নগর জীবনের ইতিহাস খুঁজে বেড়ানো

অফিস রিপোর্টার।।
কুমিল্লা নগরীর প্রাচীন স্থাপনার একটি বীরচন্দ্র গণ পাঠাগার ও নগর মিলনায়তন। এটির ইতিহাস তিনি খুঁেজ বের করেন তিন বছর সময় লাগিয়ে। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে কুমিল্লার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার এলিসনকে হত্যা করা হয়। সেই বিপ্লবী বীরের পরিচয় তিনি খুঁজে বের করেন। কিংবা ১৭শ’ শতকের প্রথম দিকের বিপ্লবী পুরুষ সমশের গাজীকে তুলে আনেন। কুমিল্লার আরেক মহীয়ষী নারী সুধা সেন। যিনি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরকে চিঠি লিখেছেন।

inside post

তার লেখা ‘জন মন গণ অধিনায়ক হে ভাগ্য বিধাতা’ নিয়ে। তা রাজ তোষণ করে লেখা কিনা জানতে চান। এরকম ৪০০-৫০০ বছরের প্রাচীন ইতিহাসকে তিনি যুক্তির নিরিখে জীবন্ত করে তোলেন। এসব ইতিহাস ঐতিহ্য খুঁজে তা তুলে ধরেন স্থানীয়,জাতীয় সংবাদপত্র ও বিভিন্ন ম্যাগাজিনে। ইতিহাসের নতুন ব্যতিক্রম তথ্য তুলে ধরে এর পাঠকও তিনি সৃষ্টি করেন।

 

ইতিহাস সংগ্রহ করতে গিয়ে তার বাড়িকে লাইব্রেরি বানিয়ে ফেলেছেন। বিভিন্ন বই,ম্যাগাজিন,পত্রিকা,দলিল সংগ্রহ করেছেন সারা দেশসহ ভারতে আগরতলা ও কলকাতা থেকে। শহরের প্রাচীন কোন তথ্যের জন্য অনেকে ছোটেন তার কাছে। বলছি ইতিহাস গবেষক আহসানুল কবীরের কথা। তিনি কুমিল্লার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নামে একটি বই লিখেছেন। প্রায় প্রতি সপ্তাহে কুমিল্লার স্থানীয় দৈনিকে ইতিহাসের নানা বাঁক তিনি তুলে ধরছেন। সামনে কুমিল্লার ডেলনি হাউজ ও কুমিল্লার টাউনহল ইতিহাস নিয়ে বই প্রকাশ করবেন। নগর জীবনের ইতিহাস খুঁজে বেড়ানো তার নেশা।


নগরীর রাজগঞ্জ ইউসুফ হাই স্কুলের পাশে তার বাসা। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, তার আলাদা লাইব্রেরি থাকলেও দুই ড্রয়িং রুম,ডাইনিং রুম ও বেড রুমেও বই ম্যাগাজিনের স্তূপ। সংখ্যা তা ৫হাজার ছাড়াবে। তার বেড রুমেও রয়েছে ডজনখানেক ডায়েরি। সেখানে তিনি বিভিন্ন বই থেকে নোট নেন। কখনও চেয়ারে কখনও খাটে বসে কাজ করেন। চোখ লেগে এলে পাশে বই রেখে ঘুমিয়ে পড়েন। বাইরের আড্ডার সময় তিনি বইয়ের পেছনে দেন।
ব্যক্তি জীবনে কলেজ শিক্ষক আহসানুল কবীর বলেন, রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম। যখন প্রাইমারিতে পড়ি তখন বাবা অ্যাডভোকেট আবদুল মতিনের আলমিরা থেকে নিয়ে প্রথম পড়েছি নীহার রঞ্জন গুপ্তের ছোটদের রাজনীতি। পাঠ্য বই থেকে ইতিহাস জানার বইয়ের প্রতি আমার আগ্রহ বেশি ছিলো। কুমিল্লার ইতিহাস নিয়ে কাজ করা কঠিন। কারণ এখানে লিখিত এভিডেন্সস কম। এখানে ১০০বছরের ইতিহাস পাওয়া যাবে। তবে ২০০-৩০০বছরের আগের লিখিত ইতিহাস পাওয়া যাবে না। ইতিহাস লেখার আনন্দ স্মৃতির বিষয়ে বলেন, কোথাও গেলে মানুষ গল্প নয় আমার নিকট ইতিহাস শুনতে চায়। তারা এজন্য আমাকে নির্ভরযোগ্য মনে করে এটা আনন্দের। লিখতে চাই সমসাময়িক অনেক কিছু। কিন্তু নানা পারিপাশির্^কতায় লিখতে পারি না। এটা অনেক বেদনার।
তিনি আরো বলেন,ইতিহাস নিয়ে এই খোড়াখুড়ি আর লেখালেখি নিয়ে পরিবার প্রথমে আপত্তি করলেও এখন তারা স্বাভাবিক ভাবে নিয়েছেন। তাদের সহযোগিতা পাই বলে কাজ করতে পারছি।

তিনি মনে করেন, লেখালেখি ও ইতিহাস খোঁজা পুরোটাই নেশা থেকে। এরকম কাজে সরকার লেখকদের অনুপ্রেরণা দিতে পারে।
কুমিল্লার সাবেক পুলিশ সুপার ও ইতিহাস লেখক মালিক খসরু বলেন,কুমিল্লায় চাকরিকালে একটা পুরাতন ভবন ভাঙ্গা হয়। সেখানে মাটির নিচে একটা ফলক পাই। ফলকে উল্লেখ ছিলো, বৃটিশ সরকারের সময় কুমিল্লার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার এলিসনকে গুলিতে হত্যা করা হয়। কে হত্যা করেছে তা জানি না। অনেক খোঁজ নিয়েছি।

 

পরে ‘হে অতীত কথা কও’ শিরোনামে একটি লেখা লিখি। সেই লেখায় অজ্ঞাত বিপ্লবী বীরের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। সেই বিপ্লবীকে কয়েক দশক পরে আবিষ্কার করেন স্নেহের আহসানুল কবীর। এছাড়া কুমিল্লার বিখ্যাত ডেলনি হাউজ, নওয়াব হোচ্ছাম হায়দার চৌধুরীর জীবন ও কর্ম, ভিক্টোরিয়া কলেজের ইতিহাস সামনে এনে প্রাণবন্ত করে তোলেন কবীর। তার ইতিহাস খোড়ার এই প্রাণান্তকর চেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই।

 

আরো পড়ুন