্তরিত হয়। মূলত তৎকালীন অধ্যক্ষ শফিকুর রহমানের প্রচেষ্টার ফলেই ডিগ্রি শাখার ২২ একর জমির দখলিকরণসহ নতুন কলেজ ভবন নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়েছিল। এটি ১৯৬২ সালে তৎকালীন প্রাদেশিক শিক্ষামন্ত্রী জনাব মফিজউদ্দিন আহমদ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে, এ-কলেজের নির্মাণকার্য শুরু হয় ১৯৬০ সাল থেকেই। এর জন্য সরকার থেকে মঞ্জুরি হিসেবেও এ-কলেজ ১২ লক্ষ টাকা পায়।
১৯৬৮ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ সরকারি কলেজে রূপান্তরিত হয়। তখন এর নাম হয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ। ১৯৬৮ সালের পয়লা মে’তে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক গভর্ণর জনাব আবদুল মোনায়েম খান এবং কলেজ গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান আবদুস সালাম সি.এস.পি (জেলা প্রশাসক) ও অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে এক চুক্তির ফলে এই কলেজকে সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ১৯৬৮ সালে এই কলেজটি সরকারিকরণের ফলে দুটো উপাধ্যক্ষের পদের বিলুপ্তি ঘটেছিল।
কলেজের একাডেমিক বিবর্তন: কলেজ জন্মলগ্ন থেকেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাফিলিয়েটেড কলেজের সারিতে দাঁড়াতে সমর্থ হয়েছিল। এই সময়েই এ কলেজে এফএ স্ট্যান্ডার্ড (ফার্স্ট আর্ট প্রথম বর্ষ) চালু হয়। এর পাঠ্য বিষয় ছিল: ইংরেজি, সংস্কৃত, গণিত, বিজ্ঞান, রসায়ন, ইতিহাস ও তর্কবিজ্ঞান। এর কিছু কাল পর আইএ স্ট্যান্ডার্ড চালু হয়। ১৯০৪ সালের পূর্বে এ-কলেজে অন্য কোনো বিভাগ বা স্নাতক শ্রেণি চালু করা সম্ভব ছিল না। ১৯১৮ সালের দিকেই কেবল কলেজের নতুন ভবনটি নির্মিত হয় এবং ঐ বছরেই স্নাতক শ্রেণি খোলার জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অনুমতি প্রদান করে। ১৯২৪ সালে আইএসসি স্ট্যান্ডার্ডের এফিলিয়েশন পায়। কলেজে বিশ শতকের মাঝামাঝি (১৯২৫) সময় থেকে শুরু করে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ইংরেজি, গণিত, সংস্কৃত, রাজনীতিক অর্থনীতি ও আরবি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু ছিল। ১৯৪২ সালে এ-কলেজে বিএসসি কোর্স খোলা হয়।১৯৪৭-৪৮ সাল থেকেই এ-কলেজে আই.কম কোর্স চালু ছিল।এবং ১৯৫৬-৫৭ সালের দিকে বি.কম কোর্স চালু হয়। ১৯৫৮-৫৯ সালের দিকে এ-কলেজে নাইট শিফট শুরু হয় এবং ১৯৬৮ সালের পয়লা মে নাগাদ তা চালু ছিল।
১৯৬২-৬৩ সালে ভিক্টোরিয়া কলেজ উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রি শাখায় বিভক্ত হয়ে যায়। একই প্রাশাসনিক দায়িত্বে ডিগ্রি শাখা খোলা হয়- মূল কলেজ ভবন থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে ধর্মপুর এলাকায়। ডিগ্রি শাখা আবার চার ভাগে বিভক্ত। কলা, সমাজবিজ্ঞান, বাণিজ্য ও বিজ্ঞান অনুষদ।
১৯৬৩-৬৪ সালের দিকে এই কলেজে বাংলা ও অর্থনীতি বিষয়ে অনার্স কোর্স খোলা হয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফিলিয়েশন পায়। ১৯৬৪ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মলগ্ন থেকেই চট্টগ্রাম বিভাগের সমস্ত কলেজ এর অধীনে চলে যায়। ১৯৭১-৭২ সালের দিকে হিসাববিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, রাজনীতি বিজ্ঞান, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন প্রভৃতি বিষয়ে অনার্স খোলার জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৭৩-৭৪ সালের দিকে এই কলেজে বাংলা ও অর্থনীতিতে প্রথম পর্ব এম, এও খোলা হয়েছিল এবং তা প্রায় এক বৎসরের মতো চালু ছিল। সরকারি নীতি পরিবর্তনের ফলেই তা আবার বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৮২ সাল থেকে এই কলেজে আইসিএমএ কোর্স চালু রয়েছে। ১৯৮৪-৮৫ সাল থেকে প্রথম পর্ব এম.এ (অর্থনীতি), এম. এস. সি. (রসায়ন) ও এম. কম. ( হিসাববিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা) খোলা হয়েছিল। ১৯৯২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠিত হলে ভিক্টোরিয়া কলেজ এর অধীনে চলে যায়। ১৯৯৬ সালে এই কলেজে আরো ৯টি বিষয়ে অনার্স খোলা হয়। বর্তমানে ২০টি বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্র্স পর্যায়ে পাঠদান করা হয়। বিষয়গুলো হচ্ছে বাংলা, ইংরেজি, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, ইতিহাস, দর্শন, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজকল্যাণ, সমাজবিজ্ঞান, পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা, প্রাণিবিদ্যা, গণিত, হিসাববিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, পরিসংখ্যান, ফিনান্স, মার্কেটিং ও ইসলামী শিক্ষা।
ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষগণ:ভিক্টোরিয়া কলেজের ঐতিহ্য বহু-ছাত্র-শিক্ষক স্থপতি ও অন্যান্য কিছু মানুষের ত্যাগ, তিতিক্ষা ও সাধনার ফসল। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষের অধিকাংশই ছিলেন অগাধ পাÐিত্যের অধিকারী, উৎসর্গীকৃত, নম্র, সত্যিকারে এক দুর্দান্ত মানুষ ও প্রশাসনিক দক্ষতা সম্পন্ন ব্যক্তি ও ব্যক্তিত্ব। ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষদের তালিকায় একজন ডি.লিট অর্জনকারী ও ছয়জন ডক্টরেট ডিগ্রিধারী রয়েছেন। ডি.লিট অর্জনকারী হলেন অধ্যক্ষ রাধাগোবিন্দ নাথ, অন্য ছয়জন ডক্টরেট ডিগ্রিধারী হলেন যথাক্রমে প্রফেসর আলী আহমদ, প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম, প্রফেসর আজিজুর রহমান, প্রফেসর আবদুল কাদের, প্রফেসর আবদুল মতিনও প্রফেসর আবুল কালাম মো. আছাদুজ্জামান।
অধ্যক্ষ সত্যেন্দ্রনাথ বসু (১৮৬৭-১৯৩১) ছিলেন মূলত কলেজ স্থপতি। তিনি ২৪শে সেপ্টেম্বর, ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে এই কলেজে প্রথম অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। সুদীর্ঘ বত্রিশ বৎসর তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে কলেজটি মাথা উঁচু করে দাড়াতে সমর্থ হয়েছিল। অধ্যক্ষ সত্যেন্দ্রনাথ বসু ছিলেন ভিক্টোরিয়া হাই স্কুলের (বর্তমানে ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট ইস্কুল) প্রধান শিক্ষক। প্রতিষ্ঠানটিকে কলেজে উন্নীত করা হলে তিনি কলেজের অধ্যক্ষ দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তিনি আমৃত্যু এই কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। অধ্যক্ষ সত্যেন্দ্রনাথ বসু ইংরেজি পড়াতেন, এবং তা খুব ভালই পড়াতেন।
সত্যেন্দ্রনাথ বসুর পরেই বৈষ্ণব সাহিত্যের গবেষক-পন্ডিত শ্রীরাধাগোবিন্দ নাথ ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষের পদ অলঙ্কৃত করেন। তিনি বৈষ্ণব ধর্ম-দর্শন সম্পর্কে প্রায় চার হাজার পষ্ঠা সংবলিত পাঁচখন্ড পুস্তক রচনা করেন। তিনি ছিলেন একজন বিরল পÐিত, গবেষক ও তার্কিক। পাঁচ খন্ড সমাপ্ত গৌড়ীয় ধর্ম-দর্শন তাকে খ্যাতির শীর্ষে নিয়ে যায় এবং তিনি তৎকালীন সারা ভারতবর্ষের বৈষ্ণব ধর্মবেত্তাদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। এই সৃষ্টি-কর্মের জন্য অধ্যক্ষ রাধাগোবিন্দ নাথ ডি.লিট, পরবিদ্যাচার্য, বিদ্যাবাচস্পতি, ভাগবতভূষণ, ভক্তি সিদ্ধান্তরতœ, ভক্তিভূষণ, ভক্তি সিদ্ধান্ত ভাস্কর প্রভৃতি উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। তৎকালীন প্রকাশিত পত্রিকা হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ড, দৈনিক বসুমতি, অমৃতবাজার পত্রিকা, যুগান্তর প্রভৃতি অধ্যক্ষ রাধাগোবিন্দ নাথের কর্মের স্বীকৃতি দিয়েছিল।আর.জি. নাথ হিসেবে পরিচিত গণিতের অধ্যাপক শ্রীরাধাগোবিন্দ নাথ ক্লাশে জ্যামিতি ও পরিসংখ্যান পড়াতেন। তাঁর বিষয়ে তিনি ছিলেন একজন বিশেষজ্ঞ। সে কারণে ছাত্ররা একদিকে যেমন তাকে বিশেষ শ্রদ্ধা করতেন।
অধ্যক্ষ ক্ষিতিমোহন দাসও অত্যন্ত বাক্পটু ছিলেন। তিনি অধ্যক্ষের দায়িত্ব ছাড়াও ইতিহাস পড়াতেন। ভারতবর্ষের ইতিহাস হিন্দু যুগের উপর তাঁর ছিল অসাধারন দক্ষতা ছিল। তিনি অসাধারণ চরিত্রের অধিকারী ছিলেন।
ইংরেজির শিক্ষক হরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীও ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন ও দক্ষ অধ্যক্ষ ছিলেন। শিক্ষক হিসেবেও তিনি অতুলনীয় ছিলেন। অধ্যক্ষ শশীকুমার ঘোষও একজন অসাধারণ ডাকসাইটে ইংরেজির শিক্ষক ছিলেন।
ড আখতার হামিদ খান:
অধ্যক্ষ আখতার হামিদ খান (১৯১৪-১৯৯৯)ভিক্টোরিয়া কলেজে স্বর্ণযুগের সূচনা করেছিলেন। তিনি ভারতের আগ্রায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩৪ সালে তিনি আগ্রা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। এর পর তিনি ভারতীয় সিভিল সার্ভিসে (আইসিএস) যোগ দেন। আইসিএস-এর শিক্ষানবিশ হিসেবে তিনি ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্য এবং ইতিহাস অধ্যয়ন করেন।১৯৫০ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ-এ অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এই কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রায় ৫২ বৎসর পর জনাব আখতার হামিদ খানই প্রথম মুসলিম অধ্যক্ষ যিনি এই পদ অলঙ্কৃত করেছিলেন। তাঁর যোগদানের পূর্ব পর্যন্ত চাকুরি-জ্যেষ্ঠতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতেই এ-কলেজে অধ্যাপকগণ অধ্যক্ষ হবার ট্র্যাডিশন ছিল। তিনি তাও ভাঙ্গলেন। তিনি এ কলেজে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত চাকুরি করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পল্লী উন্নয়নের উপর বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এই প্রশিক্ষণ বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে ১৯৫৯ সালে তিনি কুমিল্লায় বার্ড প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর প্রথম পরিচালক নিযুক্ত হন। পরিচালক হিসেবে তিনি ১৯৭১ সাল পর্যন্ত কাজ করেন।পল্লী উন্নয়নে তাঁর অগ্রণী ভূমিকার জন্য তাঁকে সিতারা-ই-পাকিস্তান (১৯৬১) প্রদান করা হয়।১৯৬৩ সালে ড. আখতার হামিদ খান তাঁর মডেলের জন্য এশিয়ার নোবেল পুরস্কার খ্যাত ‘র্যামন ম্যাগসেসাই পুরস্কার’ পান।মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৬৪ সালে তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লজ’তে ভূষিত করে।বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তিনি পাকিস্তানে চলে যান এবং প্রথমে লায়ালপুরস্থ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ও পরে করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন ফেলো হিসেবে ১৯৭২-১৯৭৩ সাল পর্যন্ত কাজ করেন। ১৯৭৩-৭৯ সালে তিনি মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭৮-৭৯ সালে তিনি বগুড়ায় পল্লী উন্নয়ন একাডেমীর উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সুইডেনের লুন বিশ্ববিদ্যালয়ের উড্র উইলসন স্কুল, প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়েও ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে কাজ করেন।ইংরেজি, বাংলা, আরবি, ফারসি, উর্দু ও হিন্দি ভাষায় দক্ষ আখতার হামিদ খান বহু নিবন্ধ, প্রতিবেদন ও গ্রন্থ রচনা করেছেন। বার্ড তাঁর লেখাগুলিকে তিনটি খন্ড ডে ওয়ার্কস অব আখতার হামিদ খান (১৯৮২) শিরোনামে প্রকাশ করেছে।
অধ্যক্ষ আখতার হামিদ খান সময়ে কলেজে ছাত্র সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল। সেই অনুপাতে শিক্ষক সংখ্যাও বেড়েছিল। সেকারণে তিনি কলেজে দুইটি উপাধ্যক্ষের পদের সৃষ্টি করেন। একটি পদ তিনি বিজ্ঞানের শিক্ষক দিয়ে পূরণ করেছিলেন, অন্যটি কলা বিষয়ক শিক্ষক।তিনি কলেজে পারসোন্যাল সুপারভিশন ক্লাসেরও প্রবর্তন করেন। স্বভাবত কলেজে তখন সকাল-সন্ধ্যা ক্লাস চলত। তাই অধ্যাপকগণের যাতায়াতের অসুবিধের কথা ভেবে তিনি সহজ কিস্তিতে তাদরকে লন্ডন থেকে সরাসরি আমদানিকৃত বিলেতি বাইসাইকেল সরবরাহ করেছিলেন। অধ্যক্ষ আখতার হামিদ খানের কলেজ পরিচালনার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ছিল।
কুমিল্লা অবস্থানকালে গ্রামের উন্নয়ন সম্পর্কে তাঁর গভীর আগ্রহ জাগে। ১৯৫৫-৫৬ সালের অধ্যক্ষ আখতার হামিদ খান প্রলয়ঙ্করী বন্যার সময় নিজে ছাত্র-শিক্ষকদের সংগঠিত করে স্বয়ং গ্রামবাসীদের রিলিফের কাজে অংশগ্রহণ করেন। তিনি অতি অল্প সময়ের মধ্যেই কুমিল্লায়। একজন শ্রদ্ধার পাত্র হিসাবে সুনাম অর্জন করেছিলেন।এদেশের পল্লী উন্নয়নে অবদানের জন্য তিনি স্মরণীয় হয়েছেন এবং থাকবেন। অধ্যক্ষ আখতার হামিদ খান সম্পর্কে বিশদভাবে লেখার দাবি রাখে।অধ্যক্ষ আখতার হামিদ খান সম্পর্কে অধ্যক্ষ তিতাশ চৌধুরী বলেন, “অধ্যক্ষ আখতার হামিদ খানের শুধু ব্যক্তিত্বই নয়, উইট, হিউমর ও স্যাটায়ারও ছিল ভিন্ন জাতের। আখতার হামিদ খান ছিলেন মূলত একজন সৎ, নিষ্ঠাবান, কর্মযোগী, মহৎ, উদারনীতিক ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রাজ্ঞ মনীষী। তাকে এবং তাঁর কর্মকে চিন্তা, ও প্রতিভাকে বাক্যে প্রকাশ অসম্ভব। তিনি ছিলেন তুলনারহিত এক ব্যক্তিত্ব। বরঞ্চ বলা চলে তাঁর তুলনা তিনি নিজে। তিনি কালে প্রবাদ পুরুষে পরিণত হয়েছেন।”
অধ্যক্ষ শ্রীমনীন্দ্রমোহন দেব গণিতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছিলেন। তৎকালীন বি.সি.এস, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায়ও তিনি প্রথম হয়েছিলেন। গর্বের কথা, তিনি ছিলেন ‘ঈশান স্কলার’। তখন খুব কম মানুষের ভাগ্যেই এ-সম্মান জুটেছে। এ নিয়ে একটি চমৎকার গল্পও প্রচলিত আছে।
গল্পটি এই রকম: মনীন্দ্রমোহন দেব স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় গণিতে ৯৯৮ নম্বর পেয়েছেন শুনেই তিনি কেন আরো নম্বর বেশি পাবেন না অর্থাৎ ৯৯৯ পাবেন না এই মর্মে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে এক মামলা ঠুকেছিলেন। মামলায় তিনি জয়লাভ করে‘ঈশান স্কলার’ এবং স্বর্ণপদক লাভের গৌরব অর্জন করেছিলেন।
অধ্যক্ষ আলী আহমদ ছিলেন ছিমছাম গোছের লোক-অতিশয় একাডেমিক। তাঁর স্বল্পকালীন সময়ে কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম অনেক শৃঙ্খলাপূর্ণ ছিল। অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম ছিলেন অত্যন্ত স্বাধীনচেতা ব্যক্তিত্ব। অধ্যক্ষ শফিকুর রহমানের উদ্যোগে এই কলেজের ডিগ্রি শাখা ধর্মপুর এলাকায় স্থানান্তরিত হয়। ডিগ্রি কলেজের সামনের সড়ক নির্মাণের কৃতিত্ব অধ্যক্ষ এম. বি. চৌধুরীর। তাঁর প্রচেষ্টাই এটি সম্পন্ন হয়েছিল।অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর আমলে অর্থাৎ ১৯৬৮ সালে এ-কলেজের সরকারিকরণের কাজ সম্পন্ন হয়েছিল। অধ্যক্ষ এ, কে, মোহাম্মদউল্লাহ, আখতারুজ্জামান, মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, প্রফেসর মোহাম্মদ আবদার রশীদ, প্রফেসর ড. মো. আবদুল কাদের, প্রফেসর আমীর আলী চৌধুরী, প্রফেসর ড. আজিজুর রহমান, প্রফেসর আহমেদ ফজলুল কবির, প্রফেসর সুবীরকুমার চক্রবর্তী প্রমুখ স্ব-স্ব ক্ষেত্রে স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল ছিলেন। অধ্যক্ষ প্রফেসর আবদার রশীদও ছিলেন একজন সুবিখ্যাত অনুবাদক ছড়াকার ও কথাশিল্পী।প্রফেসর ড. মো. আবদুর কাদের, প্রফেসর ড. আজিজুর রহমান প্রমুখের আমলে কলেজে অনেক আর্থিক উন্নতির সোপান নির্মিত হয়। অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আজিজুর রহমান অসাধারণ এক মানুষ, গুণী শিল্পী ছিলেন।অধ্যক্ষ প্রফেসর সুবীরকুমার চক্রবর্তী ও অধ্যক্ষ প্রফেসর আমীর আলী চৌধুরী (জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক) উভয়ে ছিলেন সুশিক্ষক। তাঁরা অধ্যক্ষের দায়িত্বের বাইরেও ক্লাস নিতেন।
প্রফেসর মো. ফজলুল করিম মজুমদার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। অধ্যক্ষ প্রফেসর মুহম্মদ আবু তাহের ভূঁইয়া ছিলেন একজন কবি, লেখক ও গবেষক। অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আশরাফুল ইসলাম ছিলেন একজন বিদগ্ধ পন্ডিত। প্রফেসর মেজর মোস্তাক আহমেদ, প্রফেসর মো. রেজাউল করিম ভূইয়া, প্রফেসর ড. মো.আবদুল মতিন, প্রফেসর ড. আবু জাফর সালেহ আহমদ খন্দকার (চলতি দায়িত্বে), প্রফেসর এম এম শফিউদ্দিন, প্রফেসর মো. আবুল কাসেম মিয়া, প্রফেসর ড. আবুল কালাম মো. আছাদুজ্জামান, প্রফেসর মো. আবদুর রশীদ, প্রফেসর মো. আবু তাহের, প্রফেসর রতন কুমার সাহা প্রমুখ স্ব-স্ব ক্ষেত্রে স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল ছিলেন। বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. রুহুল আমিন ভূঁইয়া ২০২০ সালের বৈশ্বিক মহামারীর সময়ে অনলাইনভিত্তিক ক্লাস কার্যক্রমসহ নানবিধ দায়িত্ব দক্ষতার সাথে সম্পাদন করছেন। তিনি কলেজের আর্থিক ব্যবস্থপনায় শৃঙ্খলা আনয়ন করার জন্য নানবিধ ব্যস্থা গ্রহণ করেন।
স্বাধীনতা পূর্ব ও পরবর্তীকালের কতিপয় উপাধ্যক্ষের মধ্যে রাধাগোবিন্দ নাথ, মনীন্দ্রমোহন দেব, পি.কে. রায়, ফজলুল করিম, সেকান্দর আলী ভূঞা, এ. কে. মোহাম্মদ উল্লাহ, এম. ওয়াজেদ আলী, আবদুস শাকুর, সিদ্দিকুর রহমান ভা, রফিকুল ইসলাম, লায়লা নুর, প্রফেসর আমীর আলী চৌধুরী, প্রফেসর সুবীরকুমার চক্রবর্তী, প্রফেস রমুহম্মদ আবুতাহের ভুইয়া, প্রফেসর ফজলুল করিম মজুমদার, প্রফেসর ড. আবু জাফর খান প্রমুখ অন্যতম।
প্রথম অধ্যাপিকা:১৯৪৯ সালের দিকে মেহের কবীর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে স্নাতক পর্যায়ে রসায়ন বিভাগে শিক্ষা দান করেছেন। তিনিই ছিলেন এই কলেজের বিজ্ঞান বিষয়ের প্রথম অধ্যাপিকা। ইংরেজির অধ্যাপিকা লায়লা নুর এইকলেজে ইংরেজি বিষয়ের প্রথম অধ্যাপিকা। অধ্যক্ষ আখতার হামিদ খানের আমলেই এই কলেজে নিয়োগপত্র পেতে সক্ষম হয়েছিলেন।
সুদক্ষ ও নিষ্ঠাবানশিক্ষকবৃন্দ:কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের পুরানো অধ্যক্ষদের প্রায় সবাই শুধু দক্ষ প্রশাসকই ছিলেন না, প্রত্যেকেই সুদক্ষ ও নিষ্ঠাবান শিক্ষকও ছিলেন। প্রফেসর প্রফুল্লকুমার রায় পদার্থবিজ্ঞান পড়াতেন, আর রসায়নবিজ্ঞান পড়াতেন প্রফেসর সুরেন্দ্রনাথ মজুমদার।
ভিক্টোরিয়া কলেজে যারা অধ্যাপনা করতেন তাঁরা ছিলেন আদর্শ মানব জীবনের সাক্ষাৎ চলমান পাঠক্রম। একজন প্রাক্তন ছাত্র সাংবাদিক তাহেরউদ্দিন ঠাকুরের ভাষায়, “ভিক্টোরিয়া কলেজ ছিল ব্যক্তিতের মিলন কেন্দ্র। একদিকে যেমন ছিলেন সাবেক সিভিলিয়ান সাধু ড. আখতার হামিদ খান, অন্যদিকে ছিলেন,আত্মভোলা দার্শনিক বিভুরঞ্জন গুহ। একদিকে যেমন ছিলেন বাঘ গণিতবিদ ঈশান স্কলার বাবু মনীন্দ্রমোহন দেব, অন্যদিকে ছিলেন অঙ্কশাস্ত্রের দিকপাল বাবু তারাপদ দাশ। ছিলেন কবি গুরুর যেই সুধীর বাংলা জানতেন, সেই সুধীর কুমার সেন। (‘সুধীর বাংলা জানে-‘ এই ছিল রবীন্দ্রনাথের সংক্ষিপ্ত সুপারিশ) অধ্যাপক সুধীরচন্দ্র (কুমার নয়) সেন পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেছিলেন। অবশ্য কিছুকাল পরই তিনি আবার স্বগৃহে অর্থাৎ ভিক্টোরিয়া কলেজে প্রত্যাবর্তন করেন। সম্ভবত সেখানে তার মানস গঠন হওয়াতেই ফিরে আসতে হয়।”
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম দিকপাল ডক্টর দীনেশচন্দ্র সেনও এই কলেজের অধ্যাপক ছিলেন।ইংরেজির রমেশচন্দ্র রায় (প্রথম শ্রেণি প্রাপ্ত), অরুণ দাসগুপ্ত, এন. জি. রায়, মোবারক আলী, আসহাবউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ মঈনউদ্দীন হোসেন, লুতফর রহমান, কাজী ইমদাদুল হক, ও হেলাল উদ্দীন আহমদ; বাংলার আলী আহমদ, ড.আলি নওয়াজ, জমীরউদ্দীন আহমদ, মোবাশ্বের আলী, হরলার রায়, বিল্বমঙ্গল ভট্টাচার্য, কাজী নূরুল ইসলাম, বদরুল হাসান, নূরুর রহমান খান, ড. মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, ড. সৈকত আসগর; আরবির আবদুল জব্বার, শামসুল হক, আজিম উদ্দীন; রাজনীতি বিজ্ঞানের ফজলুল করিম, শামসুল আবেদীন, শাহজাহান মজুমদার, শাহজাহান চৌধুরী, আতিউর রহমান, ইতিহাসের নির্মল চৌধুরী, পি. সি. রায়, আবুল খায়ের আহমদ, পি.এ. নাজির, আবদুল মোমেন, কাজী হারুনুল হক, অর্থনীতির হরিহর ধর, বলরাম দাস, আবদুল আজিজ খান; দর্শনের শৈলেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, পরেশচন্দ্র গাঙ্গুলী, সেকান্দর আলী ভূঁঞা, আখতারুল হক;কমার্সের দ্বিজেন্দ্রলাল বসু, ফজলুল করিম পাটোয়ারী, এ. ডবিøউ. মোঃ তোয়াহা, সিদ্দিকর রহমান, মো. শাহাবুদ্দীন, বিনয়রতন বড়ুয়া, নুরুল ইসলাম, মোজাম্মেল হক, ভানুরঞ্জন সাহা, সরদার আবদুর রশীদ, সুজিতকুমার সাহা, আবদুল আউয়াল,অধ্যক্ষ মমিনুল হক চৌধুরী প্রমুখ; পদার্থের প্রফুল্লকুমার রায়, তুষারকান্তি চক্রবর্তী, ক্ষিরোদগোপাল মজুমদার, ড. জ্যোৎস্নাময় দত্ত, ড. জহিরুল ইসলাম ভূঞা, পীযুষকান্তি চট্টোপাধ্যায়, খোরশেদ আলম (এখন রাজনীতিবিদ), মুহম্মদ খোদা রাখা, সেলিমা বেগম, সুবীরকুমার চক্রবর্তী, মুহাম্মদ কফিলউদ্দীন, আবদুস সালাম, মোখলেসুর রহমান, সালাউদ্দিন আহমদ; রসায়নে সুরেন্দ্রকুমার মজুমদার, ডক্টর প্রদোষ রায় চৌধুরী, হাবিবুল ইসলাম, ড. সিদ্দিক উল্লাহ, ড. আবদুর লতীফ ভূঞা, সিরাজুল ইসলাম, গোলাম সোবহান, এ. এন. এম. ওয়াহিদুজ্জামান, ডক্টর ওসমান আলী, ডক্টর ফজলে হোসেন, সুলতান আহমদ, ফজলুর রহমান, আনওয়ার-উল-আজিম সিদ্দিকী, আবদুল হাফিজ প্রমুখ। গণিতের ডক্টর পরেশচন্দ্র চৌধুরী, আবদুল করিম, রজ্জব আলী খান, আলী হোসেন মজুমদার প্রমুখ; প্রাণিবিদ্যার আবদুল ওহাব, জাকির হোসেন ও গাজী আকবর হোসেন। উদ্ভিদবিদ্যার ড. ম. আখতারুজ্জামান, শেখররঞ্জন সাহা, জাহানআরা মুন্সী, রাশিদা তাহির প্রমুখ এ-কলেজের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব ও শিক্ষক ছিলেন।
শিক্ষার্থীদের গৌরবগাঁথা: ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী আবদুল মজিদ কলেজ থেকে ইংরেজি অনার্সে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে স্বর্ণপদক লাভ করেন। ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে এ-কলেজে আই.এ. পরীক্ষায় সত্যরঞ্জন ভট্টাচার্য্য অতি উচ্চ নম্বর পেয়ে সর্বোচ্চ বিভাগীয় বৃত্তি লাভ করেন। আই. এস, সিতে সুরেশচন্দ্র চক্রবর্তী সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলা ভাষায় সর্বোচ্চ স্থান অধিকার করেন। এছাড়া স্নাতক পরীক্ষায় ৫ জন ডিসটিংশন ও ৩ জন অনার্স লাভ করেন। ১৯৩৮ সালে ননীগোপাল সেনশর্মা ইংরেজি অনার্সে তৃতীয় স্থান দখল করেন।
১৯৪৪ সালে এই কলেজের বি.এস.সির প্রথম ব্যাচের ৩০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৬ জনই ডিসটিঙ্কশন নিয়ে এবং একজন সুনীলচন্দ্র দাশগুপ্ত অনার্স পেয়ে পাশ করেছিলেন। ১৯৪৮ সালে মানবিক বিভাগ থেকে চতুর্থ স্থান ছাড়াও বিজ্ঞান বিভাগে (ও. ঝপ.) সাতটি পজিশন পেয়েছিল। বি.এসসি.তে এগার জন এবং বি. এ. তে ২ জন ডিসটিঙ্কশন লাভ করেন এবং একজন অর্থনীতিতে অনার্স। ১৯৫০ সালে সিদ্দিকুর রহমান বাণিজ্য বিভাগ থেকে দশম স্থান অধিকার করেছিলেন।
অধ্যক্ষ আখতার হামিদ খানের আমলে (পঞ্চাশ দশক) একবার মানবিক, বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগের ছাত্ররা সর্বমোট ১০টি পজিশন লাভ করেছিলেন। ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে অধ্যক্ষ আবদার রশীদ-এর আমলে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে প্রথম স্থান (সর্বকালের রেকর্ড ভেঙে)। অধিকার ছাড়াও সর্বমোট ২০টি পজিশন দখল করেছিলেন এ-কলেজের মানবিক, বাণিজ্য ও বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রগণ। আমরা গত কয়েক বছর দেখেছি যে, প্রতি বছর এ কলেজের কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী মেডিকেল কলেজ ও বুয়েটেসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করছে। এ সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করা আবশ্যক।
বাংলাদেশ নামক জাতি রাষ্ট্রের বিনির্মাণে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের যে সকল শিক্ষার্থী অনন্য অবদান রেখেছে তাদের মধ্যে অন্যতম হলো অজিতকুমার গুহ (১৯১৪-১৯৬৯), অদ্বৈত মল্লবর্মণ (১৯১৪-১৯৫১), ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত (১৮৮৬-১৯৭১), ক্যাপ্টেন নরেন্দ্রনাথ দত্ত (১৮৮৪-১৯৪৯), মোতাহের হোসেন চৌধুরী (১৯০৩-১৯৫৬), বোধিপ্রিয় সন্তু লারমা (সন্তু লারমা), হানিফ সংকেত (টিভি উপস্থাপক, ইত্যাদি খ্যাত), এ এম আবদুল মান্নান ভূঁইয়া (সাবেক সদস্য, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন, শিক্ষাকাল: ১৯৫৪-৫৭), বিচারপতি মাহফুজুর রহমান মোনায়েম (বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট ডিভিশন, শিক্ষাকাল: ১৯৫৯), আতিকুর রহমান (সাংবাদিক, শিক্ষাকাল: ১৯৫৪-৬২), সৈয়দ আমিরুল ইসলাম ( বিচারপতি, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট ডিভিশন, শিক্ষাকাল: ১৯৫৬-৬০), দীলিপ বিশ্বাস (চিত্র পরিচালক, শিক্ষাকাল: ১৯৫৬-৫৮), আবেদ হোসেন খান (অবসরপ্রাপ্ত, মূখ্য সংগীত পরিচালক, রেডিও বাংলাদেশ বাণিজ্যিক কার্যক্রম, শিক্ষাকাল: ১৯৪৬-৪৮), বিচারপতি ছিদ্দিক আহমদ চৌধুরী (শিক্ষাকাল: ১৯৪৬-৪৮). বিচারপতি এ.কে.এম. সাদেক (বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, শিক্ষাকাল: ১৯৪৮-৪৯), আ.হ.ম. মোস্তফা কামাল (অর্থমন্ত্রী ও সাংসদ, শিক্ষাকাল: ১৯৬২-৬৪), আবদুল মতিন খসরু (সাবেক আইন মন্ত্রী), আ.ক.ম. বাহাউদ্দিন বাহার (সংসদ সদস্য), মুজিবুল হক মুজিব (সাবেক মন্ত্রী ও সাংসদ, শিক্ষা কাল: ১৯৬৫-৭০), নভেরা আহমদ (ভাস্কর, শিক্ষাকাল: ১৯৪৮-৫০), শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় (কথাশিল্পী), অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল আকবর হোসেন ( প্রাক্তন মন্ত্রী), ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া (প্রাক্তন মন্ত্রী), জনাব মোহাম্মদ নূরুল হুদা (প্রাক্তন প্রতিমন্ত্রী), জনাব মনজুর মোর্শেদ খান (এম.পি, প্রধান মন্ত্রীর প্রাক্তন উপদেষ্টা), জনাব আ.ন.ম ইউসুফ (প্রধান মন্ত্রীর প্রাক্তন মুখ্য সচিব), মাননীয় বিচারপতি মাহফুজুর রহমান, জনাব এম, আখতার আলী (প্রাক্তন শিল্প সচিব), জনাব এ, এইচ, মোফাজ্জল করিম (প্রাক্তন বাণিজ্য সচিব), জনাব এ.এস.এম. শাহজাহান (প্রাক্তন সচিব, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়), জনাব মোবারক হোসেন খান (শিল্পকলা একাডেমীর প্রাক্তন মহাপরিচালক), ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত (প্রাক্তন উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়), আবদুল আজিজ (সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব), আলী ইমাম মজুমদার (সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব), গোলাম রহমান (সাবেক, চেয়ারম্যান, দুদক) প্রমুখ। আরো হাজারো নাম পরিসরের সংক্ষিপ্ততার কারণে উল্লেখ করা সম্ভব হয়নি বলে লেখক দুঃখিত।
ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে কলেজের শিক্ষার্থীদের আত্মত্যাগ ও অংশগ্রহণ: কলেজের শিক্ষার্থীদের আত্মত্যাগের এই ইতিহাস ও ঐতিহ্য আজকের নয়। কেননা অগ্নিযুগে অর্থাৎ ১৯৩৪ সালের ২রা জুলাই তারিখে অসিত ভট্টাচার্য নামে এই কলেজেরই বিজ্ঞান বিভাগের এক বিপ্লবী তরুণ ছাত্র ইটাখোলা অ্যাকশন মামলায় শ্রীহট্ট জেলার ফাঁসি-মঞ্চে অকাতরে প্রাণ বিসর্জন দিয়ে এই ইতিহাসের সূচনা করেছিলেন। ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণ আন্দোলন ও ৭১-এর স্বাধীনতা আন্দোলন কলেজের প্রায় প্রতিটি ছাত্র ও শিক্ষককে প্রচন্ড ভাবে নাড়া দিয়েছে। স্বাধীনতার জন্য অকাতরে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন এ-কলেজের অগণিত ছাত্র।
খেতাবপ্রাপ্ত শহীদ মুক্তিযোদ্ধা: শহীদ খাজা নিজাম উদ্দীন (বীর উত্তম), (স্বাধীনতা যুদ্ধে ৪নং সেক্টরের সিলেট জেলার আট গ্রাম সড়ক বাজার এলাকায় পাক বাহিনীর সাথে সম্মুখ সমরে শহীদ হন), শহীদ আবদুল মমিন (বীর প্রতীক) (স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন ৮ই ডিসেম্বর ইলিয়টগঞ্জ বাজারের নিকটে পাক হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ সমরে শহীদ হন)।
শহীদদের তালিকা: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের স্মৃতিসৌধটি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ২৮ জন কলেজের শিক্ষার্থীর নামে উৎসর্গ করা হয়।
তাঁরা হলেন, ১. এডভোকেট শহীদ যতীন্দ্রকুমার ভদ্র, ২, এডভোকেট শহীদ প্রসন্নকুমার ভৌমিক, ৩. শহীদ লে. কর্নেল মোস্তাক আহমদ, ৪, শহীদ দিলীপ দত্ত, ৫. শহীদ প্রাণগোপাল ভট্টাচার্য, ৬. শহীদ শিশিরচন্দ্র দাস রানা, ৭. শহীদ অসীমশান্তি রায়, ৮. শহীদ অশোককুমার গুহ বেণু, ৯, শহীদ নীহাররঞ্জন সরকার, ১০, শহীদ প্রিয়লাল ঘোষ, ১১. শহীদ কাজলকুমার ভদ্র, ১২. শহীদ এ. কে. এম. শাহনেওয়াজ সরদার, ১৩. শহীদ হুমায়ুন কবীর, ১৪. শহীদ আবদুল মান্নান, ১৫. শহীদ কাজী আবদুল মালেক, ১৬. শহীদ বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী, ১৭. শহীদ মো. শামসুল হক, ১৮. শহীদ এ.কে.এম. মোজাম্মেল হক, ১৯. শহীদ মো. খাজা নিজামউদ্দিন, ২০. শহীদ মো. সাইফুল ইসলাম সাফু, ২১ শহীদ খন্দকার আবু তাহের (আবু), ২২. শহীদ জয়নাল আবেদিন, ২৩. শহীদ মো. সেলিম মিঞা, ২৪. শহীদ মো. সোলায়মান মিঞা, ২৫. শহীদ মো.মোস্তফা কামাল, ২৬, শহীদ পরিমলচন্দ্র দত্ত, ২৭. শহীদ ভুলুপাল ও ২৮. শহীদ সৈয়দ সফিকুর রহমান।
খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত মেজর রফিকুল ইসলাম (বীর উত্তম), (মন্ত্রী, স্বাধীনতা যুদ্ধে ১নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। শিক্ষাকাল: ১৯৫৯-৬১) অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল আকবর হোসেন (বীর প্রতীক), (সাংসদ, প্রাক্তন মন্ত্রী, স্বাধীনতা যুদ্ধে জেড ফোর্সের অধীনে এবং পরবর্তী সময়ে তৃতীয় বেঙ্গল রেজিমেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষাকাল: ১৯৫৭-৬৪)
কলেজের শিক্ষার্থী মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ (স্বাধীনতা যুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্টা মন্ডলীর অন্যতম সদস্য। শিক্ষাকাল: ১৯৩৮-৩৯), অধ্যাপক মো. খোরশেদ আলম, (প্রাক্তন এম, সি, এ, স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন ২নং সেক্টরের সকল ক্যাম্প এর পরিচালক ও সমন্বয়কারী। শিক্ষাকাল: ১৯৪৪-৪৮), কাজী জহিরুল কাইয়ুম (স্বাধীনতা যুদ্ধেভবনগর সরকার গঠনের অন্যতম সংগঠক। শিক্ষাকাল: ১৯৩৮-৩৯।), অলি আহমদ (প্রাক্তন এম,সি,এ, স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সোনামুড়া ক্যাম্প প্রধান। শিক্ষাকাল: ১৯৪৭), মো. আবদুল খালেক (প্রবাসী সরকারের স্বরাষ্ট্র সচিব ও আই. জি. পুলিশ। শিক্ষাকাল: ১৯৪১-৪৩), এডভোকেট আহম্মদ আলী (প্রাক্তন এম.সি.এ, স্বাধীনতা যুদ্ধে পূর্বাঞ্চলীয় যুব ক্যাম্প সমূহের উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান। শিক্ষাকাল: ১৯৫০-৫৪), অধ্যাপক ড. খান সারোয়ার মুরশিদ (প্রাক্তন উপাচার্য ও রাষ্ট্রদূত, স্বাধীনতা যুদ্ধে মুজিবনগর সরকার গঠনের অন্যতম সংগঠক, মুজিব নগর সরকারের পরিকল্পনা বিভাগের সদস্য এবং প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের পরামর্শক। শিক্ষাকাল: ১৯৪২-৪৪), অধ্যাপক আ, ম ম শহীদুল্লাহ (প্রফেসর, গণিত বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
স্বাধীনতা যুদ্ধে ঢাকা পার্শ্ববর্তীস্থ মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সহযোগিতা করার দায়ে পাক হানাদার বাহিনীর কারাগারে নিক্ষিপ্ত হয়ে নির্মম নির্যাতনের শিকার হন। শিক্ষাকাল: ১৯৫২-৫৪), কমান্ডার আবদুর রউফ (ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম অভিযুক্ত। স্বাধীনতা যুদ্ধে ন্যাপ সিপিবি ও ছাত্র ইউনিয়ন যৌথ গেরিলাবাহিনীর কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সদস্য। শিক্ষাকাল: ১৯৫৩-৫৪), আ.ন.ম. ইউসুফ (সাবেক মুখ্য সচিব, স্বাধীনতা যুদ্ধে বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার জেলা প্রশাসক থাকাকালীন মুজিব নগর সরকারের সাথে যোগাযোগ রাখার অপরাধে পাক হানাদার বাহিনীর কারাগারে নির্মম নির্যাতনের শিকার হন। শিক্ষাকাল: ১৯৫২-৫৬)। অধ্যাপক ড. অজয় রায় (পদার্থ বিদ্যা বিজ্ঞান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, স্বাধীনতা। যুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের পরিকল্পনা বিভাগের অস্থায়ী সদস্য, মুজিব নগর শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং মুজিবনগর সরকার গঠনের অন্যতম সংগঠক), আবদুল হাকিম (সাংসদ, স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ), এডভোকেট আফজল খান (স্বাধীনতা যুদ্ধে হাতিমারা যুব ক্যাম্প প্রধান এর দায়িত্ব পালন), অধ্যক্ষ আবদুর রউফ (স্বাধীনতা যুদ্ধে বক্স নগর যুব ক্যাম্প প্রধান এর দায়িত্ব পালন), এ, কে, এম মাইনুল হুদা (স্বাধীনতা যুদ্ধে মুজিববাহিনী কুমিল্লা জেলার ডেপুটি অপারেশন কমান্ডার), অধ্যক্ষ আবুল কালাম মজুমদার (প্রাক্তন সাংসদ, স্বাধীনতা যুদ্ধে মেলাগড় যুব ক্যাম্প প্রধানের দায়িত্ব পালন), মো. মনিরুল হক চৌধুরী (প্রাক্তন সাংসদ, স্বাধীনতা যুদ্ধে মুজিববাহিনী মাউন্টেন ডিভিশান এর ডেপুটি কমান্ডার। শিক্ষাকাল: ১৯৬৩-৬৫, কর্নেল নওয়াজেশ আলী, স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ), মো. আবুল কাশেম (প্রাক্তন মন্ত্রী, স্বাধীনতা যুদ্ধে এফ এফ সদস্য হিসেবে ২নং সেক্টরে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন), অধ্যাপক আলী আশ্রাফ (সাংসদ, স্বাধীনতা যুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কর্মরত ছিলেন। শিক্ষাকাল: ১৯৬২-৬৭), রামেন্দু মজুমদার (স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে সংবাদ পাঠ ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ। শিক্ষাকাল: ১৯৫৭-৫৯), শিবনারায়ণ দাশ (স্বাধীনতা যুদ্ধে মুজিববাহিনীর সদস্য হিসাবে ইস্টার্ন সেক্টর সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ গ্রহণ। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার প্রথম রূপকার। হিসেবে তিনি অনন্য গৌরবের অধিকারী), মো. মুজিবুল হক মুজিব সাংসদ ও হুইপ, স্বাধীনতা যুদ্ধে মুজিববাহিনী চৌদ্দগ্রাম থানা কমান্ডের সদস্য। শিক্ষাকাল: ১৯৬৫-৭০), মো. ওমর ফারুক (স্বাধীনতা যুদ্ধে ন্যাপ, সিপিবি ও বাছাই যৌথ গেরীলা বাহিনীর সদস্য হিসাবে ২নং সেক্টরে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ। শিক্ষাকাল: ১৯৬৫-৭২), দৌলত আহম্মদ (স্বাধীনতা যুদ্ধে মুজিব বাহিনীর একজন সশস্ত্র যোদ্ধা। শিক্ষাকাল: ১৯৬৫-৭১, এডভোকেট আবদুল মতিন খসরু (মন্ত্রী, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সরকার। স্বাধীনতা যুদ্ধে মুজিব বাহিনীর সদস্য হিসাবে ইষ্টার্ন সেক্টরে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ। শিক্ষাকাল: ১৯৬৬-৭০), নাজমুল হাসান পাখী (স্বাধীনতা যুদ্ধে মুজিব বাহিনী ইষ্টার্ন সেক্টরের বুড়িচং ও কসবা থানা কমান্ডার, পরবর্তী সময়ে মাউন্টেন ডিভিশন এর নর্থ কলামের মিলিটারী বিষয়ক প্রধান এর দায়িত্ব পালন। শিক্ষাকাল: ১৯৬৭-৭২), এডভোকেট রুস্তম আলী (স্বাধীনতা যুদ্ধে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মহকুমা মুজিব বাহিনীর কমান্ডার হিসাবে দায়িত্ব পালন। শিক্ষাকাল: ১৯৬৬-৭২), এডভোকেট মো. জহিরুল ইসলাম সেলিম (স্বাধীনতা যুদ্ধে মুজিব বাহিনীর সদস্য হিসাবে ইষ্টার্ণ সেক্টরে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ। শিক্ষাকাল: ১৯৬৮-৭৪), আ, ক, ম বাহাউদ্দিন বাহার (সংসদ সদস্য, স্বাধীনতা যুদ্ধে মুজিব বাহিনীর সদস্য হিসাবে ইষ্টার্ণ সেক্টরে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ। শিক্ষাকাল: ১৯৬৮-৭৩), রফিকুল ইসলাম (দুই নম্বর সেক্টরে মুজিব বাহিনীর সদস্য হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। শিক্ষাকাল: ১৯৬৮-৭২, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রথম প্রবক্তা, ভাষা সৈনিক।)।
ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে কলেজের শিক্ষার্থীদের আত্মত্যাগ ও অংশগ্রহণ নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা হওয়া আবশ্যক। সংক্ষিপ্ত পরিসরে এ কলেজের ইতিহাস তুলে ধরা একটি কঠিন কাজ। সময়ের অভাবে অনেক আঙ্গিকের আলোচনা সংক্ষেপ করা হয়েছে বা বাদ দিতে হয়েছে। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ও এর বিনির্মাণে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অনন্য ভূমিকা রেখেছিল এবং আজ তা অব্যাহত রয়েছে।
তথ্যসূত্র:
তিতাশ চৌধুরী (২০০১), কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ: এ যুগের কিংবদন্তি, ভিনাস প্রকাশনী, কুমিল্লা।
সরসী তীরে (ওল্ড ভিক্টোরিয়ান্সের প্রকাশিত ম্যাগাজিন)
বাংলাপিডিয়া, ‘আখতার হামিদ খান’ ভূক্তি।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, আখতার হামিদ খান ও বার্ড, বণিক বার্তা, ১৫ জুলাই ২০১৪।
University of Calcatta, Minutes of the Syndicate for the Year 1899-1900.