ডাকাত সন্দেহে দুই যুবককে পিটিয়ে হত্যা, মামলা ছাড়াই দাফন
অফিস রিপোর্টার।।
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার দারোরা ইউনিয়নের পালাসুতা গ্রাম থেকে পালাসুতা গ্রামের ইসমাইল হোসেন (৩০) ও কাজিয়াতল গ্রামের নূরে আলমসহ (৩৫) দুইজনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। উদ্ধার হওয়া লাশ দু’টি কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার সন্ধ্যায় তাদের নিজ নিজ এলাকায় দাফন করা হয়েছে। তবে কোনো মামলা হওয়ার আগেই তাদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এ ঘটনায় মারাত্মক আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন আরেক যুবক।
নিহত নুরে আলমের পরিবারের দাবি, নুরে আলম কুমিল্লা শহরে রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। বৃহস্পতিবার তিনি মুরাদনগর উপজেলার কাজিয়াতল গ্রামের বাড়িতে আসেন। ওই দিন রাতে তিনি তাঁর বন্ধু কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কোটবাড়ী বাঘমারা এলাকার বাসিন্দা সেলিম মিয়ার ছেলে শাহজাহানকে সঙ্গে নিয়ে পাশের পালাসুতা গ্রামের হাশেম মেম্বারের বাড়িতে তার শ্বশুরালয়ে যান।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কয়েক দিন ধরে মুরাদনগর উপজেলার পালাসুতা, লক্ষ্মীপুর, বোরারচর, নেয়ামতকান্দি, মেলামচর ও কাজিয়াতল গ্রামে চুরি–- ডাকাতি বেড়ে গেছে বলে আলোচনা ছিলো। এ নিয়ে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ ছিলেন। এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাতে পালাসুতা গ্রামের মসজিদের পাশে মাহফিল হচ্ছিল। হঠাৎ খবর আসে গ্রামে ডাকাত ঢুকেছে। তখন মসজিদের ও মাহফিলের মাইক থেকে ঘোষণা দেওয়া হয় গ্রামে ডাকাত ঢুকেছে। লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান করেন। এ সময়ে পালাসুতা গ্রামের জামাই ও একই গ্রামের বাসিন্দা ইসমাঈলসহ তিনজন যুবককে গ্রামের কয়েকজন আটক করে পিটুনি দেন। এতে ঘটনাস্থলেই শ্বশুর বাড়ির জামাতা নুরে আলম ও চাচাত শ্যালক ইসমাঈলসহ দুইজন মারা যান।
শনিবার সন্ধ্যায় কাজিয়াতল গ্রামের নিহত নুরে আলমের বাবা আবদুস ছালাম বলেন, আমার ছেলে নুরে আলম আমাদের একই ইউনিয়নের পালাসুতা গ্রামের নায়েব আলীর মেয়ে হালিমা বেগমের সঙ্গে ১৫ বছর আগে বিয়ে হয়। আবু বক্কর নামের ৯ বছরের একটি ছেলেও রয়েছে তাদের। পারিবারিক বিভিন্ন বিষয়ে শ্বশুর পরিবারের সাথে মান অভিমান ছিলো। সে বিরোধ মেটাতে নুরে আলম (আমার ছেলে) তার এক বন্ধুকে নিয়ে শ^শুর বাড়িতে গেলে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাকেসহ তার এক চাচাত শ্যালককে পিটিয়ে হত্যা করে ডাকাত বলে প্রচার করেছে। আমি এ হত্যার বিচার চাই আর এ জন্য আমি অসুস্থ থাকায় আমার স্ত্রী জাহানারা বেগমকে একাধিকবার থানায় পাঠিয়েছি আমার ছেলের হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার জন্য। কিন্তু থানা পুলিশ মামলা নেয়নি, তাই আদালতে মামলা দায়েরর প্রস্তুতি নিচ্ছি।
এবিষয়ে চেষ্টা করে নায়েব আলীর পরিবারের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান বলেন, কি কারণে তাদেরকে গণপিটুনি দেয়া হয়েছে সেটা এখনো স্পষ্ট নয়। আমরা চিকিৎসাধীন একজনের বক্তব্য নিয়েছি। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।