আগস্টে নাশকতার শঙ্কা

মনোয়ার হোসেন রতন।।

২০২৫‑এ কেন সতর্ক থাকা জরুরি

বাংলাদেশের ইতিহাসে আগস্ট কখনোই শুধুই একটি মাস নয়। এটি ষড়যন্ত্র, নাশকতা এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অস্থির সময়ের প্রতীক। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে দীর্ঘদিনের একচ্ছত্র শাসনের পতন হয়েছিল। সেই বিজয়ের এক বছর পূর্ণ হতে চলেছে। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে গেছে—এ অর্জন কি নিরাপদ? নাকি আগস্টের ছায়ায় আবারও অশনি সংকেত ভাসছে?

২০২৪ সালের গণআন্দোলন: ইতিহাসের বিরল অধ্যায়

২০২৪ সালের জুলাই থেকে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলন প্রথমে চাকরি কোটা সংস্কারের দাবিতে সীমিত ছিল। কিন্তু দ্রুতই তা দেশব্যাপী গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয়। নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিবর্ষণ ও সহিংসতা সত্ত্বেও আন্দোলন থামেনি।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা OHCHR এর ১৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখের রিপোর্ট অনুযায়ী:

“At least 1,400 people were killed during July–August protests, with thousands injured or missing.”
(জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে অন্তত ১,৪০০ জন নিহত হয়, হাজারো আহত ও নিখোঁজ ছিলেন।)

৫ আগস্ট এক নজিরবিহীন ঘটনায় সমগ্র মন্ত্রিসভা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় এবং অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম BBC ৬ আগস্ট ২০২৪ তারিখে লিখেছিল—

“A rare and unprecedented collapse of a ruling cabinet, marking a turning point in Bangladesh’s democratic struggle.”
(একটি শাসক মন্ত্রিসভার বিরল ও নজিরবিহীন পতন, যা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের এক ঐতিহাসিক মোড়বদল।)

২০২৫ সালের আগস্ট: নতুন নাশকতার আশঙ্কা

এক বছর পার হলেও প্রাক্তন শাসকগোষ্ঠীর নেটওয়ার্ক, বিদেশি লবিস্ট, বিভ্রান্তিমূলক প্রচারযন্ত্র এবং রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রমূলক শক্তি এখনও সক্রিয়। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ও গোয়েন্দা রিপোর্টগুলোও জানাচ্ছে, দেশের স্থিতিশীলতাকে ভেঙে দেওয়ার নতুন নতুন প্রচেষ্টা চলছে।

 Economic Times ১২ জুলাই ২০২৫ তারিখে লিখেছে—

  • “A pro-Pakistan Lt General is under surveillance for allegedly plotting a coup.”
    (পাকিস্তানপন্থী এক লেফটেন্যান্ট জেনারেল অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে নজরদারিতে রয়েছেন।)
  • Business Today ১৭ জুলাই ২০২৫ তারিখে জানিয়েছে—
  • “Intelligence inputs suggest external forces are backing attempts to destabilise Bangladesh.”
    (গোয়েন্দা তথ্য বলছে, বিদেশি শক্তি বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার প্রচেষ্টায় মদদ দিচ্ছে।)
  • Times of India ২০ জুলাই ২০২৫ তারিখে রিপোর্ট করেছে—
    “New terror threats from Bangladesh prompted BSF to plan floating outposts in Sundarbans.”
    (বাংলাদেশ থেকে নতুন সন্ত্রাসী হুমকির কারণে বিএসএফ সুন্দরবনে ভাসমান আউটপোস্ট তৈরির পরিকল্পনা করছে।)
  • Daily Star ২২ জুলাই ২০২৫ তারিখের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে—
    “Digital disinformation campaigns are being orchestrated to fuel division and erode trust in the interim government.”
    (ডিজিটাল ভুয়া প্রচারণার মাধ্যমে জাতিকে বিভক্ত করা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর আস্থা নষ্ট করার চেষ্টা চলছে।)
  • গণঅর্জনকে দুর্বল করার নকশা

ইতিহাস প্রমাণ করে—পরাজিত শক্তি কখনো বসে থাকে না। তারা বিভ্রান্তিমূলক প্রচার, বিদেশি মদদ ও রাজনৈতিক বিভাজন সৃষ্টির মাধ্যমে আবারও ক্ষমতা পুনর্দখলের চেষ্টা করে।

Bdnews24 ২৪ জুলাই ২০২৫ তারিখের বিশ্লেষণে উল্লেখ করা হয়েছে—

“Some political operatives abroad continue to channel funds and misinformation to destabilise the democratic transition.”
(বিদেশে অবস্থানরত কিছু রাজনৈতিক অপারেটিভ তহবিল ও ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে গণতান্ত্রিক উত্তরণকে অস্থিতিশীল করতে সক্রিয় রয়েছে।)

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, “ফলস ফ্ল্যাগ” সহিংসতা ঘটিয়ে নতুন সরকারকে অকার্যকর প্রমাণ করার পরিকল্পনাও রয়েছে।

গোয়েন্দা সতর্কবার্তা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা

জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ইতিমধ্যেই আগস্টকে ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়িয়েছে। সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং সাইবার সিকিউরিটি সেল নাশকতা প্রতিরোধে প্রস্তুত। সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে বিদেশি হস্তক্ষেপ রোধের চেষ্টা চলছে।

Daily Star ২২ জুলাই ২০২৫ তারিখে লিখেছে—
“Authorities are on high alert for August, with intelligence reports warning of possible false flag incidents.”
(আগস্টকে ঘিরে কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে, গোয়েন্দা রিপোর্ট সম্ভাব্য নাশকতার সতর্কবার্তা দিচ্ছে।)

জনগণের করণীয়

*গুজব ও বিভ্রান্তি থেকে সতর্ক থাকা

*সামাজিক মাধ্যমে তথ্য যাচাইয়ের সংস্কৃতি তৈরি করা

*ছাত্র ও যুবসমাজকে আবারও নেতৃত্বের ভূমিকায় আসা

*প্রতিশোধমূলক রাজনীতি নয়, গণতান্ত্রিক সংলাপের মাধ্যমে স্থিতিশীলতা আনা

*গণমাধ্যমের সত্যনিষ্ঠ ও পেশাদার ভূমিকা নিশ্চিত করা

ইতিহাসের শিক্ষা

আগস্ট মাস বারবার শিখিয়েছে—গণতান্ত্রিক বিজয়কে রক্ষা করা বিপ্লব ঘটানোর চেয়ে কঠিন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছিল শাসনের পতনের দিন; ২০২৫ সালের ৫ আগস্ট হতে পারে গণতন্ত্র রক্ষার দিন, যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ হই এবং ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে পারি।

না হলে ইতিহাস হয়তো আবারও রক্তে লিখবে—”তারা বিজয় পেয়েছিল, কিন্তু তাকে রক্ষা করতে পারেনি”।

inside post
আরো পড়ুন