দাউদকান্দির গৌরিপুর বাজারে সরকারি জায়গায় ১০তলা ভবন!
অফিস রিপোর্টার।।
কুমিল্লার দাউদকান্দির গৌরিপুর বাজার সড়ক। কুমিল্লার দাউদকান্দি, হোমনা,তিতাস,মেঘনা, মুরাদনগর এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরসহ বিভিন্ন উপজেলার প্রায় অর্ধকোটি মানুষকে দেশের নানা প্রান্তে যাতায়াত করতে হয় এই সড়ক দিয়ে। কিন্তু সড়কটিতে যানজট লেগেই থাকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয় এখানকার জনসাধারণকে।
সম্প্রতি ওই এলাকায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাজারের পাশের সওজের অনেক জায়গা দখল হয়ে গেছে। জায়গা দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। লিজকৃত জায়গায় স্থায়ী বহুতল ভবন না করার অনুমতি থাকলেও ১০তলা পর্যন্ত ভবন উঠানো হয়েছে। গৌরিপুর তদন্ত কেন্দ্রের পাশে এবং বাজারের আশেপাশে এমন বহু জায়গা দখল করে ভবন তুলেছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। ভবনের গাড়ি রাখার কারণে সড়কে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর কুমিল্লার দাউদকান্দির গৌরিপুর স্টেশনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রমিজ উদ্দিনের যোগসাজশে ওই এলাকায় জায়গা দখল করে ভবন তুলেছে প্রভাবশালীরা। দীর্ঘদিন ধরে ওই স্টেশনে দায়িত্ব পালন করার কারণে সেখানে তাকে হাত করে ওই এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছেন তারা। ভুয়া দলিল করে খাস জায়গা দখল ও লিজকৃত জায়গায় স্থায়ী ভবন তুলেছেন কেউ কেউ। জায়গা দখল করে ভবন নির্মাণ ও মার্কেট করায় ভবিষ্যতে ওই সড়ক সম্প্রসারণ করা কঠিন হয়ে যাবে বলে স্থানীয়রা ধারণা করছেন।
স্থানীয়রা জানান, জায়গা দখল করে ভবন করায় এখানে বাড়তি পরিবহনের চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। মার্কেটগুলোর পাশে পরিবহন জটলা পাকাচ্ছে। পাশাপাশি সড়ক জুড়ে রিকশা, সিএনজি অটোরিকশা, অটোরিকশা ভিড় করছে। লম্বা সময় যানজট থাকায় সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়ছে সাধারণ মানুষজন।
সূত্র জানায়, এই সড়ক হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে উঠতে হয় চার উপজেলার মানুষকে। চিকিৎসা ও অন্যান্য কাজে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা শহরে যাতায়াতের জন্য এই সড়ককে ভায়া রুট হিসেবে ব্যবহার করেন এখানকার মানুষ। কিন্তু দখলদারিত্বের কারণে প্রাণহানিসহ নানা চড়া মূল্য দিতে হয় তাদের।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শুধু জায়গা দখল করে ক্ষ্যান্ত নন দুর্বৃত্তরা। স্থানীয় কিছু সন্ত্রাস বাহিনী দিয়ে পাহারা দেওয়া হয় দখলকৃত জায়গাগুলো। দখলকৃত জায়গার আশেপাশে হেঁটে গেলেও আক্রমণের শিকার হন সাধারণ মানুষরা। গৌরিপুর তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ ও দাউদকান্দির প্রশাসন দুর্বৃত্তদের প্রতি বিরক্ত হলেও সরাসরি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হিমশিম খাচ্ছেন।
তেমনই একজন প্রভাশালী রাকিব উদ্দিন। মেসার্স রাকিব উদ্দিন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী তিনি। গৌরিপুর মডেল তদন্ত কেন্দ্রের সামনে সরকারি লিজকৃত জায়গায় দশতলা ভবন তুলেছেন। সেখানে রয়েছে তার একদল সন্ত্রাসী বাহিনী। যাদের ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পান না। ওই এলাকায় ভূমি দখলসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
এসব বিষয়ে কথা হলে রাকিব উদ্দিন বলেন, আমি পারবিারিক জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণ করেছি। যারা দখলদার, তারা আমাদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার করছে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর গৌরিপুরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রমিজ উদ্দিন বলেন, দখলদারেরা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি জায়গা উচ্ছেদে কাজ করছি, দখল নয়। জাল জমির কোনো কিছু আমি বুঝি না। এগুলো ভুয়া।
দাউদকান্দির নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম খান বলেন, দখলদারিত্বের বিষয়টি সওজ ভালো করে বলতে পারবে। আমি এই বিষয়ে অবগত নই। যদি, সওজ আমাদের সহায়তা চায়, সেক্ষেত্রে উচ্ছেদ অভিযানে সহায়তা করবো। তবে এ এলাকায় তীব্র যানজট লেগেই থাকে। আমরা চেষ্টা করছি। শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করা হবে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী রেজা-ই-রাব্বি বলেন, ২০১৫ সালের ভূমি অধিগ্রহণ আইন অনুযায়ী সওজ চাইলেই যেকোনো অবৈধ স্থাপনা যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে দিতে পারে। সেখানে অনেক জায়গা দখল আছে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের সমন্বয়ে আমাদের অভিযান চলমান থাকবে।
অভিযুক্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী রমিজ উদ্দিনের বিষয়ে তিনি বলেন, তাকে সম্প্রতি কক্সবাজার বদলি করা হয়েছে।
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, দখলদারদের বিরুদ্ধে ও যানজট নিরসনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।