যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এখন যুবদলের সভাপতি!


প্রতিনিধি।।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার চিওড়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক চিহ্নিত গরু চোর ও মাদক পাচারকারী মানিক মজুমদার এখন একই ওয়ার্ডের জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি। তথ্য-প্রমাণ থাকার পরও মানিককে যুবদলের সভাপতি ঘোষণা ও তাঁর নেতৃত্বে ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসনে বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
অভিযোগে জানা গেছে, চিওড়া ইউনিয়নের নতুন পাড়া গ্রামের মাদু মিয়ার ছেলে ১নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মানিকসহ তিন চোরকে কনকাপৈত ইউনিয়নের শাহাজাহানপুরে ঘোয়ালঘর থেকে চুরি করে নেয়ার সময় গরু বোঝাই ট্রাকসহ ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর আটক করে পুলিশ। দীর্ঘদিন জেল খেটে জামিনে বেরিয়ে আসে গরু চোর মানিক। জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও যুবলীগের ১নং ওয়ার্ড সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সক্রিয়ভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে। আ’লীগের শাসনামলে গরু চুরি, মাদক পাচার, বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলাসহ চোর মানিকের অত্যাচারে চিওড়া বাজার ও আশ-পাশের এলাকার সাধারন মানুষ অতিষ্ঠ ছিল। সে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সাধারণ সম্পাদক কাউছার হানিফের ঘনিষ্ট সহযোগি ছিল। সাবেক রেলমন্ত্রী ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল হককে ফুল দেয়া ও গরু চুরির ঘটনায় মানিকের বিরুদ্ধে মিডিয়ায় ‘ছবি’সহ একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও তার পিতা মাদু মিয়া এক সময় জাতীয় পার্টি করলেও আ’লীগের ক্ষমতাকালিন সময়ে আ’লীগে যোগ দেয়। মুজিবুল হক থেকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ভোগ শেষে যোগ দেয় বিএনপিতে।
বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, গরু চোর মানিক মজুমদার ২০২৪ সালের আগস্টে সরকার পতনের পর যুবদলের নেতাকর্মীদের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে। বর্তমানে সে চিওড়া ইউনিয়ন আ’লীগের চিহ্নিত নেতা রুবেল ও বাবলুর পরামর্শে চলে। রাতে গোপন মিটিং করে আ’লীগের লোকজনের সাথে। এবার মানিককে ১নং ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি করে কমিটি ঘোষণা করে চিওড়া ইউনিয়ন যুবদল। মানিক যুবদলের দায়িত্ব গ্রহণের পর আ’লীগের বাবলু ও রুবেল গং প্রকাশ্যে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এলাকায় সে প্রভাব খাটিয়ে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে বলেও দীর্ঘদিনের অভিযোগ।
বিএনপির নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ অভিযোগ করে বলেন, বিএনপি এখন চৌদ্দগ্রামে জনপ্রিয় দল। এ দলে চোর ও সন্ত্রাসীদের পুনর্বাসনের কোন প্রয়োজন নেই। চিওড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি নয়ন ও সাধারণ সম্পাদক ওয়াসিম কর্তৃক অনুমোদিত চিওড়া ১নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক চোর মানিককে যুবদল থেকে বহিস্কার করে আইনের হাতে তুলে দেয়া উচিত। কারণ, সে আ’লীগের শাসনামলে অনেক সাধারণ মানুষ ও জামায়াত-বিএনপির ক্ষতি করেছে। এতদিন সে যুবদলে ঢুকে আত্মগোপনে ছিল। চিওড়াবাসী অপরাধীমুক্ত বিএনপি ও যুবদলের নেতৃত্ব আশা করছেন।
সোমবার দুপুরে অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে মানিক মজুমদার বলেন, এনআইডি কার্ডে আমার নাম ‘আবদুল মালেক’। বাবার নাম আবদুল খালেক। আমি বুঝ হওয়ার পর থেকেই শহীদ জিয়ার আদর্শে বিশ্বাসী। ভালো কাজের কারণে কতিপয় ব্যক্তি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তাহলে আপনি যুবদলের সভাপতি নন এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে তিনি তাঁর ডাক নাম মানিক বলেও স্বীকার করেন।
চিওড়া ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি নাজমুল হাসান মনির বলেন, ‘সম্মানের সাথে যুবদল করি। কোন ব্যক্তির অপরাধের দায় সংগঠন নিবে না।’
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা যুবদলের আহবায়ক জামাল উদ্দিন মামুন বলেন, ‘মানিক চিওড়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতির দায়িত্বে আছে। আগে যুবলীগ করতো কিনা সে বিষয়ে আমার জানা নেই।’